রোগীর সেবায় চিকিৎসক-নার্সদের আরও আন্তরিক হতে রাষ্ট্রপতির আহ্বান

মেডিভয়েস রিপোর্ট: রোগীর সেবায় আরো আন্তরিক হতে চিকিৎসক-নার্সদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ।
আজ সোমবার (১৩ মার্চ) বিএসএমএমইউ’র চতুর্থ সমাবর্তন যোগ দিয়ে এ কথা বলে তিনি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সাথে গবেষণা এবং অধিকতর উন্নত চিকিৎসা প্রদান করার লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। সম্প্রতি সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু করায় দেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে না যেয়ে কম খরচে দেশেই উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘মানবসেবা একটি স্বর্গীয় গুণ। রোগাক্রান্ত মানুষ সৃষ্টিকর্তার পর একজন ডাক্তার ও নার্সের ওপর ভরসা রাখেন। আপনাদের ভালো ব্যবহার ও চিকিৎসা যে কোনো রোগীর পরম কাম্য। আপনারা উদার মন নিয়ে জনসাধারণের মাঝে ভালো ডাক্তারের পাশাপাশি বড়ো মানুষ হিসেবেও বিবেচিত হবেন।’
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘শিক্ষার মানোন্নয়নে গবেষণার বিকল্প নেই, অথচ আমাদের চিকিৎসা শিক্ষায় গবেষণার পরিমাণ খুবই কম। আমাদের দেশের রোগব্যাধির ধরণ উন্নত ও পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে ভিন্ন। যে কারণে আমাদের নিজস্ব গবেষণাকর্মই শুধু পারবে এদেশের বৈচিত্র্যপূর্ণ রোগসমূহের কার্যকর ও সুলভ চিকিৎসাপদ্ধতি উদ্ভাবন করে এদেশের রোগীদের সত্যিকারের সমাধানটি সহজলভ্য করতে। তাই আমি আপনাদের গবেষণায় আরো বেশি নিয়োজিত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
বিএসএমএমইউ চ্যান্সেলর বলেন, ‘রোগী আছে বলেই চিকিৎসা পেশা আছে। তাই যাদের কারণে আপনাদের রুটিরুজি তাদের প্রতি আপনাদের আরো যত্নবান হওয়া উচিত। বড়ো ডাক্তার হয়ে অপ্রয়োজনীয় বড়ো বড়ো টেস্ট দিয়ে রোগীদের হয়রানি করবেন না। কিছুসংখ্যক অসাধু ও প্রতারক চিকিৎসকদের জন্য যাতে গোটা চিকিৎসক সমাজের সুনাম ক্ষুন্ন না হয় সেদিকেও সচেতন থাকতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘হাসপাতালে একজন রোগী সার্বক্ষণিক সেবা ও সহচার্য পায় নার্সদের কাছ থেকে। একজন নার্সের সুন্দর ব্যবহার ও উৎসাহব্যাঞ্জক কথা রোগীর হাসপাতালে অবস্থানকে আরামদায়ক করে ও আরোগ্য ত্বরান্বিত করে। তাই নার্সদের রোগীর সেবায় আরো আন্তরিক হতে হবে।’
আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসকরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশেষ করে করোনা মহামারিকালে সেবার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা খুবই প্রশংসনীয় ও অতুলনীয়। অনেক চিকিৎসককে রোগীর সেবা দিতে গিয়ে প্রাণও দিতে হয়েছে। রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদেরও মনে রাখতে হবে ডাক্তারগণ আল্লাহ বা ভগবান নন। তারাও মানুষ। কেবল চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন। তাই রোগীর কিছু হলেই ডাক্তারদের দায়ী করবেন আর হাসপাতাল ভাঙচুর করবেন, এটাও কাম্য নয়। ডাক্তার, রোগী ও আত্মীয়স্বজনদের আরো বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। এমন অবস্থা কারোরই কাম্যই নয় যার ফলে সাধারণ মানুষ ও রোগীরা অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হন।’
বিকাল ৪টায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রপতি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথির হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। ভারতের বিহারে ইউনিভার্সিটি সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রাজবর্ধন আজাদ সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
গুরুত্বপূর্ণ এই সমাবর্তনে উপস্থিত ছিলেন প্রো-ভিসি অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, প্রো-ভিসি অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, প্রো-ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান প্রমুখসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্য, ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, শিক্ষক, দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
সমাবর্তনে সম্মানসূচক পিএইচডি ডিগ্রী প্রদান করা হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক এ্যাডভাইসরি প্যানেলের বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশের অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলকে। এ ছাড়া বিএসএমএমইউ’র সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম ও প্রখ্যাত অর্থোপেডিক সার্জন, সিনিয়র শিক্ষক অধ্যাপক ডা. কাজী শহীদুল আলমকেও সম্মানসূচক পিএইচডি ডিগ্রী প্রদান করা হয়।