১৬ অক্টোবর, ২০২২ ০৫:২২ পিএম
মেডিভয়েসকে ঢাবির ২য় প্রফে ২য় তুর্জয় কবির

প্রশ্নোত্তরে প্রাসঙ্গিক ছবি এঁকে দিলে বেশি নম্বর পাওয়া যায়

প্রশ্নোত্তরে প্রাসঙ্গিক ছবি এঁকে দিলে বেশি নম্বর পাওয়া যায়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী তুর্জয় কবির।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী তুর্জয় কবির। প্রথম প্রফেশনাল পরীক্ষায় বায়োক্যামিস্ট্রিতে অনার্স নম্বর ছিলো তার। আশৈশব মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন লালন করা এই শিক্ষার্থী পথশিশু ও হতদরিদ্রদের জন্য তৈরি করতে চান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আলোকিত মানুষ করতে চান শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের। 

সিরাজগঞ্জ জেলার মেধাবী শিক্ষার্থী তুর্জয় কবিরের মেডিকেলের পড়ার স্বপ্ন, সাফল্য অর্জন, পড়ার কৌশল ও ভবিষ্যত পরিকল্পনাসহ নানান বিষয়ে কথা হয় মেডিভয়েসের। পাঠকদের জন্য কথোপকথনের পুরো অংশটি তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তাওহীদুল ইসলাম। 

মেডিভয়েস: প্রফে দ্বিতীয় হয়েছেন, আপনার অনুভূতি জানতে চাই।

তুর্জয় কবির: দ্বিতীয় প্রফের পড়াশোনা শুরু হওয়ার পর থেকে গতানুগতিক পড়াশোনা করতে থাকি। বছরের একদম শুরু থেকেই আমি সর্বোচ্চ মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করেছি। তারপর শিক্ষকদের সহযোগিতা,অনুপ্রেরণা নিয়ে পরীক্ষা দেই।  তারা যেভাবে আমাদের পড়িয়েছেন, তার প্রভাব পড়েছে পরীক্ষার ফলাফলে। শুরুতে ভাবতে পারিনি, এতো ভালো ফল হবে। সর্বোচ্চটা দিয়েই পরীক্ষা দিয়েছি। ফলাফল দেখে আমি অভিভূত। 

মেডিভয়েস: আপনার পড়ার কৌশল কেমন ছিল? 

তুর্জয় কবির: আমাদের দ্বিতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় দুটি বিষয়। একটি ফরেনসিক মেডিসিন, অন্যটি কমিউনিটি মেডিসিন। ফরেনসিক মেডিসিনে অনেকগুলো পাঠ্য বই আছে। আমি বছরের শুরু থেকে পাঠ্য বইগুলো পড়েছি। আমার কাছে পাঠ্যপুস্তক পড়া খুবই চমৎকার। মেডিকেল শিক্ষার্থীরা সাধারণত গাইড বইয়ের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি, গাইড বই ছাড়াও ফরেনসিক ও কমিউনিটি মেডিসিনের পাঠ্য বইয়ের গভীরে যাওয়ার। ফরেনসিক মেডিসিনের পাঠ্য বইয়ের মধ্যে অনেক ফিগার আছে, যেগুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা আছে এবং এগুলো পড়তে গিয়েও অনেক ভালো লাগে। কমিউনিটি মেডিসিনে কিছু গবেষণা পদ্ধতির উপর কিছু বই আছে, কিছু ডেমোগ্রাফির উপর বই আছে। সেখানেও ফিগার দিয়ে উপস্থাপনটা সুন্দরভাবে করা আছে। আমি প্রথম থেকেই গাইডের পাশাপাশি পাঠ্য বইয়ের উপর নির্ভরশীলতা ছিলাম। এ জন্য আমার পাঠ্য বইয়ের ধারণাটা খুব পরিষ্কার ছিল। এ ছাড়া শিক্ষকদের ক্লাসের লেকচার পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ করতাম। তা ছাড়া আমাদের ফরেনসিক মেডিসিনে অটোপসি (ময়নাতদন্ত) করতে যেতে হয়, সেখানে প্রাক্টিক্যালি জ্ঞান অর্জন করেছি। আর কমিউনিটি মেডিসিনে আরএফএসটি ট্যুর হয় বা ডে ভিজিট হয়। হেলথ রিলেটেড স্পট, যেমন-সূর্যের আলো ক্লিনিক, ফ্যামিলি প্লানিং সেন্টার, যক্ষ্মার ডট সেন্টার—এই জায়গাগুলোতে গিয়ে আমাদের প্রাক্টিক্যালি ধারণা নিতে হয়। এমন ভিজিটে মনযোগী থাকার চেষ্টা করেছি। পরে সেটা বইয়ের সাথে মিলিয়ে নিয়েছি। প্রথম থেকে আমার পড়াশোনার ধাঁচটা, এ রকম ছিল। আর ভাইভা ও লিখিত পরীক্ষার সময় প্রেজেন্টেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লিখিত পরীক্ষার সময় প্রতিটা প্রশ্নের উত্তরের সাথে একটা করে ফিগার জুড়ে দিতে চেষ্টা করেছি। কারণ ছবি বা ফিগার আঁকলে শিক্ষকরা বেশি নম্বর দিয়ে থাকেন। ফরেনসিক ও কমিউনিটি মেডিসিন উভয় ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। পরীক্ষার খাতা সুন্দর রাখা, একই সাথে ভাইভাতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উত্তর দেওয়াও জরুরি। এই বিষয়গুলো আমি সারা বছর চর্চা করেছি।  

মেডিভয়েস: দ্বিতীয় হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে নবীন শিক্ষার্থীদের কি কি পরামর্শ দিবেন? 

তুর্জয় কবির: যারা তৃতীয় বর্ষে উঠবে তাদের সবার একটা ধারণা থাকে, এক বছরে মাত্র দুইটা বিষয়, সিলেবাসও ছোট কয়েক দিন পড়লেই হয়ে যাবে। কিন্তু বিষয়টা এমন না। দুই বিষয়েরই সিলেবাস অনেক বড়। কেউ যদি সত্যিই ভালো করতে চান, তাহলে তার বছরের শুরু থেকেই পড়াশোনা করতে হবে। আর এখানে শিক্ষকদের লেকচার ও প্রাক্টিক্যাল কাজগুলোর প্রতি মনযোগী থাকতে হবে। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, মেডিকেল পড়াশোনার অনেক কিছু মুখস্থ রাখতে হয়। এর পাশাপাশি অনেক কল্পনাসংক্রান্ত বা ধারণাসংক্রান্ত বিষয়ও আছে। এসব বিষয়য়ের ধারণা পরিষ্কার থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভাইভা বা লিখিত পরীক্ষায় অনেক সময়ই কল্পনাসংক্রান্ত বা ধারণাসংক্রান্ত প্রশ্ন আসে। তথ্যমূলক প্রশ্ন থেকে ধারণাসংক্রান্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারলে পরীক্ষায় বেশি নম্বর আসে। তাই নবীনরা পড়ার সময় যাতে বুঝে বুঝে পড়ে এবং মূল বইয়ে সাথে সংযোগ রাখে। 

মেডিভয়েস: মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় আপনার অবস্থান, প্রথম প্রফের ফলাফল কেমন ছিল? 

তুর্জয় কবির: মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার অবস্থানটা আমার মনে নাই। তবে দুই হাজারের বেশি ছিল। আমার প্রথম প্রফেশনাল পরীক্ষায় বায়োক্যামিস্ট্রিতে অনার্স নম্বর ছিল। এমনই একটা রেজাল্ট ছিল। 

মেডিভয়েস: মেডিকেল পড়া অনেকটাই ভিন্ন ধাঁচের, ফলে অনেকেই মানিয়ে নিতে পারেন না, তাদের জন্য কোনো পরামর্শ, বিশেষ যারা প্রফে অকৃতকার্য হয়েছেন?

