ডা. শাহনূর শারমিন মুন্নী
সহযোগী অধ্যাপক,
মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১২:৫৭ পিএম
বৃদ্ধদের ভূবন হোক প্রসারিত
আমার জীবনের অর্ধশতক পূর্ণ করেছি, তাও বছর কয়েক হয়ে যাচ্ছে। ছোটবেলায় পঞ্চাশ বছর বয়সের কারোকে দেখলে এমন ভাবে দেখতাম, যেন কোনো মানুষ নয়, মিশরের পিরামিড দেখছি বা মহেঞ্জোদারোর সভ্যতার নিদর্শন দেখছি!
মনে মনে গালে হাত দিয়ে ভাবতাম! ওরে বাপ! বয়সের দেখি গাছপাথর নেই! ইনারা বাণপ্রস্থে না গিয়ে এখনো সংসারে অবস্থান করছেন, এটা ভেবে দারুণ অবাক হতাম।
কালের আবর্তে নিজে যখন এই বয়সে এসে হাজির, তখন ভীষণ বিস্ময়ের সাথে দেখলাম, নিজেকে অতটা বয়স্ক তো মনে হচ্ছে না! মনে হয়, এইতো সেদিনইতো বেনী দুলিয়ে স্কুলে গিয়েছি, হৈ হৈ করে চি বুড়ি খেলেছি। এখনো তো ছোট কিংবা মাঝারীদের যা যা করতে মন চায়, আমারও তাই করতে ইচ্ছে করে!
বুড়ো হওয়ার গন্ডির ভেতর ঢুকতে গিয়ে দেখি, মানুষ বুড়োদের জন্য কঠিন গন্ডির ব্যবস্থা করে রেখেছে। বুড়ো হয়ে যাওয়া এই সমাজে একটা লজ্জা বা মন খারাপের বিষয়। বুড়ো বলে এখানে মানুষকে আঘাত করা হয়, অপমান করা হয়। অথচ বুড়ো হওয়া গর্বের বা সম্মানের ব্যাপার হতে পারতো। কেন তা হয় না, কে জানে!
ঠিক কি কারণে বয়স্কদের রঙিন পোশাক পরতে নেই, জোর গলায় হাসতে নেই, মন খুলে গাইতে নেই, বৃষ্টি এলে ভিজতে নেই, প্রেমপ্রেম চোখে তাকাতে নেই, হাত ধরাধরি করে জোছনায় গা ভেজাতে নেই, ঠোঁটে লাল রঙ মাখতে নেই? কেন এতো এতো করতে নেই, কে জানে!
কেন বুড়ো হলে সাদাতে আশ্রয় নিতে হয়, ঠোঁট চিপে থাকতে হয়, ঘরে বসে ধর্মপুস্তক পড়তে হয়, শুধুই নাতিনাতনি পালতে হয়, তাইবা কে জানে! আমাদের সমাজে কারা এই নিয়ম তৈরি করে, যে বুড়ো হলেই মনে আগল দিতেই হবে!
এমনিতেই, বুড়োকাল বেশ কষ্টের। শরীর, মন ক্ষণে ক্ষণে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। আপনজনেরা দূরে চলে যেতে থাকে। কাছাকাছি বয়সের মানুষেরা চিরতরে ছেড়ে যাওয়া শুরু করে।
এতোসব কিছুর পরেও কেউ যদি নিজ আনন্দে, প্রাণের খুশিতে বাঁচতে চায়, তাহলে আসলে কার বাড়া ভাতে ছাই পড়ে, বড়ো জানতে ইচ্ছে করে। কেনইবা এতো বিধিনিষেধের আরোপ তাদের ওপর!
আমি চাই, শুধু শিশুরা নয়, বুড়োরাও বাঁচুক আপন আনন্দে, করুক যা মনে চায়। একটা নিঃসংশয়, নিঃসংকোচ পৃথিবী হোক তাদের সকলের জন্য। বুড়োকালটা হোক আনন্দের, সম্মানের আর আত্নতৃপ্তির।
এএনএম/