ডা. মো. আনোয়ার উল্লাহ

ডা. মো. আনোয়ার উল্লাহ

ডেপুটি সিভিল সার্জন (ওএসডি), স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তর।


১৩ নভেম্বর, ২০২২ ০৫:৫৬ পিএম

কোর্টে সাক্ষী

কোর্টে সাক্ষী
সাক্ষী দেওয়ার সময় আমি দেখেছি, বিচারক মহোদয় চিকিৎসকের প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক থাকেন।

ফরেনসিক মেডিসিন ব্যতীত আমরা বেশির ভাগ সরকারি চিকিৎসকই কোর্টে সমন বা সাক্ষীর কথা শুনলে কিছুটা দুশ্চিন্তা অনুভব করি। স্বাভাবিকভাবে উপজেলা বা জেলা হাসপাতালে বিভিন্ন পদে চাকরি করলে সাধারণত ফিজিক্যাল অ্যাসাল্ট কেস (Physical Assault Case) এ মেডিকেল সার্টিফিকেট দিতে হয়। এর মধ্যে যেগুলো মামলা হয়, সেসব কিছু কেস কোর্টে সাক্ষী দেওয়ার জন্য ‘সমন’ আসে।

যদিও মেডিকেল কলেজে তৃতীয় বর্ষেই আমরা সমন কি, কিভাবে সমনে রেসপন্স করতে হয় সেগুলো পড়ে থাকি। আমি যাদেরকে ইউএইচএফপিও (UHFPO) পেয়েছিলাম, সেসব স্যারদের বেশিরভাগই কোর্টে সাক্ষী নিয়ে খুব তিক্ত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছিলেন। তারা ইতোমধ্যে অবসরে গেছেন।

আমি আমার ছোট্ট চাকরি জীবনে যে কয়বার সাক্ষী দিতে গিয়েছি, আমার অভিজ্ঞতা ইতিবাচক। গতকাল আমি দীর্ঘদিন পর কোর্টে গিয়েছিলাম। রাজধানী থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দূরে। বেশ কয়েকটি সমন জমা হয়ে গিয়েছিল।

সাধারণত, সরকারি কাজে গেলে আমি কয়েকদিন আগেই এনডিসির সাথে যোগাযোগ করে সার্কিট হাউসে রুম রেখে দেই। নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে কর্মস্থল ত্যাগের অনুমতি নিতে হয়।

সমন ডাকে বা কুরিয়ারে রিসিভ করা

সমন হাতে পেতেই হবে এমনটা নয়। এখনকার সময়ে সমন মেইল, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে পাঠালেও পেয়েছেন বলেই কোর্ট ধরে নেয়।

কোর্টে হাজির হওয়া

আমি ব্যক্তিগতভাবে সকাল আটটার মধ্যেই কোর্টে চলে যাই। আমি যতবারই গিয়েছি সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেট বা জর্জের  রুমে গিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে নেই। এ যাবত আমি যতবারই গিয়েছি, যথেষ্ট আন্তরিক ব্যবহার ও আপ্যায়ন পেয়েছি। ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয় নিজেই পেশকারকে দিয়ে নথি এনে দেন, তখন যথেষ্ট সময় নিয়ে অনেক বছর আগে দেওয়া নিজের মেডিকেল সার্টিফিকেটও দেখে নেওয়া যায়।

প্রায় প্রতিবারই উনাদের বক্তব্য অনেকটা এমন ‘আমি এজলাসে উঠলে তারপর আমার সহকারী আপনাকে ডাকবে। সবার আগে আপনার সাক্ষী নেওয়া হবে। এখানে চিকিৎসকদের সময় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। খুব জরুরী না হলে আপনাদের ডাকতে চাই না।’

সাক্ষী দেওয়ার সময় আমি দেখেছি, বিচারক মহোদয় চিকিৎসকের প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক থাকেন। দু’একবার মনে আছে, বিচারক মহোদয় উকিল সাহেবকে দমক দিয়েছেন অপ্রাসঙ্গিক জেরার জন্য।

হাজির না হলে

আমার ব্যক্তিগত বা অফিসিয়াল কোন সমস্যায় নির্ধারিত তারিখে যেতে না পারলে যোগাযোগ করে অনুরোধ করলে পরবর্তী তারিখ দিয়েছেন। তবে অবগত ছাড়া দীর্ঘদিন হাজির না হলে কোর্ট পেনাল কোডের ১৮৮ ধারায় মামলা রুজু করতে পারে। যেটার মূল কথা ‘Disobedience to Court’.

খরচ

সাক্ষী দিয়ে নামার সাথে সাথেই একটা কোর্ট সার্টিফিকেট দিয়ে দেয়, যেটা বিল করার সময় দরকার হয়।

সর্বশেষ

ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে, মিথ্যা মেডিকেল সার্টিফিকেট না দিলে একটু আত্মবিশ্বাসী হলে, একটু কমিউনিকেশন করে নিলে সাক্ষী দিতে গেলে তিক্ত অভিজ্ঞতা বা দুশ্চিন্তার কারণ দেখি না। উপরন্তু দীর্ঘদিন পর পুরনো কর্মস্থল দেখাও হলো সরকারি কাজও হলো। সমগোত্রীয় চিকিৎসকদের তুলনায় বিচারকদের আমার নিকট যথেষ্ঠ আন্তরিকই মনে হয়েছে।

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত