ডা. রেজওয়ানুল ইসলাম মাকসুদ
মেডিকেল অফিসার (ইনডোর),
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বোরহানউদ্দিন, ভোলা
১৮ অগাস্ট, ২০২২ ১১:২১ এএম
পেটে-বুকে জ্বালাপোড়া মানেই গ্যাস্ট্রিক?
দৃশ্যপট-১: ডাক্তার রাজীব রোগীকে প্রেসক্রিপশন করে দিলেন। রোগী ওষুধ কেনার সময় ফার্মেসির লোককে জিজ্ঞেস করলো, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দিতেই ভুলে গেছে?
দৃশ্যপট-২: ডাক্তার সাদী রোগীর কাছে জানতে চাইলেন, আর কোনো সমস্যা আছে? রোগী জানালেন, স্যার গেস্ট্রিক তো আছেই!
দৃশ্যপট-৩: চিকিৎসা প্রদানের কিছুক্ষণ পর রোগী প্রেসক্রিপশন নিয়ে ডা. মাহীরের রুমে ফিরে এসেছেন। জানালেন, আমি প্রতিদিন দুই বেলা সার্জেল ৪০ খাই। এতেও কাজ হয় না, আর আপনি কেবল ২০ দিলেন? ধরবো না স্যার।
উপরোক্ত পরিস্থিতিগুলোর সম্মুখীন হননি—এমন চিকিৎসক খুঁজে পাওয়া কঠিন।
গ্যাস্ট্রিক সবারই আছে, কেননা গ্যাস্ট্রিক শব্দের অর্থ পাকস্থলী। তবে সেই পাকস্থলীতে ঘা বা আলসার কয়জনের আছে? পেটে বা বুকে জ্বালাপোড়া মানেই কি পেপটিক আলসার বা অতি পরিচিত গ্যাস্ট্রিক?
আমাদের বুক ও পেট জ্বালাপোড়ার অন্যতম কারণ কিন্তু গ্যাস্ট্রোইসুফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD), যেখানে পাকস্থলীর এসিড উপরের খাদ্যনালীতে উঠে আসে। এর বিভিন্ন কারণ আছে।
তবে এর জন্য অন্যতম দায়ী আমাদের খাদ্যাভ্যাস। সাথে আছে ফাংশনাল ডিসপেপসিয়া, যেখানে কার্যত খাদ্যনালীতে কোনো সমস্যা থাকে না, মানসিক সমস্যাই মূল। এ ছাড়া অনেকেই হৃদযন্ত্রের ব্যথাকেও গ্যাস্ট্রিক মনে করে ওষুধ খেতে থাকেন। আলসারের টেস্ট করা ছাড়াই মানুষজন একে অন্যের কথা শুনে ভাবতে থাকে, তার আলসার হয়েছে।
আর আলসার হলে তার জন্য গেস্ট্রিকের ওষুধের ডোজ কি? বাজারে অনেকগুলো প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (সচরাচর জনপ্রিয় গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ) পাওয়া যায়, যেমন: ওমিপ্রাজল, ইসুমিপ্রাজল, পেন্টোপ্রাজল, রেবিপ্রাজল, ডেক্সলেন্সোপ্রাজল। এগুলোর ডোজ প্রায়শই ২০ মি.গ্রা. ডেইলি থেকে ৪০ মি.গ্রা. ডেইলি। কিন্তু সবাই দেখা যায়, কোনো প্রেসক্রিপশন ছাড়াই প্রতিদিন ৮০ মি.গ্রা. করে ওষুধ খেয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে।
দীর্ঘদিন এই গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়া কি নিরাপদ?
উত্তর: না। পিপিই দীর্ঘদিন খেলে বেশ কিছু সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে বয়স্ক নারীদের হাড় ক্ষয়ের ফলে হিপ ফ্রেকচারের আশঙ্কা বেড়ে যায়। এ ছাড়াও দার্ঘদিন এ ধরনের ওষুধ খাওয়ার কারণে শরীরে ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন -বি১২ এর স্বল্পতা দেখা যেতে পারে। নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে কিডনিতেও সমস্যা হতে দেখা গিয়েছে। কোনো কোনো গবেষণায় পাকস্হলির ক্যান্সার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথাও বলা হয়েছে, যদিও তা সুপ্রতিষ্ঠিত নয়।
সুতরাং গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়া কোনো গৌরবের বিষয় নয়, এবং যে কোনো ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।