
ডা. সাদাব সাউদ সানী
মেডিকেল অফিসার (৩৩তম বিসিএস), ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (২০০৫-০৬)
১৫ মে, ২০২৩ ০৯:০১ পিএম
সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসের লক্ষণ ও কারণ

সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস হলো গিঁটের এক ধরনের প্রদাহ, যা সোরিয়াসিসের রোগীদের মধ্যে বৃদ্ধি পায়। আক্রান্ত গাঁটগুলো ফুলে যায় এবং প্রায়ই যথেষ্ট যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে। সাধারণত যাদের সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস আছে, তাদের আর্থ্রাইটিসের উপসর্গগুলো বেড়ে ওঠার কয়েক বছর আগে থেকেই সোরিয়াসিস থাকে।
সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস কি
যাদের সোরিয়াসিস নামে দীর্ঘস্থায়ী চর্মরোগ রয়েছে, তাদের জয়েন্টে ব্যথা, ফোলাভাব ও শক্ত হয়ে যাওয়াকে সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস বলে।
বুঝার উপায়
সোরিয়াসিস একটি চর্মরোগ। এ রোগে আক্রান্ত হলে মানুষের ত্বকের অংশ বিশেষ লাল, পুরু ও শুস্ক-রুক্ষ হয়ে স্তরে স্তরে আবরণ উঠে যেতে পারে। শ্যামলা বা কালো বর্ণের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সোরিয়াসিসের দাগগুলো বেগুনি, গাঢ় বাদামি বা গাঢ় ধূসর দেখাতে পারে। সোরিয়াসিসের উপরের আবরণ সাধারণত রূপালী বা সাদা ও পুরু হয়।
কারণ
ঠিক কি কারণে সোরিয়াসিস দেখা দেয়, তা এখনও অজানা। কিছু জিনিস সোরিয়াসিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলতে পারে। যেমন-পরিবারের রক্ত-সম্পর্কের আত্মীয়ের সোরিয়াসিস থাকলে, সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস পুরুষ ও মহিলাদের সমানভাবে প্রভাবিত করে। মাথার ত্বক, ত্বকের ভাঁজ, যেমন বগল, নাভি, কুঁচকি, আন্তঃগ্লুটিয়াল অঞ্চল বা স্তনের নিচে ও নখে প্রায়ই সোরিয়াসিস লুকিয়ে থাকে। যা সম্পর্কে হয়তো আপনি অবগত নন।
লক্ষণ
সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস হওয়া বেশিরভাগ লোকের ত্বকে প্রথমে সোরিয়াসিসের লক্ষণ দেখা যায়, তারপরে বাতের লক্ষণ দেখা যায়। প্রায় ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সোরিয়াসিস দেখা দেওয়ার আগে আর্থ্রাইটিসের লক্ষণগুলো লক্ষ্য করা যায়।
১. ত্বকে শুষ্ক, স্ফিত লালচে দাদ হয়, যা প্রায়শই রূপালি বা সাদা আবরণে আবৃত থাকে ।
২. মাথায় অতিরিক্ত খুসকি হওয়া।
৩. মাথার ত্বকে, যৌনাঙ্গে বা ত্বকের ভাঁজে (যেমন বগলে, কুঁচকিতে বা স্তনের নিচে) ফুসকুড়ি হওয়া।
৪. মাথার ও হাত-পায়ের তালুতে খোসপাঁচড়া।
৫. শরীরে চুলকানি।
৬. হাতে-পায়ের নখে ছোট ছোট গর্ত, নখ খসখসে-ভঙ্গুর বা ভিন্ন রঙ দেখায়।
৭. সোরিয়াসিসে আক্রান্তদের প্রায় ৩০ শতাংশে সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস হয়।
৮. সোরিয়াসিসের একটি মানসিক প্রভাবও রয়েছে। এই অবস্থায় আক্রান্ত রোগীরা প্রায়শই তাদের ত্বকের কারণে বিব্রত বোধ করেন এবং কেউ কেউ বিষণ্ণ বা উদ্বিগ্ন হন।
আপনার যদি এই সমস্যাগুলি থাকে, তবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কাউন্সেলিং বা অন্য ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার মাধ্যমে পরিত্রাণ পেতে পারেন।
যারা ঝুঁকিতে আছেন
রক্ত-সম্পর্কের আত্মীয়ের ত্বকে সোরিয়াসিস থাকলে, আপনার ঝুঁকি আছে। এ ছাড়া আরও যারা ঝুঁকিতে রয়েছেন-
১. বাতের রোগী
২. যাদের আঙ্গুল ফুলে যায় (ড্যাকটাইলাইটিস)।
৩. গোড়ালি বা পায়ের পাতায় ব্যথা (এনথেসাইটিস) বা পিঠে ব্যথা থাকলে।
৪. ত্বকে বা মাথার তালুতে সোরিয়াসিস থাকলে
৫. পরিবারে সোরিয়াসিসের ইতিহাস থাকলে
৬. হাতে-পায়ের গিরার পাশে হাড় বাড়লে এবং
৭. যাদের রক্তে রিউমাটয়েড ফ্যাক্টর নেগেটিভ।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
আপনার ত্বক দেখে এবং আপনাকে প্রশ্ন করে সোরিয়াসিস আছে কিনা, তা একজন চিকিৎসক বলতে সক্ষম। বিরল ক্ষেত্রে সোরিয়াসিস আছে কিনা, তা নিশ্চিত করার জন্য ত্বকের একটি ছোট নমুনা পরীক্ষা করতে হয়।
প্রতিরোধে করণীয়
ত্বককে খুব বেশি শুষ্ক থেকে বাঁচাতে গন্ধহীন ঘন ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম এবং মলম ব্যবহার করুন।