ডা. সুরেশ তুলসান

ডা. সুরেশ তুলসান

সহকারী অধ্যাপক (সার্জারি), কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ।


০৮ নভেম্বর, ২০২২ ১০:৩৪ এএম

দালাল যখন রোগীর স্বজন

দালাল যখন রোগীর স্বজন
প্রতীকী ছবি।

একজন পঞ্চাশোর্ধ্ব হত দরিদ্র মহিলা রোগী এসেছেন মলদ্বারের সমস্যা নিয়ে। অস্ত্রোপচার করতে হবে। রোগীর সঙ্গে আসা বেশ কয়েকজন স্বজনের মধ্যে একজন ছেলেকে কিছুটা স্মার্ট এবং লেখাপড়া জানা মনে হলো। সেই মূলত কথা বলছিল। সম্পর্কে কি হয় জানতে চাইলে রোগী জানালেন, সে তার নাতি ছেলে।

রোগী দেখা হয়ে গেলে অপারেশনের খরচের বিষয়ে আলাপ করতে সবাইকে বাইরে রেখে ছেলেটি আবার চেম্বারে ঢুকলো। বললাম, এই অপারেশনে সাধারণত ২৫-৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে রোগী যেহেতু গরিব, সেহেতু আমি তাকে সব মিলিয়ে একটা হিসাব দিলাম, যে ওই ক্লিনিকে করালে ওষুধ, শয্যা ও অপারেশন সব মিলিয়ে ১৩ হাজার টাকা খরচ হবে।

পরে তারা অন্য একটি ক্লিনিকে ভর্তি করলে আমি রোগীর অপারেশন যথারীতি করে দেই। ক্লিনিক থেকে তখনও আমার অপারেশনের বিল পাইনি, তার আগেই রোগী ফলো-আপে এসে হাজির। কৌতুহল মেটাতে জানতে চাইলাম, ওই ক্লিনিকে বিল নিয়েছে কত? রোগীর জানালো, ২৭ হাজার টাকা।

রোগীর মেয়ের কাছে জানতে চাইলাম, এই ২৭ হাজার টাকা তারা কার হাতে দিয়েছে? বললেন, তাদের সেই নাতি ছেলের হাতে। নাতি ছেলে আরও বলেছে, ডাক্তার এই টাকার কম নিবে না। বিল আরও বেশি নেয়, সে নাকি বলেকয়ে কিছুটা কমিয়েছে। আরও বলেছে এই ডাক্তারের দয়ামায়া নেই, বেশি কথা বলা যায় না, কম নিতে বললে রাগ করবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।

সাথে সাথেই ক্লিনিকের ম্যানেজারকে ফোন করে জানতে চাইলাম এদের বিল কত নিয়েছেন? উত্তর এলো, ১৬ হাজার টাকা এবং জমা দিয়েছে রোগীর নাতি ছেলে। ফোন লাউড স্পিকারেই দেওয়া ছিল। আমার ও ক্লিনিকের ম্যানেজারের কথোপকথন রোগীর মেয়ে পুরাটাই শুনলেন, আর অতি বিস্ময়ে ভাবতে থাকলেন, তাহলে বাকি ১১ হাজার টাকা গেল কোথায়!

আর আমি ভাবছি, ব্যাপারটাকে দালালি বলবো না প্রতারণা বলবো? 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত