০৪ জুলাই, ২০২৫ ০৪:১০ পিএম

বিএমএসএসের হৃদরোগ বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

বিএমএসএসের হৃদরোগ বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত
‘কার্ডিওকন: ব্রিজিং বেসিক টু বেডসাইড’ শীর্ষক কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা। ছবি: মেডিভয়েস।

মেডিভয়েস রিপোর্ট: মেডিকেল শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ ও ক্লিনিক্যাল দক্ষতা বৃদ্ধি করতে ‘কার্ডিওকন: ব্রিজিং বেসিক টু বেডসাইড’ শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্টস সোসাইটি (বিএমএসএস)। আজ শুক্রবার (৪ জুলাই) রাজধানীর বাংলামোটরে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে সংগঠনটির মেডিকেল শিক্ষা বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির (স্কোমি) উদ্যোগে এই কর্মশালা আয়োজিত হয়। সারাদেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের ১৩০ জন শিক্ষার্থী এতে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মুগদা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. মুস্তাফিজুর রহমান। এতে কি-নোট স্পিকার হিসেবে ‘ইন্টারেকটিভ কেইস-বেইজড লার্নিং: চেস্ট পেইন ইভ্যালুয়েশন’ শীর্ষক সেশন পরিচালনা করেন মুগদা মেডিকেল কলেজের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম জি আজম। এ ছাড়া ‘ইয়াং, ফিট, অ্যান্ড গন: দ্য মিস্ট্রি অব সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ’ শীর্ষক সেশন পরিচালনা করেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) ফেজ-বি রেসিডেন্ট (কার্ডিওলজি) ডা. শরীফুল হালিম। ‘ইসিজি লিড প্লেসমেন্ট অ্যান্ড কনফিগারেশন (১২-লিড ইসিজি), ব্লাড প্রেশার মেজারমেন্ট’ শীর্ষক সেশন পরিচালনা করেন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের (ডিজিএনএম) নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর ও মহাখালীর নার্স টিচার ট্রেনিং সেন্টারের শিক্ষক তাহমিনা আক্তার।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের কার্ডিওলজি বিষয়ে ক্লিনিক্যাল স্কিল অর্জনে সহায়তা করার লক্ষ্যে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজিত হয়। হৃদস্পন্দন শোনার (অস্কালটেশন) প্রক্রিয়া, পালস ও জেভিপি নিরীক্ষণ, রক্তচাপ মাপার কৌশল এবং অ্যারিদমিয়ার প্রাথমিক ধারণা ও জরুরি পরিস্থিতিতে করণীয়—ইত্যাদি বিষয় প্রশিক্ষণের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাত্ত্বিক সেশনের পাশাপাশি প্রশিক্ষকদের নেতৃত্বে প্র্যাকটিকাল সেশন এবং সিমুলেশনভিত্তিক শিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে মেডিকেল শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।

এ ছাড়া শুক্রবার এই কর্মশালার প্রথম ধাপের আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের কর্মশালা আগামী ৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।

বিএমএসএসের ন্যাশনাল অফিসার অন মেডিকেল এডুকেশন সামিউজ জামান মেডিভয়েসকে বলেন, ‘মানুষের কাছে স্বাস্থ্য সেবাকে সহজ করে তোলা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। আজকের আয়োজন ছিল একাডেমিক জীবনের বাইরে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা সহজ ও অংশগ্রহণমূলক করে তোলা। যা ক্লাসে শেখানো হতো, সেটিই আমরা এখানে শিখিয়েছি। তবে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা আনন্দের সঙ্গে বিষয়টি শিখেছে।’

তিনি বলেন, ‘একটি ক্লাসে ৭০-৮০ জন শিক্ষার্থী থাকে। আমাদের ফোকাসটা হচ্ছে সবাই যেন হাতে-কলমে শিক্ষাটা পায়। বাংলাদেশের স্ট্রোকের একটি উচ্চ হার রয়েছে। ক্লাসে সব সময় হাতে-কলমে শেখা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এজন্য আমাদের আয়োজন।’

স্কোমির লিয়াজোঁ অফিসার ফারিয়া তাসনীম মেডিভয়েসকে বলেন, ‘আমাদের আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে—ভবিষ্যত চিকিৎসকদের যেন দক্ষ ও পরিপূর্ণ চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। একাডেমিক জীবনের বাইরেও জ্ঞান অর্জন এবং হাতে-কলমে শিক্ষা যেন অর্জন করা যায়, সে লক্ষ্যেই আমরা আয়োজন করে থাকি। কলেজে আমরা বিস্তৃত জ্ঞান অর্জন করতে পারি, তবে কিছু গ্যাপ থেকে যায়, সেগুলো পূরণ করা এবং আরও দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে আমরা অনুষ্ঠান করি।’

কর্মশালায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া মিথিলা মেডিভয়েসকে বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বক্ষব্যাধির ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট কিভাবে করবো, সেটি আমরা শিখেছি। আমি মনে করি, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ছিল, যা আমাদের অ্যাডভান্স লার্নিং হিসেবেও কাজ করবে। কলেজে অনেক সময় শেখার উদ্দেশ্য থাকে পরীক্ষায় পাস করা, কিন্তু এখানে আমরা নিজ থেকে শেখার জন্যই এসেছি।’

একই মেডিকেলের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাফিসা নাওয়াজ মুসকান মেডিভয়েসকে বলেন, ‘কলেজে শিখতে গেলে আমরা আইটেম নিয়ে অনেক বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ি। প্র্যাকটিক্যালের চেয়ে থিওরিতে আমাদের মনোযোগ বেশি থাকে। কিন্তু এখানে একটি অংশগ্রহণমূলক আয়োজন ছিল। আইটেম দিতে হয়নি, তাই ভালো লেগেছে জিনিসটা।’

মুগদা মেডিকেল কলেজের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম জি আজম মেডিভয়েসকে বলেন, ‘আমি মনে করি, এটি অত্যন্ত ইম্প্যাক্টফুল অনুষ্ঠান। তারা যেটি শিখবে, সেটিকে ব্যবহারিক জীবনে কিভাবে প্রয়োগ করবে, তার উপরেই আজকে আলোচনা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি আমার অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বক্ষব্যাধির বিবর্তনের ধারা তাদের সামনে তুলে ধরেছি। বক্ষব্যাধি আসার সাথে সাথে তারা কিভাবে চিন্তা করবে, কী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে এবং কত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করবে—সে বিষয়ে তারা সরাসরি অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে অংশ নিয়েছে।’

এই ধরনের ‘মাইক্রো সাবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম’ আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সিলেবাসের বাইরে অনেক জ্ঞান অর্জন করতে পারে। তিনি এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের আহ্বান জানান।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্টস সোসাইটি (বিএমএসএস) একটি অলাভজনক, স্বেচ্ছাসেবী ও দেশের সবচেয়ে বড় মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সংগঠন। এটি ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব মেডিকেল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (আইএফএমএসএ) জাতীয় সদস্য সংগঠন। এ ছাড়া এ সংগঠন জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকারের সাথেও কাজ করে।

দেশের ৬০টি মেডিকেল কলেজে লোকাল কমিটি রয়েছে বিএমএসএসের। ১০০টি মেডিকেল কলেজে ২০ হাজারেরও বেশি সদস্য রয়েছে সংগঠনটির। এটি বাংলাদেশ সরকারের রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের অধীনে নিবন্ধিত।

এনএআর/

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
স্বাস্থ্যের সকল প্রকল্প মূল কার্যক্রমে নিয়ে আসার পরিকল্পনা

সেক্টর কর্মসূচি ছাড়াই স্বাস্থ্যের এক বছর, ২৫ হাজার কর্মীর চাকরি অনিশ্চয়তায়

  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত