অতিরিক্ত চা পান কতটা স্বাস্থ্যকর?

মো. তাওহিদুল ইসলাম: সারা দিনের নানান ব্যস্ততা, অফিসের কাজের চাপে ক্লান্ত শরীরে যখন অলসতা চেপে ধরে তখনই এক কাপ চা ক্লান্তি দূর করতে অভাবনীয় ভূমিকা পালন করে। এর পাশাপাশি চা মানসিক অবসাদও দূর করে। বিশেষ করে গ্রিন টি স্বাস্থ্য রক্ষায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে এই উষ্ণ পানি অতিরিক্ত পান করলে স্বাস্থ্যের ক্ষতিও আছে।
চা পানের উপকারিতা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ মেডিভয়েসকে বলেন, চা মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটা হালকা পানীয় এবং তুলনা মূলকভাবে স্বস্তা। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সবাই খেতে পারেন। নিয়মিত গ্রিন টি খাওয়া শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য ভালো। তবে অতিরিক্ত চা পান করা উচিত না। যেমন, অনেকেই একটু পর পর চিনি দিয়ে চা পান করেন, এতে সব সময় ব্রেইন উত্তেজিত থাকে, মনযোগ সহকারে কথা বলা বা কাজ করা সম্ভব হয় না। খুব বেশি চা খেলে মাথা জিম জিম করে, রাতে ঠিক মতো ঘুম হয় না, শরীর অস্বস্তি লাগে। কিন্তু পরিমাণ মতো দিনে ৩ থেকে ৪ কাপ চা শরীরের জন্য ভালো। বিশেষ করে গ্রিন টি যাদের ডায়াবেটিস আছে, তারা চিনি ছাড়া খেলে উপকারী।
চা পানে সময়
দিনের কোন অংশে চা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অধিকতর উপকারী এমন প্রশ্নের জবাবে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, এটি ব্যক্তির একান্ত ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। সকালে ঘুম থেকে উঠে গ্রিন টি খেলে শরীরে জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে হার্টের জন্য ভীষণ উপকারী। তবে চা যে কেউ যেকোনো সময় পান করতে পারেন। কিন্তু রাতে ঘুমানো সময় চা খাওয়া উচিত না। এতে ব্রেইন উত্তেজিত থাকে। ফলে রাতে ঠিক মতো ঘুম হয় না, যা শরীরে জন্য মারাত্মক ক্ষতির।
ক্লান্তি দূর করে চা
তিনি বলেন, চায়ের সাথে অনেকে ২ থেকে ৩ চামচ চিনি খান। এতে শরীর তাৎক্ষণিক ক্যালরি পায়। ফলে শরীর চাঙা হয়ে উঠে এবং ক্লান্তিভাব দূর হয়।
রাস্তার পাশে চা পানে সতর্কতা
ফুটপাতের চা পানে সতর্ক করে তিনি আরও বলেন, আমাদের ফুটপাতে খাবারের যে সংস্কৃতি অর্থাৎ স্ট্রিট ফুডের মতোই চায়ের দোকানগুলো। এগুলো খুব ভালো করে দেখা উচিত। চা বানাতে পানি প্রয়োজন হয়। এই পানি নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত না হলে ডায়রিয়া, কলেরাসহ পানিবাহিত রোগ হতে পারে। এর পর যিনি চা তৈরি করেন, তার হাত পরিষ্কার না থাকলেও স্বাস্থ্যগত সমস্যা হতে পারে। এ জন্য ফুটপাতে যেকোনো খাবার বিক্রিতে নীতিমালা থাকা দরকার। স্যানিটারি ও ফুড ইন্সপেক্টরদের মাঝে মাঝে এসব দেখভাল করা দরকার।
ডা. শামীম আহমেদ বলেন, চাইলে চা কোম্পানিগুলো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। যেমন আইসক্রিম কোম্পানিগুলো নিজস্ব ব্যবস্থপনায় শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে থাকে। ঠিক একইভাবে চা কোম্পানিগুলোও বিক্রির স্বাস্থ্যসম্মত পয়েন্ট করতে পারে। এটা খুব বেশি কঠিন কাজ না, একটু সচেতন হলেই সম্ভব।
দুধ চা
তিনি বলেন, দুধে প্রোটিন থাকে। এটা ভালো। কিন্তু দেখতে হবে দুধটা গরুর খাটি দুধ কিনা। আর কনডেস্ক মিল্কের চা খেলে দেখতে হবে এটা অর্জিনাল কি না। কারণ গরমের মধ্যে ভেজাল মিশিয়ে দিলে সহজে টের পাওয়া যাবে না। গ্রামে গরু বা ছাগলের দুধ দিয়ে অনেকে চা খান। এটা স্বাস্থ্য সম্মত। কিন্তু কৌটার দুধ বা কনডেস্ক মিল্ক আমাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেতে হবে।
শিশুদের চা পানে মানা
শিশুদের ১২ বছরের আগে চা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত নয় জানিয়ে বিএসএমএমইউর এই চিকিৎসক বলেন, অল্প বয়সী শিশুদের চা পানে নিরুৎসাহীত করা উচিত। একটা বয়সের পরে চা পান করা ভালো। শিশুরাও খেতে পারে, কিন্তু ছোট বাচ্চারা অভ্যস্থ হয়ে গেলে সমস্যা। দেখা যায়, গরম চায়ে শিশুর মুখ পুড়ে যায়। এ জন্য ছোট বাচ্চাদের জন্য নরমাল খাবারই সব সময় উপকারী। আর বাচ্চাদের ঘুম বেশি দরকার। বয়স যত কম তার ঘুম তত বেশি প্রয়োজন। বাচ্চারা নিয়মিত চা খেলে ঘুম হবে না। আর চা একটা নেশার মতো কাজ করে। তাই তাদের কোনো কিছুতে নেশা হোক, সেটা অপ্রত্যাশিত। তাদের নিয়ন্ত্রিত জীবন জরুরি। সুতরাং বাচ্চারা যাতে নরমাল খাবার খেয়ে নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করে।

দ্য বাংলাদেশ এন্টি ড্রাগ ফেডারেশনের কর্মশালা
আসক্তি ভুলে তরুণদের ক্যারিয়ার গঠনে মনোযোগের আহ্বান
দ্য বাংলাদেশ এন্টি ড্রাগ ফেডারেশনের কর্মশালা
আসক্তি ভুলে তরুণদের ক্যারিয়ার গঠনে মনোযোগের আহ্বান
