ডা. মো. আহাদ হোসেন

ডা. মো. আহাদ হোসেন

এমবিবিএস, বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ

বিসিএস, এমডি (অ্যানেস্থেসিয়া, পেইন ও ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন)

কনসালটেন্ট ও ব্যথা বিশেষজ্ঞ


১৬ জুন, ২০২২ ০৮:৪৬ পিএম

ডিপ্লোমা, এমডি, এফসিপিএস কোন ডিগ্রি করা উচিত এবং কেন?

ডিপ্লোমা, এমডি, এফসিপিএস কোন ডিগ্রি করা উচিত এবং কেন?
এমবিবিএস পাস করার পর পরিবার ও পারিপার্শ্বিকতায় উপার্জন বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে নিজেকে আরও বেশি পরিশ্রমী করে তুলতে হবে, যেন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নিজেকে জায়গা করে নিতে পারেন।

আজকের লেখাটি মূলত নবীন চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে। মেডিকেল কলেজে পোস্ট গ্রাজুয়েশন এখন সময়ের দাবি। আমাদের দেশে চিকিৎসকের সংখ্যা যেমন বেড়ে চলেছে, একই সাথে মেডিকেল বিষয়ে স্পেশালিটির সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। শুধু সাব-স্পেশালিটি নয়, অনেক বিষয় এখন আনুষ্ঠানিকভাবে সাব-স্পেশালিটি ভাগ না হলেও প্র্যাকটিক্যালি বিষয়টি বিভিন্ন অংশ আলাদাভাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এ সকল উন্নতি মূলত বিশ্বের সাথে মেডিকেল বিষয়ের উন্নতির ধারাবাহিকতা।

আজ থেকে ১০ বছর আগে যেমন কেউ পাস করলে একটি পোস্ট গ্রাজুয়েশন, হোক সেটি সার্জারি, মেডিসিন অথবা গাইনি এই তিনটি বিষয়ের সাথেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন শুধু এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সার্জারির অনেক বিভাগ রয়েছে, সে সকল বিভাগে যেমন সরাসরি এমএস রয়েছে। একই সাথে মেডিসিন ও গাইনির বিষয়ে অনেক ভাগ রয়েছে, যেগুলোতে আলাদাভাবে এমএস ও কিছু কিছু বিষয়ে এফসিপিএস চালু হয়েছে। শুধু তাই নয়, কোন কোন বিষয়ে সাব-স্পেশালিটি না হলেও ফেলোশিপ প্রশিক্ষণ চালু হয়েছে। যে সকল বিষয়ে ফেলোশিপ প্রশিক্ষণ চালু হয়েছে, সেগুলো পরবর্তীতে আলাদা বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। এ বিষয়গুলো আজকে এই লেখায় নিয়ে আসার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের যারা নবীন চিকিৎসক, তারা অনেক সময় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, আমি এমএস, এমডি নাকি এফসিপিএস অথবা ডিপ্লোমা কোন বিষয়ের জন্য পড়ালেখা করবো।

ডিপ্লোমা মূলত কিছু কিছু বড় বড় পোস্ট গ্রাজুয়েশন বিষয়ের সাথে রয়েছে। যেমন- কার্ডিওলজি, শিশু, অ্যানেস্থিসিওলজি, অ্যান্ডোক্রাইনোলজি, বক্ষব্যাধি, অর্থোপেডিক। এ সকল বিষয়ে অনেকেই পরীক্ষা দেওয়া মাত্রই সফল হন এবং ডিগ্রি শুরু করে দেন। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে এবং মেডিকেল বিষয়ের অগ্রগতির অবস্থা বিবেচনা করলে এ সকল বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রিতে ঢুকে কয়েকটি সমস্যা তৈরি হতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম যারা ডিপ্লোমা পাস করে প্র্যাকটিস শুরু করে দেন, তারা পরবর্তীতে বড় ডিগ্রি এফসিপিএস, এমডি, এমএস এই সকল পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রির প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।

অনেক ক্ষেত্রে অনেকটা সময় পার হয়ে যায়, বিভিন্ন কারণে। তখন আর হয়ে ওঠে না, নতুন কোন ডিগ্রিতে ঢোকার জন্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার। কিন্তু পরবর্তী সময়ের অবস্থা বিবেচনা করলে বা আজ থেকে আরও দশ বছর পরের অবস্থা বিবেচনা করলে প্রকৃতপক্ষে ডিপ্লোমা ডিগ্রি শেষ করে আপনি আরও একটি নতুন হতাশায় পড়ে যেতে পারেন। একদিকে যেমন পোস্ট গ্রাজুয়েশনে ঢোকার সময় শেষ হয়ে যায়। আরেকদিকে ব্যক্তিগত অনেক কারণে পোস্ট গ্রাজুয়েশন ঢোকা হয়ে ওঠে না। কিন্তু আপনি যখন আপনার আশেপাশে এই বিষয়ে অনেক এমডি, এমএস বা এফসিপিএস ডিগ্রিধারী চিকিৎসককে দেখেন, তখন আপনার মনে একটু দুর্বলতা তৈরি হতে পারে।

এছাড়াও কিছু কিছু বিষয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েশনের পরবর্তী ফেলোশিপ প্রশিক্ষণের বিষয়ে আবেদনের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলতে পারেন। এ সকল কারণ বিবেচনা করলে নতুন চিকিৎসক যারা পোস্ট গ্রাজুয়েশনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। তাদের জন্য বলবো, একটু কষ্ট হলেও বা পরিশ্রম হলেও আপনি এমডি, এমএস বা এফসিপিএসের দিকে ধাবিত হতে পারে। কোন কারণে যদি আপনি ডিপ্লোমাতে ঢুকে পড়েন, তার পরেও আপনি ওই বিষয়ে এফসিপিএস ডিগ্রি করার জন্য প্রস্তুতির সময় হিসেবে ডিপ্লোমাকালীন সময়কে বেছে নিতে পারেন।

যারা সরকারি চিকিৎসক রয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে ডিপ্লোমায় ঢুকে পড়লে ডিপ্লোমাকালীন সময়ে এফসিপিএসের প্রস্তুতি নেওয়াটা অধিকতর যুক্তিসঙ্গত। কারণ আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, সরকারি চিকিৎসকদের একটি পোস্ট গ্রাজুয়েশন হয়ে যাওয়ার পরে পরবর্তী পোস্ট গ্রাজুয়েশনের জন্য তিন বছর সময় অপেক্ষা করতে হয়। তাই সে ক্ষেত্রে এফসিপিএস পার্ট ওয়ান করে ফেললে পরবর্তীতে আপনি প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পার্ট টু পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন।

যারা বেসরকারি চিকিৎসক রয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তারা ডিপ্লোমা এবং এমডি বা এমএস সকল বিষয়েই ভাতাপ্রাপ্ত হন। তাই এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ডিপ্লোমা শুরু করে এই সময়টা পরবর্তী এমএস বা এমডি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ভালো করে সময়টা কাজে লাগাতে পারেন। যাতে করে ডিপ্লোমা শেষ করেই আপনি এমডি বা এমএসে ঢুকে যেতে পারেন। যারা ইন্টার্নি শেষ করেই পোস্ট গ্রাজুয়েশনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন, তাদের ক্ষেত্রে বলবো শুরুতেই এমডি, এমএস এবং এফসিপিএস এই বিষয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকা উচিত।

প্রথমেই ডিপ্লোমা পরীক্ষা দেওয়া উচিত নয়। হতে পারে আপনি একবার, দুইবার, তিনবারে এই কোর্সগুলোতে চান্স পেতে পারেন।। যদি খুব বেশি দেরি হয়, তাহলে যে সকল বিষয়ে ডিপ্লোমা রয়েছে আপনার নির্ধারিত বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত; সে সকল বিষয়ে ডিপ্লোমায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। পোস্ট গ্রাজুয়েশন পরীক্ষার ক্ষেত্রে আগ্রহ-উদ্দীপনা হারানো যাবে না। মনে রাখতে হবে, যদি একাধিকবার পরীক্ষায় চান্স না হয়, তাহলে সেটা পরীক্ষার সিস্টেমের ব্যর্থতা নয় বরং আপনার প্রস্তুতির মধ্যে কোথাও ভুল রয়েছে। এবিষয়টি নিজে খুঁজে বের করতে হবে অথবা কারো সাহায্য নিয়ে এ বিষয়টি খুঁজে সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।

এটাও মনে রাখা জরুরি কোন একটি বড় বিষয় অর্জনের পেছনে অবশ্যই বড় ধরনের ত্যাগ প্রয়োজন রয়েছে। অনেকে অর্থ উপার্জন করতে থাকেন এবং একই সাথে পড়ালেখা চালিয়ে যান। এ সকল ক্ষেত্রে এমবিবিএস পাস করার পর প্রথম পাঁচ বছর বেঁচে থাকার তাগিদে অর্থ উপার্জন হওয়া উচিত, তবে উপার্জন করে সঞ্চয় করবেন এ বিষয়টি যেন মাথায় না আসে। কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবার ও পারিপার্শ্বিকতায় উপার্জন বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে, সেটা অবশ্যই অস্বীকার করার উপায় নেই। সে ক্ষেত্রে নিজেকে আরও বেশি পরিশ্রমী করে তুলতে হবে, যেন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় আপনি নিজেকে জায়গা করে নিতে পারেন।

ডিপ্লোমা, এমডি, এমএস বা এফসিপিএস কোনো ডিগ্রিকে আমি ছোট করে দেখছি না। আমি শুধুমাত্র বাস্তবতার কয়েকটি বিষয় তুলে ধরলাম। ব্যক্তিগত চিন্তার ক্ষেত্রে অনেক সময় কিছু কিছু বিষয় আলাদা হতে পারে। সেটা একান্তই ব্যক্তিগত থাকবে। কারণ ব্যক্তির সন্তুষ্টি সর্বশেষ সন্তুষ্টি।

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এমবিবিএস গ্র্যাজুয়েটদের আবেদন

বিসিএস পরীক্ষা: সবার বয়স বাড়লেও সুখবর নেই চিকিৎসকদের

ইটনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে

আউটডোরে ৪৫০-৫০০ রোগী দেখেন ২ চিকিৎসক

  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত