কী সহজে হয়ে গেল বলা, কাঁপলো না গলা এতটুকু!

মেডিসিন বিভাগে থাকার সময় ফেজ-এর এক ব্লক ফাইনাল পরীক্ষায় কাউন্সেলিং স্টেশনে টপিক ছিল—ব্রেকিং এ ব্যাড নিউজ! ডেভিডসন বইয়ের একটা ছক থেকে পয়েন্টগুলো ধরে ধরে একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর স্বজনকে রোগটি সম্পর্কে বুঝিয়ে বলা।
ক্যান্সারের মতো জটিল রোগীর স্বজনকে দুঃসংবাদটি জানানো এক অতি কঠিন কাজ! তবু, সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালো বাসিলাম ...
পরীক্ষার হল আর চেম্বারের মাঝে বিস্তর ফারাক। কোত্থেকে শুরু করবো বুঝতে না পেরে আমি খুক করে কাশি, যাকে বলে হেসিটেটরি কাফ-সংশয়যুক্ত কাশি!
কয়েকদিন ধরে ভ্যাপসা গরম। আমি টিস্যু নিয়ে ঘাম মোছার চেষ্টা করি!
চাচা প্রচণ্ড গরম পড়েছে। এই রুমে গরম খুব বেশি। আপনি বাইরে খোলামেলায় বসুন। প্রেসক্রিপশন আপনার ছেলে নিয়ে যাবে। বলেই সহকারীকে ইশারা করি। সে রোগীকে সরিয়ে নেয়।
আমি টুকরো টুকরো কথা বলে পরিবেশটা হালকা করি। কয়েক মিনিটের একটা প্রাণবন্ত আড্ডা দেই। তারা সম্পর্কে আমার আত্মীয়, এটা খুঁজে খুঁজে বের করি। এই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে আমাদের সবাইকে চলে যেতে হবে, সেই দার্শনিক আলোচনাও চলে।
এরপর হঠাৎ আমাকে সিরিয়াস হতে হয়। দেখুন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শরীরের সব উপাদান সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে তৈরি করেছেন। কোন একটি রক্ত কণিকা কতটুকু থাকবে তা তিনিই নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
যদি কোনো রক্ত কণিকার শরীরে ১১ হাজারের কম থাকার কথা থাকে আর যদি সে ১ লক্ষ ৭৭ হাজারের মতো থাকে, তবে কি এটা স্বাভাবিক?
-না।
শুধু যে অস্বাভাবিক তা না, বরং বিস্ময়কর। তাই আমি ল্যাবে এটি তিনবার পরীক্ষা করিয়েছি এবং প্রতিবারই প্রায় একই রকম রিপোর্ট পেয়েছি। আমার ধারণা, তার রক্তের জটিল ও খারাপ কোন অসুখ হয়েছে।
-উনার কি ক্যান্সার হয়েছে?
আমার মনে হয়, এ ধরনের কোন জটিল অসুখই তার হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত মন্তব্যের আগে আমি উনাকে এ বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে পাঠাতে চাই।
তার আগে আপনাদের অর্থনৈতিক সংগতি সম্পর্কে আমাকে ধারণা দিন। তাহলে সঠিকভাবে রেফার করা আমার জন্য সহজ হবে।
কথামালা চলতে থাকে, গড়িয়ে যায় সময়। আচ্ছা, একদিন আমার চিকিৎসকও কি সংশয়যুক্ত কাশি দিয়ে টিস্যু হাতে নিয়ে কাল্পনিক ঘাম মুছতে মুছতে বলবে, স্যার, আমার চেম্বারের এসিতে কোনো সমস্যা হয়েছে, গরম কমছে না, আপনি একটু পাশের রুমে বসুন।