১৭ মে, ২০২২ ০৫:৩৪ পিএম
উচ্চরক্তচাপ

‘চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন, পরামর্শেই বন্ধ করুন’

‘চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন, পরামর্শেই বন্ধ করুন’
ডা. এস এম মোস্তফা বলেন,  বেশিরভাগ মানুষ জানেই না উচ্চরক্তচাপের উপসর্গগুলো কি কি। এ জন্য কমিউনিটি লেভেলে প্রচার বৃদ্ধি করতে হবে।

মেডিভয়েস রিপোর্ট: ‘বাংলাদেশ এনসিডি স্টেপস সার্ভে-২০১৮’ অনুযায়ী ২৫ ভাগ মানুষ উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কার্ডিওলজি বিভাগের হল প্রভোস্ট, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান।

বিশ্ব উচ্চরক্তচাপ দিবস ২০২২ উপলক্ষে সোমবার (১৬ মে) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (এনসিডিসি) আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থাপিত প্রবন্ধে এসব তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

প্রতি পাঁচজনে একজন উচ্চরক্তচাপে ভুগেন জানিয়ে তিনি বলেন, দেশব্যাপী যে ডাটাগুলো আসছে, কিছুটা ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে অনেকে স্টাডি করেই এসব বের করছেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এনসিডি স্টেপস সার্ভে-২০১৮’ অনুযায়ী ২৫ ভাগ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। এ সময় তিনি আরও বলেন, দেশে প্রতিটি ঘরে রয়েছে উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত রোগী। সচেতনতার মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা উত্তম। আমাদের সচেতনতা খুবই কম। আরো বেশি সচেতনতা দরকার।’

উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে তিনটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে জানিয়ে ডা. এস এম মোস্তফা বলেন,  বেশিরভাগ মানুষ জানেই না উচ্চরক্তচাপের উপসর্গগুলো কি কি। এ জন্য কমিউনিটি লেভেলে প্রচার বৃদ্ধি করতে হবে। হাসপাতাল ও প্রশাসনিক লেভেলেওে রয়েছে কিছু চ্যালেঞ্জ।

‘ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের আওতায় ৬২ উপজেলায় রোগীদের নিবন্ধন থেকে শুরু করে ওষুধ বিতরণের পাইলট প্রকল্প শুরু হয়েছিল। এখন ২০০টি উপজেলায় ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য একটি সুখের বিষয়’, যোগ করেন ডা. এস এম মোস্তফা।

তিনি বলেন, ‘উচ্চরক্ত চাপ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনেক কাজ করছে, তবে প্রচারের অভাবে সাধারণ মানুষ এ থেকে পুরোপুরি সুবিধা নিতে পারছেন না। এজন্য আরো বেশি মানুষকে জানানো দরকার। বিশেষ করে যারা এটির সুবিধা পাবেন, তাদের কাছে আরো ভালোভাবে কিভাবে পৌঁছানো যায়, সেটি আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য।’

তিনি আরও বলেন, উচ্চরক্তচাপ মাপতে বয়স ও ওজন অনুযায়ী কাফের সাইজ ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘মেজার ইয়োর ব্লাড প্রেশার অ্যাকিউরেটলি, কন্ট্রোল ইট, লিভ লঙ্গার। অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপ : সঠিকভাবে পরিমাপ করুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন, দীর্ঘদিন বাঁচুন।’ অনেক মোটা মানুষের জন্য স্বাভাবিক সাইজের কাফ দিয়ে মাপলে সঠিকভাবে উচ্চরক্তচাপ নির্ণয় করা যাবে না। এজন্য ভিন্ন ভিন্ন সাইজের কাফ ব্যবহার করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘অনেক চিকিৎসক যখন রোগী দেখেন তখন সে কি সিগারেট খাচ্ছে? কোলেস্টেরল আছে কিনা? পরীক্ষা করার সুযোগ থাকে না। তখন আপাতত চিকিৎসা দিয়ে দেওয়া হয়। তবে এখন থেকে আর এ রকম হবে না। কাকে, কীভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে, এসব প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে কথা হয়েছে।’

দেশব্যাপী চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হবে জানিয়ে এ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘সারাদেশে একই চিকিৎসা ও ওষুধ চলবে, ভিন্ন ভিন্ন নয়। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আমরা একই চিকিৎসা দিতে চাই। এজন্য গাইড লাইনে অল্প কয়েকটি ওষুধের নাম দেওয়া হয়েছে। যারা গরিব তারা বেশি ওষুধ কিনতে পারবে না। এজন্য এসেনসিয়াল ড্রাগ থেকে তিনিটি ওষুধকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।’

এ কার্ডিওলজিস্ট আরও বলেন, ‘যেসব রোগীরা হাসপাতালে আসে তাদেরকে চিকিৎসা দিবো, নাকি বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দিবো। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে যারা হাসপাতাল আসছেন, তাদেরকে আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি। একটু সুস্থ হলে অনেকে ওষুধ গ্রহণ বন্ধ করে দেন, এটি ঠিক নয়। চিকিৎসকের পরামর্শে যেভাবে ওষুধ শুরু করেছেন, ঠিক সেভাবে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ বন্ধ করতে হবে।’

সবাইকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে হবে না। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সেবা পাওয়া যাবে। তবে সমস্যা বেশি হলে তাদেরকে জেলা পর্যায়ে বা অন্য পর্যায়ে পাঠানো যেতে পারে। হাসপাতালে ওষুধ পাঠানো হয়েছে কিন্তু স্টোর কিপার চিকিৎসকদের বলেনি। কিছু জায়গায় এরকম ছোট ছোট সমস্যা আছে। আশা করি ভবিষ্যতে এগুলো থাকবে না, যোগ করেন  ডা. এস এম মোস্তফা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজের কর্মকৌশলকে এমনভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে, যাতে টেকসই এবং পলিটিক্যিাল কমিটমেন্ট থাকে। দীর্ঘমেয়াদে এটি স্থায়ী থাকে। অনেক সময় পলিসি বদলে যায়। নিরবিচ্ছিন্নভাবে ওষুধ সরবরাহ করতে হবে। যাতে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ওষুধের ঘাটতি না হয়। অনেক সময় দেখা যায়, ছোট একটি ব্লাড প্রেসার মেশিনের ঘাটতি থাকে বা নষ্ট হয়ে গেছে, ওষুধ যাচ্ছে  কিন্তু পাচ্ছে না। এসব সমস্যা দূর করতে হবে।’

প্রসঙ্গত, ‘বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০১৭-১৮’ অনুযায়ী- ২০১১ থেকে ২০১৭-১৮ সাল পর্যন্ত ৩৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এটি পুরুষের মধ্যে ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৪ শতাংশ এবং নারীর ক্ষেত্রে ৩২ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। জরিপে উঠে এসেছে-অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা রয়েছে এমন নারী ও পুরুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার হার যথাক্রমে ৪৯ শতাংশ ও ৪২ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক, বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক সমকাল পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন। 

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (এনসিডিসি) লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন। 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক