কুষ্টিয়ায় গাইনি বিশেষজ্ঞের উপর হামলা: নিন্দা জানিয়ে বিএনপির বিবৃতি

মেডিভয়েস রিপোর্ট: চিকিৎসকদের জন্য নিরাপদ কর্মস্থলের ব্যবস্থা না করলে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম। চিকিৎসক নির্যাতনের বিচার নিশ্চিত করার দাবিও জানিয়েছেন তিনি। আজ মঙ্গলবার (৬ মে) কুষ্টিয়ার লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের গাইনি চিকিৎসক ডা. শারমিন সুলতানার উপর হামলার ঘটনায় দেয়া এক বিবৃতিতে এসব মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মুহম্মদ মুনির হোসেন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে ডা. শারমিনের উপর হামলার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছেন ডা. রফিকুল ইসলাম।
এর আগে গতকাল সোমবার (৫ মে) জেলা শহরের কোর্টপাড়া এলাকার লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখার সময় হামলার শিকার হন ডা. শারমিন সুলতানা। এ সময় ছয়-সাতজন নারী তাকে টেনে-হিঁচড়ে রাস্তায় নামিয়ে নিয়ে আসে। ইতোমধ্যে হামলার কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ডা. শারমিনের স্বামী মাসুদ রানা জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক।
বিবৃতিতে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি অপরাধ ও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়। অতীতে বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসকরা নানাভাবে কর্মস্থলে হয়রানি ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, কিন্তু তারপরও কোনো ধরনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির দেখা যায়নি। ফলে একের পর এক চিকিৎসক লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেই চলেছে।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর সারা দেশে ধারাবাহিকভাবে চিকিৎসক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সবার প্রত্যাশা ছিল এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এসব ঘটনায় কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।
ডা. শারমিন সুলতানার উপর হামলার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো ধরনের তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই সন্দেহমূলক অভিযোগের ভিত্তিতে দিনে-দুপুরে নিজ চেম্বার থেকে ডা. শারমিন সুলতানাকে অপহরণের চেষ্টা চালানো হয়। তাকে মারাত্মকভাবে জখমও করা হয়। তাকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসা তার স্বামী ডা. মুহাম্মদ মাসুদ রানা, ড্রাইভার ও ম্যানেজারকেও দুষ্কৃতিকারীরা পিটিয়ে আহত করে। ছিনতাই করা হয় তাদের সঙ্গে থাকা নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী।
‘এ ধরনের মব জাস্টিস যে কোনো সভ্য সমাজের জন্য হুমকি’ উল্লেখ করে ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, স্বাধীন একটি দেশে দিনে-দুপুরে একজন চিকিৎসক দম্পতির ওপর এমন ন্যাক্কারজনক হামলা আমাদের শুধু লজ্জিতই করে না, বরং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থার দিকেও ইঙ্গিত করে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং আক্রান্ত চিকিৎসক পরিবারকে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অতিসত্বর দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। অতীতে ঘটে যাওয়া সকল চিকিৎসক নির্যাতনের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসকদের জন্য নিরাপদ কর্মস্থলের ব্যবস্থা না করা হলে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়।’
এদিকে আক্রান্ত নারী চিকিৎসকের স্বামী কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মাসুদ রানার অভিযোগ, কোন একটি কু-চক্রী মহলের ইন্ধনে পরিকল্পিতভাবে ডা. শারমিনের উপর এই হামলা করা হয়েছে। হামলাকারীরা যেসব অভিযোগ দিচ্ছে তার কোনো ভিত্তি নেই। তাকে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে কুষ্টিয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোশাররফ হোসেন মেডিভয়েসকে বলেন, ভুক্তভোগী নারী চিকিৎসককে অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ তুলে মারধর করা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে থানায় কেউ কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে ভুক্তভোগী চিকিৎসক এখন থানায় এসেছেন অভিযোগ দায়ের করতে। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিব।
টিআই/এনএআর/