তুর্জয় কবির: বাংলা ভার্সনে এসএসসি ও এইচএসসি শেষ করে আসার পর মেডিকেলে ইংরেজি ভার্সনের মুখোমুখি হতে হয়। তাদের এখানে একটু খাপ খাইয়ে নিতে সমস্যা হয়। আমি ইংরেজি ভার্সন থেকে পড়াশোনা করে আসায় সমস্যা তুলনামূলক কম হয়েছে। কিন্তু বন্ধুদের দেখেছি, বাংলা ভার্সন থেকে মডিকেলে আসছে। আমরা মেডিকেলে পড়তে এসে নতুন নতুন ইংলিশ টার্ম পাচ্ছি। এই টার্মগুলো পড়ার সময়ই অর্থ বুঝে পড়ে সামনের দিকে আগানোর উচিত। কারণ যে ইংলিশ টার্মের অর্থ আমি জানি না, সেটা রেখে দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলে এটা আর সমাধান হবে না। ভবিষ্যতে এটা অজানাই থেকে যাবে। সুতরাং যত অজানা টার্ম আসবে, সবগুলো বুঝে বুঝে এগুতে হবে। মেডিকেলে অন্যতম বিষয় হচ্ছে কনসিসটেন্সি। পড়াশোনায় কনসিসটেন্সি না থাকলে মেডিকেলে টিকে থাকা সম্ভব হবে না। আমাদের প্রতিদিন একটা সময় পড়াশোনার জন্য বরাদ্দ রাখতে হয়। এখানে রেগুলার পরীক্ষা থাকে, যার জন্য কনসিসটেন্সি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

দ্বিতীয় প্রফে অকৃতকার্যদের বেলায় বলবো, ফরেনসিক ও কমিউনিটি মেডিসিন দুইটা বিষয় প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের তুলনায় কিছুটা কঠিন। তবে পরের বছরের বিষয়ের তুলনায় কিছুটা সহজ। যেহেতু ফরেনসিক ও কমিউনিটি মেডিসিন বিষয় দুটোর মধ্যে বিশেষ করে কমিউনিটি মেডিসিন বেশি তথ্যনির্ভর। এখানে কোন তথ্য মনে রাখা উচিত, কিভাবে পড়লে পরীক্ষায় উত্তর লেখা যাবে—এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। যেমন-কমিউনিটি মেডিসিনে অনেক বেশি রোগ নিয়ে আলোচনা থাকে। দেখা যায়, পরীক্ষার সময় নির্দিষ্ট কয়েকটা রোগ নিয়ে জিগাস করে থাকে। এ ছাড়া কমিউনিটি মেডিসিনে গবেষণা পদ্ধতি এবং ডেমোগ্রাফি (জনসংখ্যা) বিষয়টা বুঝে বুঝে পড়া উচিত। 

মেডিভয়েস: স্বপ্নের মেডিকেল পড়া কেমন উপভোগ করছেন? এখানে কোনো বিষয় চ্যালেঞ্জিং মনে হয়? কোন কৌশলে টপকে যান? 

তুর্জয় কবির: ছোট বেলা থেকেই মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছা। দেখা যায়, অনেক শিক্ষার্থী মেডিকেলে পড়তে এসেছে মা-বাবার ইচ্ছানুযায়ী। কিন্তু আমার পরিবার থেকে কোনো চাপ ছিলো না, উল্টো আমার নিজেরই বেশি ইচ্ছা ছিল, মেডিকেল কলেজে পড়ার। মেডিকেলে এসে আমি পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যুক্ত ছিলাম। এতে যে বিষয়টা ভালো হয়েছে তা হলো, পড়াশোনা করতে করতে মনের ওপর যে চাপ তৈরি হয়, সেটা থেকে পরিত্রাণ মেলে। আর এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা অনেক শিক্ষকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক করতে পারি ও তাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারি।

মেডিকেলে চ্যালেঞ্জিং মোকাবেলা করে চলার কৌশল হলো ধৈর্য রাখা। আর যাদের নিজ থেকে ইচ্ছা থাকে তারা পড়াশোনার আগ্রহ নিজেরাই তৈরি করে নেয়। আর ধারাবাহিকতা গুরুত্বপূর্ণ। এক সময় আমাদের মানুষকে সেবা দিতে হবে, যেটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। ভাবতে হবে, আমি মা-বাবা বা আত্মীয়-স্বজন অথবা একদম কাছের মানুষের সঠিক চিকিৎসা দেওয়ার মতো আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে পারছি কি না। এই বিষয়গুলো ভাবলে মনে হবে আমার ভালোভাবে পড়াশোনা করা উচিত। 

মেডিভয়েস: মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার সাফল্য অনেকে প্রফগুলোতে ধরে রাখতে পারেন না, কী কী কারণ থাকতে পারে? 

তুর্জয় কবির: মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় মূলত এমসিকিউ দিয়ে যাচাই-বাছাই করা হয়। কিন্তু ভর্তির পর মেডিকেলে লিখিত পরীক্ষা, ভাইভা ও অসপি আছে। অর্থাৎ এখানে অনেকগুলো পরীক্ষা আছে। ভর্তি পরীক্ষায় আমাদের ভাইভার মুখোমুখি হতে হয়নি। কিন্তু মেডিকেলে এসে ভাইভা দিতে হয়। ভাইভাতে, প্রেজেন্টেশন, তথ্য আদান-প্রদান তথা যোগাযোগের দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যাদের জ্ঞান বা মেধা অনেক ভালো, কিন্তু এসব বিষয় উপস্থাপন করতে পারে না, তাদের এখানে একটা শূন্যতা থেকে যায়। আর এ কারণে তারা পিছিয়ে পড়ে। এ ছাড়া মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় আমাদের বড় প্রশ্ন বা লিখিত কোনো পরীক্ষা দিতে হয়নি। কিন্তু মেডিকেলে এসে বড় প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে, লিখিত পরীক্ষা ও ছবি আঁকতে হচ্ছে। এজন্য ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করেও মেডিকেল পড়াশোনায় কিছুটা পিছিয়ে যাচ্ছে। 

মেডিভয়েস: সোশ্যাল মিডিয়া, বাজে বন্ধু কিংবা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততায় যুক্ত হয়ে যাওয়াকেও দায়ী করেন অনেকে। আপনার দৃষ্টিতে এর ভূমিকা কতটুকু? 

তুর্জয় কবির: বিষয়টা আসলে এ রকম না। সবারি একটা ইচ্ছা থাকে। যেমন- কেউ পড়াশোনায় গুরুত্ব দেয়, আবার কেউ অন্য দিকেও দেয়। কেউ যদি চায় আমি রাজনীতি করবো না, তাহলে সে নাও করতে পারে। আবার অনেকেই আছে রাজনীতি করেও পড়াশোনা করে ফলাফল ভালো করছে। এ ছাড়া অন্যান্য কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থেকেও ভালো করছে।  

মেডিভয়েস: এমবিবিএসে ক্যারিঅন বাতিল ও সিজিপিএ পদ্ধতিতে ফলাফল প্রকাশের সিদ্ধান্তকে কিভাবে দেখছেন?

তুর্জয় কবির: আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা সমর্থন করি না। কারণ সিজিপিএ পদ্ধতি চালু হয়ে গেলে আমরা যখন ডাক্তার হবো, তখন রোগীরা সিজিপিএ বিবেচনা করে ডাক্তারের কাছে যাবে। একজন ডাক্তার ভালো হতে হলে তার সিজিপিএ ভালো হতে হবে, তা কিন্তু না। একটা/দুইটা পরীক্ষা যেকোনো শিক্ষার্থীর খারাপ হয়ে যেতেই পারে। ভালো প্রস্তুতি থাকার পরেও দুর্ঘটনাবশত পরীক্ষা খারাপ হয়। তার সিজিপিএ কমে গেছে। কিন্তু সে তো ভালো ছাত্র ছিল, ভালো একজন ডাক্তারও। এখন আমরা সিজিপিএ দিয়ে তাকে মূলায়ন করবো? এ জন্য সিজিপিএ’র বিষয়টা আমি সমর্থন করি না। 

মেডিভয়েস: অমনোযোগিতার কারণে মেডিকেল শিক্ষার্থীরা প্রফে খারাপ করে বলে করেন? 

তুর্জয় কবির: একজন শিক্ষার্থী যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই যদি অমনোযোগী থাকে, তাহলে ফল খারাপ হতেই পারে। শিক্ষকরা যেভাবে ক্লাসে পড়ান,সেভাবেই লিখিত পরীক্ষা ও  ভাইভায় প্রশ্ন করেন। এ ক্ষেত্রে যেসব শিক্ষার্থী ক্লাসে মনোযোগী থাকে তাদের জন্য ভালো হয়।  

মেডিভয়েস: কোনো শিক্ষার্থী যদি ক্যারিঅন না করতে পারে এবং দেখে তার বন্ধুরা ওয়ার্ডে যাচ্ছে, ক্লিনিকে যাচ্ছে, তখন তার মানসিক অবস্থা কেমন হবে? 

তুর্জয় কবির: এটা কষ্টদায়ক একটা অবস্থা হয়। যখন একজন পিছিয়ে যায় এবং দেখে অন্যরা ওয়ার্ড ও  ক্লিনিকে যাচ্ছে, কিন্তু সে যেতে পারছে না। এতে সাময়িকভাবে তার শিক্ষার্থীর মানসিক অবস্থা বিপর্যস্থ থাকে। সে ক্ষেত্রে সহপাঠীদের দায়িত্ব তাকে অনুপ্রেরণা দেওয়া, যথাসাধ্য সহযোগিতা করা, যাতে সে আবার আমাদের সঙ্গেই যাত্রাটা শুরু করতে পারে।  

মেডিভয়েস: স্বাস্থ্যখাতের কোন বিষয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান? অর্থাৎ কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে চান? 

তুর্জয় কবির: আমার এখন চতুর্থ বর্ষ চলছে। তাই এখনো কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হবো, এটা ঠিক করিনি। তবে কঠিন জিনিসের প্রতি আমার খুব আগ্রহ। নিউরো সার্জারি বা নিউরো মেডিসিন চ্যালেঞ্জিং বিষয়। আর আমার চ্যালেঞ্জিং বিষয়গুলোই ভালো লাগে। সে প্রেক্ষাপটে আমার ইচ্ছা, নিউরো সার্জারি বা নিউরো মেডিসিনের দিকে। 

মেডিভয়েস: মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন কোথা থেকে পেলেন? ভর্তিচ্ছুদের প্রতি আপনার পরামর্শ জানতে চাই। 

তুর্জয় কবির: আমার ছোট বেলা থেকেই মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন। ছোট বেলার একটা ঘটনা দিয়ে বলি, মা-বাবা দুজনই চাকরিজীবী। একদিন আম্মু দুপুরের খাবারের জন্য বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় আসছেন। কিন্তু আমি আম্মুরে বাসার ভিতরে ঢুকতে দিব না। কারণ আমার বায়না, আমাকে খেলনার ডাক্তার সেট কিনে দিতে হবে, না হলে দরজা খুলবো না। পরে আম্মু বৃষ্টির মধ্যে ভিজতে ভিজতে মার্কেট থেকে ডাক্তার সেট কিনে বাসায় আসার পরে আমি দরজা খুলে দিয়েছি। মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছটা এভাবেই ছোটবেলা থেকেই ছিল। আর ছোটবেলা থেকেই আমার সর্দি, কাশি, ঠান্ডা লেগেই থাকতো। এজন্য বারবার ডাক্তারের কাছে যেতে হতো। কিছু ডাক্তাররা খুবই আদর-যত্ন করে ছোট বাচ্চাদের দেখে। ডাক্তারদের সহমর্মিতা দেখে মেডিকেলে পড়ার একটা ইচ্ছা কাজ করতো।

ভর্তিচ্ছুদের প্রতি আমার উপদেশ হচ্ছে, চারটা বিষয়ের উপর ভর্তি পরীক্ষা হয়। তাই এইচএসসিতে চারটা বিষয়ই সমপরিমাণ জোর দিয়েই পড়তে হবে। কারণ অনেকে মনে করেন, আমি মেডিকেলে পড়বো তাই বায়োলজি ভালো করে পড়বো। ফিজিক্স, ক্যামিস্ট্রিতে তেমন গুরুত্ব দেয় না। তারা মনে করে এটা হয়ত পেরে যাবো। দেখা যায়, শুধু বায়োলজি ভালো করে পড়ার জন্য এই বিষয় ভালো নম্বর পায়, কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় অন্যান্য বিষয়ে নম্বর কম পায়। এখানে আমার কথা হলো, ভর্তি পরীক্ষায় যেসব বিষয় থেকে প্রশ্ন আসে তার প্রত্যেকটা সমপরিমাণ গুরুত্ব দিয়ে পড়া। 

মেডিভয়েস: পথশিশুদের চিকিৎসা একেবারেই অবহেলিত, চিকিৎসক হওয়ার পর তাদের পাশাপাশি হতদরিদ্র মানুষের জন্য আপনার ভাবনা থাকবে কি? 

তুর্জয় কবির: বাংলাদেশে দরিদ্রতার বিষয়টা আসলেই প্রকট। যদিও আমরা বর্তমানে অনেক উন্নতি করেছি। তারপরও এই সমস্যগুলো থেকে যাচ্ছে। পথশিশু ও হতদরিদ্র মানুষদের যদি আমরা বড় করতে বা এগিয়ে নিতে চাই, তাহলে তাদের শিক্ষিত করে তোলাই হলো গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তার হওয়ার পর এ নিয়ে চেষ্টা চালাবো। এ জন্য আমি মানুষ তৈরির ফ্যাক্টরি অর্থাৎ স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চাই। বিশেষ করে গ্রামের দিকে যেখানে অনেক শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। 

মেডিভয়েস: শৈশবের কোনো স্মৃতির কথা শুনতে চাই, যা আপনার স্মৃতিতে আজও ঝলমলে? 

তুর্জয় কবির: আমি রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করেছি। এই কলেজে চান্স পাওয়াটা ছিল আমার জন্য একটা মাইলফলক। ক্যাডেট কলেজে যাওয়ার পরে অনেক কিছু শিখেছি। পড়াশোনা, লিডারশিপ, যোগাযোগের দক্ষতা ও খেলাধুলাসহ অনেকগুলো বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। সপ্তম শ্রেণিতে যখন ক্যাডেট কলেজে চান্স পেয়েছি, তখন মা-বাবা কলেজে দিয়ে আসবে। যেদিন আমাকে কলেজে দিয়ে আসে ওইদিন আমি বাবাকে কাঁদতে দেখেছি। এর আগে জীবনে কখনই বাবাকে কাঁদতে দেখিনি। তখন আমি মনে করলাম, আমার মা-বাবা তাদের থেকে দূরে রাখছে আমার ভালোর জন্যই। সুতরাং আমার উচিত, আমি যেখানেই থাকি না কেনো, পড়াশোনা করে মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করা। 

আমার জন্মস্থান ফরিদপুর। মা-বাবা চাকরির সুবাধে বিভিন্ন স্কুলে পড়তে হয়েছে। ক্যাডেট কলেজে ভর্তির আগ মুহূর্তে রংপুরের একটা ইংলিশ ভার্সন স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। 

মেডিভয়েস: আমাদের সম্পর্কে আপনার মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই।  

তুর্জয় কবির: মেডিভয়েস সম্পর্কে আমি শুনেছি। সত্যি বলতে শুধু স্বাস্থ্য খাত নিয়ে এ রকম একটা মিডিয়া কাজ করে, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তার বা মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বিষয় মানুষকে জানানো, বোঝানোর মতো মিডিয়া দেশে তেমন একটা নেই।  মেডিভয়েসই হচ্ছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মিডিয়া, যারা স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। অনেক সময় সাধারণ জনগণ বলে ডাক্তাররা কসাই। সেসব জনগণের কাছে ডাক্তারদের পরিচয় তুলে ধরছে মেডিভয়েস। মেডিভয়েসের এই কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি এটাকে ভালো মনে করি।

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত