১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১১:৩৪ এএম

দেশে সীসা দূষণে প্রতিবছর মারা যাচ্ছে লক্ষাধিক মানুষ

দেশে সীসা দূষণে প্রতিবছর মারা যাচ্ছে লক্ষাধিক মানুষ
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীসা দূষণের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ।

মেডিভয়েস ডেস্ক: বাংলাদেশে সীসা দূষণের ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর এক লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। এ কারণে দেশে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা কমে যাচ্ছে, ফলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ছে। যার আর্থিক ক্ষতির হিসেবের পরিমাণ প্রায় ২৮ হাজার ৬৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশের ২০১৯ সালের মোটি জিডিপি’র প্রায় ৬ থেকে ৯ শতাংশের সমান।

চিকিৎসা সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ জার্নালে’প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘গ্লোবাল হেলথ বার্ডেন অ্যান্ড কস্ট অব লেড এক্সপোজার ইন চিলড্রেন অ্যান্ড অ্যাডাল্টস: অ্যা হেলথ ইমপ্যাক্ট অ্যান্ড ইকোনমিক মডেলিং অ্যানালাইসিস’ নামের এই গবেষণাটি করেছেন বিশ্বব্যাংকের একদল গবেষক।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীসা দূষণের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। এর ফলে একদিকে প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে অস্বাভাবিক হারে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তেমনি শিশুদেরও বুদ্ধিমত্তা কমে যাচ্ছে। সীসা সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে শিশুদের। মাত্রার চেয়ে বেশি সীসা শিশুদের শরীরের বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে।

বাংলাদেশের ২০১৯ সালের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেছেন, সীসা দূষণের ফলে দেশটিতে শূন্য থেকে চার বছর বয়সী বাচ্চারা প্রায় দুই কোটি আইকিউ পয়েন্টস হারাচ্ছে। এতে শিশুদের বুদ্ধির যথাযথ বিকাশ হচ্ছেনা। ফলে নতুন কিছু শেখার ক্ষেত্রে তাদের যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমনি আচার-ব্যবহারেও নানা অসংগতি দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া, খাবারে অরুচি, ওজন কমে যাওয়া, খিটখিটে মেজাজ - এরকম নানা সমস্যাও তৈরি করছে।

ইউনিসেফ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. প্রিসিলা ওবিল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাংলাদেশে শিশুদের রক্তে উচ্চমাত্রায় সীসার উপস্থিতি তাদের মেধার পূর্ণ বিকাশের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। এ ছাড়া সীসা দূষণের ফলে তাদের আইকিউ কমে যাচ্ছে, যা দেশটির সার্বিক উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই সীসা দূষণ বন্ধে জাতীয় পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী।’

২০২২ সালের মে মাসে প্রকাশিত ‘গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজে’র তথ্যে দেখা গিয়েছিলো, সীসা দূষণের ফলে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার মানুষ অকালে মারা যাচ্ছে। কিন্তু নতুন এই গবেষণা প্রতিবেদনে আরও ভয়ঙ্কর সব তথ্য উঠে এসেছে।

এখানে দেখা যাচ্ছে, সীসা দূষণের ফলে বাংলাদেশে প্রতিবছর ২৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রকল্প সমন্বয়ক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সীসা দূষণ রোধে এখনই উপযুক্ত সময়। এই সমস্যাকে সমূলে উৎপাটনের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।’

সীসা দূষণের উৎস

ব্যাটারি ভাঙ্গা শিল্প, সীসাযুক্ত পেইন্ট, অ্যালুমিনিয়ামের হাড়ি-পাতিল, খাবার রাখার জন্য ব্যবহৃত সিরামিকের পাত্র, ই-বর্জ্য, খেলানা, সার, রান্নায় ব্যবহৃত বিভিন্ন মশলা, প্রসাধনী, খাবার-দাবার এবং চাষ করা মাছের জন্য তৈরি খাবার থেকেই মূলত বাংলাদেশে সীসার দূষণ ঘটে।

প্রকাশিত গবেষণাটির অংশ হিসেবে খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ২০০টি নমুনা সংগ্রহ করে সীসার উপস্থিতি পরিমাপ করে দেখেছে নিউ-ইয়র্ক ভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘পিওর আর্থ’। এসব নমুনার মধ্যে খাবার রাখার জন্য ব্যবহৃত ধাতব ও প্লাস্টিকের পাত্র, সিরামিক পাত্র, রঙ, শুকনা খাবার, খেলনা, রান্নায় ব্যবহৃত মশলা এবং প্রসাধনী পণ্য রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২৪ শতাংশ নমুনাতেই মাত্রাতিরিক্ত সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

খাবার রাখার জন্য ব্যবহৃত ৫৯ শতাংশ ধাতব পাত্রে, ৪৪ শতাংশ সিরামিক পাত্রে, ৯ শতাংশ প্লাস্টিকের পাত্রে, ৫৪ শতাংশ পেইন্টে, ১৭ শতাংশ চাল/স্টার্চে ১৩ শতাংশ খেলনায়, ৭ শতাংশ মশলায় এবং ৬ শতাংশ প্রসাধনীতে অতিমাত্রায় ক্ষতিকর সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে প্রতি ডেসিলিটার রক্তে গড়ে প্রায় ৬ দশমিক ৮ মাইক্রোগ্রাম সীসা পাওয়া গেছে বলে গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে। তবে একজন মানুষের শরীরে কতটুকু সীসা থাকা নিরাপদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত তার সঠিক কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি। সূত্র- বিবিসি 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
প্রলোভন দেখিয়ে রোগীদের বেসরকারিতে প্রেরণ

মুগদা মেডিকেলে আটক ২২ দালাল কারাগারে 

  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক