ডা. মোহাম্মদ নেয়ামত হোসেন

ডা. মোহাম্মদ নেয়ামত হোসেন

সহকারী অধ্যাপক, নিওনেটোলজী 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ, ফরিদপুর। 


২৩ অগাস্ট, ২০২১ ০৮:৫৮ পিএম

শিশুর সুস্বাস্থ্য গঠনে খাবারের ভূমিকা

শিশুর সুস্বাস্থ্য গঠনে খাবারের ভূমিকা
ছবি: সংগৃহীত

আমাদের বাচ্চাদের মস্তিষ্কের শতকরা ৯৫ ভাগ গঠন হয় প্রথম ৫ বছরে। বাকি ৫ ভাগ গঠন হয় পরের ৩ বছরে। তাই প্রথম ৮ বছর আপনার সন্তানের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এর ভিতর ৫ বছর বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ফলে এই সময়ে সবচেয়ে যত্নশীল থাকা উচিত। এই গঠন বলতে বুঝায় মস্তিষ্কের সংযোগ তৈরি হওয়া।

যার যত সংযোগ তৈরি হবে, সে ততো মেধাবি হবে। এই সংযোগ তৈরিতে রঙিন খেলনা, পুষ্টিকর খাবার, বাচ্চার সাথে খেলা করা, গল্প বলার মতো অনেক কিছু উপর নির্ভরশীল। কিন্তু আমাদের দেশে বাচ্চা কথা বলা শেখার আগেই, সবাই লাঠি নিয়ে বসে ঠিকমতো পড়ালেখা শিখছে তো?

খাবার

একসময় এদেশে বাচ্চাদের খাবারই ছিল, বার্লি আর সাগু। তখন বার্লি ফেইস বলে, একটা অপুষ্টির লক্ষণ দেখা যেত। বাচ্চা হতো মোটাতাজা, মা মনে করতো- বেশ ভাল স্বাস্থ্য হয়েছে। আজ সেই জায়গাটা নিয়েছে সুজি। সুজি হয় চালের গুড়া, নাহলে গমের। আবার এর সঙ্গে কোন না কোন দুধ মিশ্রিত করে, সাথে থাকে চিনি। অথচ এর সবগুলোই অপুষ্টির জন্য যথেষ্ট। কারণ গরীব হলে, গরুর দুধ মিশ্রিত করে। আর টাকা থাকলে ইনফ্যান্ট ফর্মুলা। অথচ বাচ্চার জন্য দুটোই ক্ষতিকারক।

ইনফ্যান্ট ফর্মুলাতে কোন কিছু মেশানো নিষেধ। আবার কোন চিকিৎসক লিখে দিলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমরা জানি সবসময়ই সুষম খাবার প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে খিচুড়ি হলো, বাচ্চার সুষম খাবার। অথচ মায়েদের তা বুঝানো কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাথে যোগ হয়েছে দাদা-দাদি, নানা-নানি।

মুরুব্বিদের ধারণা, তারাও তো বাচ্চা মানুষ করেছে, কখনো তো সমস্যা হয়নি। এর উত্তরে অনেক সময় বলি, দেশ যে মেধাবী জনসংখ্যার সংকটে ভুগছে, তা আপনাদের দান। জাপানে প্রথমিক স্কুলে কোন পরীক্ষা নেয় না। ওরা এই শৈশবের প্রাথমিক বিকাশের উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আর তাই সেরা মেধাবী ওইদেশে তৈরি হয়। তাঁরা আমাদের মতো লাঠি হাতে নিয়ে শিক্ষা দেয় না।

কেন খিচুড়ি সেরা?

আমরা সবাই বা অনেকেই জানি অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিড বলে, একটা শব্দ আছে। যা শরীর তৈরি করতে পারে না। ফলে বাইরের খাবার খেয়ে সেই অভাব পূরণ করতে হয়। একমাত্র খিচুড়িতেই সবগুলো পাওয়া সম্ভব। এদের মধ্যে চালে আটটি আর বাকিগুলো ডালে থাকে। ফলে চাল-ডাল একসঙ্গে থাকলেই শুধু সবগুলো অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিড পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও ডিমে এইসবগুলো অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে। ফলে বাচ্চার খাবার হওয়া উচিত:

১. মায়ের বুকের দুধ ২ বছর পর্যন্ত, এর বাইরে আর কোন দুধ নয়;

২. খিচুড়ি (চাল+ডাল+সয়াবিন বা অলিভ ওয়েল+সবজি);

৩. ডিম;

৪. মা যখন যা খাবেন- সেখান থেকে মাছ, মাংস, সবজি বাচ্চাকে দিবেন। (ফ্রেশ হতে হবে);

৫. সারাদিনে আঙ্গুর বাদে একবার ফল খাবে। বাচ্চা সকাল, দুপুর ও রাতে প্রচুর ফল খায়- এটাও ভাল লক্ষণ নয়। কারণ পেট ভরা থাকায়, অন্য প্রয়োজনীয় খাবার খাবে না।

সবশেষে মায়েদের বলি, আপনার সন্তান যদি পড়ালেখা নাও করে- শৈশবের প্রাথমিক বিকাশ ঠিক থাকলে, যদি সে রিকশা চালক হয়, তাবে সেরা রিক্সা চালক হবে। এমনকি চোর হলেও সেরা চোর হবে। তাই সবাইকে শৈশবের প্রাথমিক বিকাশের উপর সময় দিতে হবে। সঠিক খাবার নিশ্চিত করতে হবে। সুজি, গরু বা ছাগলের (২ বছর বয়স পর্যন্ত) দুধ খাওয়ানো বন্ধ করতে হবে। উল্লেখ্য, ছাগলের দুধে অতিরিক্ত অসুবিধা আছে। এতে বাচ্চাদের এক ধরনের রক্তশূন্যতা রোগ হয়।

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
‘ছেলেরা কেন পিছিয়ে, কারণ অনুসন্ধান করুন’

অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের গালমন্দ নয়: প্রধানমন্ত্রী

‘ছেলেরা কেন পিছিয়ে, কারণ অনুসন্ধান করুন’

অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের গালমন্দ নয়: প্রধানমন্ত্রী

  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত