০৮ মে, ২০২৩ ০৮:১৭ পিএম

নার্স দম্পতিকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ: মিডওয়াইফারি কাউন্সিল ও বিএনএ’র পাল্টাপাল্টি

নার্স দম্পতিকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ: মিডওয়াইফারি কাউন্সিল ও বিএনএ’র পাল্টাপাল্টি
নিয়মানুযায়ী নার্সিং রেজিস্ট্রেশন কার্ড একজন নার্সের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, তাই সরাসরি স্বত্বাধিকারীর নিকটই তা হস্তান্তরের নিয়ম রয়েছে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের।

মেডিভয়েস রিপোর্ট: বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশনের (বিএনএ) কোষাধ্যক্ষ ও রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স আনন্দ কুমার দাস এবং একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তার স্ত্রী সুজলা রানী রায়কে ৯ ঘণ্টা আটক রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগকে মিথ্যা এবং নার্স আনন্দ কুমার মিডওয়াইফারি কাউন্সিলে কর্মরত এক কর্মকর্তাকে লাথি মেরেছেন বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিএনএ সভাপতি খাঁন মো. গোলাম মোরশেদ বলেন, ‘গত ৩ মে (বুধবার) পেশাগত নিবন্ধন নবায়ন পূর্বক উত্তোলন করতে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলে যান নার্স আনন্দ কুমার ও তার স্ত্রী। এ সময় আনুমানিক বেলা ২টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা তাদেরকে কাউন্সিল অফিসে আটকে রাখা হয়। রেজিস্টার রাশিদা আক্তারের (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নেতৃত্বে কর্মচারীরা আনন্দ কুমার ও তার স্ত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে শারিরিক এবং মানসিক নির্যাতন করে। ঘটনার স্থলে উপস্থিত হয়ে বিস্তারিত জানতে চান গোলাম মোরশেদ। এ সময় তিনি নার্সিং কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার রাশিদা আক্তারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বারবার অনুরোধ করেন তাদের (আনন্দ কুমার ও তার স্ত্রী) ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন না করে ছেড়ে দেওয়ার জন্য।’

বিএনএ সভাপতি বলেন, ‘নার্সিং কাউন্সিলের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, বিদ্বেষপ্রসূত ও দুরভিসন্ধিমূলকভাবে আনন্দ কুমার দাসের ওপর পর্যায়ক্রমে আক্রমণ চালায়। এক পর্যায়ে অলোক কুমার দাস নামের প্রশাসনিক এক কর্মকর্তা আনন্দ কুমার দাসকে পিছন থেকে জাপটে ধরে এবং অন্যান্য কর্মচারীগণ তার গলা চেপে ধরে শ্বাসরুদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালায়। এ সময় আনন্দ কুমার দাসের স্ত্রী সুজলা রানী রায় স্বামীকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসলে, তার উপরেও শারীরিকভাবে নির্যাতন চালায় এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। তাৎক্ষণিকভাবে সংগঠনের পক্ষ থেকে ঘটনাটি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর এর পরিচালক (প্রশাসন) মো. নাসির উদ্দিনকে ফোন করে অবগত করি।’

তিনি আর বলেন, ‘নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ আনন্দ কুমার দাস ও তার স্ত্রী সুজলা রানীর বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আমার নিকট উপস্থাপন করেন, আমি কাউন্সিল কর্তৃপক্ষকে সিসিটিভি ক্যামেরার রেকর্ড দেখানোর জন্য বারবার অনুরোধ করি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাকে সিসিটিভি ফুটেজ না দেখিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। পরবর্তীতে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (শিক্ষা ও শৃংখলা) রশিদুল মান্নাফ কবীর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং আনন্দ কুমার দাস ও সুজলা রানী রায়কে তাদের দুর্ধর্ষ আক্রমণ থেকে অবমুক্ত করে হাসপাতালে পাঠান।’

আনন্দ কুমার দাসের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি হতে পরামর্শ দেন এবং সুজলা রানী রায়কে চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে ওই রাতেই শাহবাগ থানায় ছয়জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

গোলাম মোরশেদ আরও বলেন, ‘এই ঘটনায় তারা তাৎক্ষণিকভাবে সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ এডিটিং ও কিছু অংশ বাদ দেওয়ার কাজে লিপ্ত ছিল। শুধু তাই নয়, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের আইটি শাখার সহকারী প্রোগ্রামার মো. মুরাদ শিকদার ও উচ্চমান সহকারী মো. হাসান আল মিজান এই বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর তথ্য সম্বলিত একটি পোস্ট করেন। যেহেতু কাউন্সিল তথ্য প্রকাশ করার জন্য কখনও কাউকে মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেননি। তাই তাদের এই ধরণের কর্মকাণ্ড ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’

‘আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, গত ৪ মে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর আনন্দ কুমার দাসকে অভিযুক্ত করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিতে শাহবাগ থানায় দাখিলকৃত অভিযোগের অজ্ঞাতনামা আসামিদের মধ্যে একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার নিলুফার ইয়াসমিনকেও রাখা হয়েছে। এমন পক্ষপাতমূলক কর্মকাণ্ডের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল উল্লেখিত অফিস আদেশ, যেখানে তদন্তের পূর্বেই ভুক্তভোগীকে অভিযুক্ত করা হয়-যা অত্যন্ত দুঃখজনক, নিন্দনীয় ও ঘৃণিত কাজ।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্টাফদেরকে রক্ষায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের নার্সিং কর্মকর্তাকে তদন্তের পূর্বেই অভিযুক্ত করা কোনক্রমেই বিধি সম্মত নয়। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, এই বেআইনি কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে ওই রাতে বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকগণকে রেজিস্ট্রার রাশিদা আক্তার ঘটনার কথা অস্বিকার করে বলেন, কাউন্সিলে এই ধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। এটি কাউন্সিলের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা কর্তৃক মিথ্যাচারের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ, যোগ করেন বিএনএ সভাপতি।’

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের বক্তব্য

এক বিবৃতিতে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল জানায়, ‘আনন্দ কুমার দাস ও সুজেলা রানী রায়কে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ মিথ্যা। প্রকৃত ঘটনা হলো বুধবার (৩ মে) আনুমানিক বিকাল ৩ টায় আনন্দ কুমার দাস তার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে স্ত্রীর পুন: নবায়নকৃত রেজিষ্ট্রেশন কার্ড সংগ্রহের জন্য কাউন্সিলে উপস্থিত হন। এ সময় কাউন্সিলে সেবা নিতে আসা অন্যান্য নার্সদের সাথে শৃঙ্খলাবদ্ধ না থেকে সাংগঠনিক ক্ষমতা বলে সরাসরি অফিসের রিসিপশন কক্ষের মূল ফটকে প্রবেশ করেন। তখন ব্যাংক রশিদের প্রিন্টের তারিখ এবং ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার তারিখের গরমিল থাকায় আবেদনের তারিখ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। তিনি উত্তর দিতে অপারগ হন। তখন দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি তার সাথে কথা না বলে, আবদনকারীর সাথে নির্দিষ্ট তারিখ জানতে চাওয়ার বিষয়ে কথা বলতে চাইলে, আনন্দ উত্তেজিত হয়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তার সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে অন্যান্য কর্মকর্তার সামনেই তাকে লাথিও মারেন আনন্দ কুমার দাস।’

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘নিয়মানুযায়ী নার্সিং রেজিষ্ট্রেশন কার্ড একজন নার্সের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, তাই সরাসরি স্বত্বাধিকারীর নিকটই তা হস্তান্তরের নিয়ম রয়েছে। আনন্দকে তার স্ত্রীর রেজিষ্ট্রেশন কার্ড দিতে না চাওয়ায় ওই কর্মকর্তার দিকে তেড়ে আসেনতিনি এবং হামলার হুমকি দেন। এতে উপস্থিত ব্যক্তিরা আনন্দকে শান্ত হতে বলেন এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তার কক্ষে নিয়ে বসার ব্যবস্থা করেন। বিষয়টি অস্বাভাবিক এবং পূর্বপরিকল্পিত বুঝতে পেরে ভূক্তভোগী ওই কর্মকর্তা শান্ত থাকেন এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন।’

নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল থেকে আরো জানানো হয়, ‘আনন্দের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে এমন সন্দেহ করে ঘটনাটির কিছু সময় পরে তার স্ত্রী প্রশাসনিক কর্মকর্তার কক্ষে প্রবেশ করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে আনন্দ প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা বিনষ্টের কথা স্বীকার করেন, কিন্তু পরক্ষণে ফোনে বিভিন্ন ব্যক্তিদের সাথে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে তাকে জিম্মি করে রাখার অভিযোগ তোলেন। কিছু সময়ের মধ্যেই তার কথিত সংগঠন বিএনএ সভাপতি গোলাম মোর্শেদ কাউন্সিলে প্রশাসনিক কর্মকর্তার কক্ষে উপস্থিত হন। গোলাম মোর্শেদ জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত রয়েছেন। সর্বোচ্চ কর্মকর্তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি হেনস্তার শিকার ব্যাক্তিকে আড়ালে নিয়ে বিষয়টি সুরাহা করার জন্য আর্থিক প্রলোভন দেখান। বিষয়টি প্রশাসনিক কর্মকর্তার কানে গেলে, তিনি গোলাম মোর্শেদকে তার কর্মস্থল রেখে ঢাকায় অবস্থানের ব্যাপারে জানতে চাইলে কোনো জবাব না দিয়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে পড়েন গোলাম মোর্শেদ। পরে বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক ব্যাক্তিদের ফোন করে ডেকে এনে কাউন্সিলের মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল কর্মকর্তাদের অফিস কক্ষে জিম্মি করে রাখেন বিএনএ সভাপতি।’

অনুমানিক রাত ৯ টার দিকে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের পরিচালক রাশেদুল মান্নফ কবির কাউন্সিলের অন্যান্য কর্মকর্তা ও ভুক্তভোগীর সাথে আলোচনা করে আনন্দকে তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইতে বলেন এবং তার বিরুদ্ধে কোন আইনগত পদক্ষেপ না নেয়ার কথা বলার পরে গোলাম মোর্শেদ তার দলবল নিয়ে কাউন্সিল ত্যাগ করেন বলে জানায় নাসিং কাউন্সিল।

এএইচ/এমইউ

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : বাংলাদেশ নার্সি ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত