কার্ডিওলজিস্ট হতে চান জাতীয় মেধায় দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ
২০২১-২২ সেশনে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধা তালিকায় দ্বিতীয় হয়েছেন রাজশাহী কলেজের কৃতি শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ। কঠোর অধ্যাবসায় ও নিয়মিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ অবস্থানে পৌঁছেছেন তিনি।
গতকাল মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর আজ বুধবার (৬ এপ্রিল) আব্দুল্লাহর সঙ্গে কথা হয় মেডিভয়েসের। আলাপচারিতায় উঠে আসে ঈর্ষণীয় সাফল্যের নেপথ্য কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: সাখাওয়াত হোসাইন।
মেডিভয়েস: সারাদেশে দ্বিতীয় হওয়ায় আপনার অনুভূতি কী?
আব্দুল্লাহ: আমার কাছে খুবই আনন্দ লাগছে। জীবনের সবচেয়ে সুন্দর কিছু মুহূর্ত কাটাচ্ছি। সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা। তিনি আমাকে এত বড় সফলতা দান করেছেন। জানি না, এটার জন্য কতটুকু যোগ্য ছিলাম। রেজাল্ট শোনার পর বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আশা ছিল, ঢাকা মেডিকেল বা অন্য কোনো মেডিকেলে চান্স হবে। কিন্তু দ্বিতীয় হবো প্রত্যাশা ছিল না।
মেডিভয়েস: আপনার প্রস্তুতি কেমন ছিল? কবে থেকে এবং কিভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন?
আব্দুল্লাহ: শুরু থেকে নিয়মিত এবং ধারাবাহিকভাবে পড়াশোনা চালিয়েছি। দিনের পড়া দিনে শেষ করেছি। খুব বেশি পড়াশোনা করেছি তা নয়, ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার থেকে স্বপ্ন ছিল মেডিকেলে পড়বো। ভর্তি পরীক্ষায় সেসব বিষয় ফোকাস দেওয়া হয়, শুরু থেকে ওই বইগুলো পড়েছি, লাইন টু লাইন পড়েছি। এভাবেই প্রস্তুতি শেষ হয়ে গেছে। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার থেকে কেউ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তাহলে যথেষ্ট।
মেডিভয়েস: প্রস্তুতির জন্য নিজের দুর্বলতা চিহ্নিত করেছেন কীভাবে?
আব্দুল্লাহ: বেশি বেশি পরীক্ষা দিতে হবে, পরীক্ষা দিলে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠা সম্ভব। আমি শুরু থেকে পরীক্ষা দেওয়ার প্র্যাক্টিস করেছি। শেষ তিন মাস সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা দিয়েছি। প্রথম দুই বছর বই পড়েছি। তারপর প্রস্তুতি জন্য শেষ যে কয় মাস বেশি বেশি পরীক্ষা দিয়েছি। যত বেশি পরীক্ষা দেওয়া যায়, তত বেশি ভয় কেটে যায় এবং প্রস্তুতিটা অনেক বেশি ভালো হয়।
মেডিভয়েস: মেডিকেলে পড়াশোনার অনুপ্রেরণা কিভাবে এলো?
আব্দুল্লাহ: চিকিৎসা পেশাটা শুরু থেকে আমার কাছে খুবই ভালো লাগতো। যখন মেডিকেলের পাশ দিয়ে যেতাম, দেখেছি, সাদা অ্যাপ্রোন পড়ে আপু-ভাইয়ারা যেতো। তখন মনে হতো এই মহৎ পেশায় যদি আসতে পারতাম, তাহলে মানুষের সেবা করতে পারতাম। এছাড়া একজন মামা মেডিকেলের চান্স পেয়েছিলেন, তিনি এখন চিকিৎসক। তারপর থেকেই আমার ইচ্ছা চিকিৎসক হবো। ডা. কামরুল হাসান স্যারদের লেকচার যখন শুনতাম, তখন মনে হতো এই খাতে আসতে পারলে খুবই ভালো হবে।
মেডিভয়েস: সফলতার পেছনের গল্প জানতে চাই?
আব্দুল্লাহ: সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা। তিনি আমাকে ধৈর্য দিয়েছেন, আমি ধৈর্য ধরেছিলাম। আর হতাশ হলে বাবা-মা আমাকে সাহস দিতেন। সফলতার পেছনে এটাই ছিল বড় শক্তি।
মেডিভয়েস: ভবিষ্যতে কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে চান?
আব্দুল্লাহ: কার্ডিওলজিস্ট হওয়ার ইচ্ছা আছে। আমাদের দেশে রীতিমত হৃদরোগসহ এ সংক্রান্ত রোগী বেড়ে যাচ্ছে। এসব রোগের ব্যয়ভার অনেক বেশি। আমি চাই গরিবদেরকে একটু হলেও সাহায্য করতে।
মেডিভয়েস: পড়াশোনায় পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিংয়ের ভূমিকা কেমন ছিল?
আব্দুল্লাহ: প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত আমি পড়েছি নবাবগঞ্জ সরকারি মডেল স্কুল থেকে। এর পর ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। এ সময় খুব ভালো কিছু সময় কাটিয়েছি এবং ভালো কিছু বন্ধু হয়েছে। তারাও মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। মোট ১১ জনের মত। খুবই ভালো লাগছে। তারপর রাজশাহী কলেজে আমার মত নগন্য একজন মানুষ মেধাবীদের সাথে প্রতিযোগিতা করেছি।
কোচিংয়ের অবদান বলতে শেষ সময়ে কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। আর কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছি, মূলত পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। চেষ্টা করেছি, যত বেশি পরীক্ষা দেওয়া যায়। এতে ভয় কেটে যায়।
মেডিভয়েস: মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সাফল্য অনেকে ধরে রাখতে পারেন না। আপনার কি মনে হয়?
আব্দুল্লাহ: যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সেটা হলো ধৈর্য। ধৈর্য সবচেয়ে বড় জিনিস। অনেকে বলবে, ভালো জায়গায় চান্স হয়ে যাবে কিংবা কেউ হতাশার কথা শোনাবে। ভর্তি পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মনে হবে, এই কাজটা আমার দ্বারা হবে না বা পারবো না। কিন্তু ধৈর্য ধরে লেগে থাকলে ভালো কিছু করা সম্ভব।
মেডিভয়েস: করোনাকালে পরীক্ষার বিষয়ে অনেক আলোচনা-সামালোচনা হয়েছে। অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
আব্দুল্লাহ: করোনাকাল আমাদের জীবনের খারাপ দিকগুলোর অন্যতম। এ সময় সবচেয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়তে হয়েছে, শর্ট না লং সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষা হবে, এ নিয়ে। আমরা কোন দিকে এগুচ্ছি। আমাদের কোন গন্তব্যে যাচ্ছি। আমরা হতাশ হয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু গুছিয়ে নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় পেয়েছি। এ সময়ে যারা ভালোভাবে পড়াশোনা করেছে, তারাই পরীক্ষায় ভালো করতে পেরেছে।
মেডিভয়েস: চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন কখন থেকে?
আব্দুল্লাহ: ছোট থেকেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে স্বপ্নটা বেশি গাড় হয়ে যায়। আমি এই পেশাটাই ভালোবাসতে শুরু করি। এরপর থেকে চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা।
মেডিভয়েস: পেশাগত জীবন নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
আব্দুল্লাহ: চিকিৎসা পেশা নিয়ে অনেকেরই বিরূপ ধারণা রয়েছে। এটা আমাদেরই পরিবর্তন করতে হবে। আমি এবং আমার সহপাঠীরা যারা ভালো জায়গায় গিয়েছি, তাদের অবশ্যই কাজ করতে হবে। চিকিৎসকরা কসাই, চিকিৎসকরা মানুষকে মানুষের মতো দেখে না। এ জাতীয় অনেক বিরূপ মন্তব্য আছে। আসলে এই ধরনের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। চিকিৎসকদেরও আন্তরিক হতে হবে। রোগীদেরও মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। সর্বোপরি আমাদেরকে এসব পরিবর্তন করতে হবে। আরও বেশি বিনয়ী, পরিশ্রমী ও অধ্যাবসায়ী হতে হবে।
মেডিভয়েস: আপনার শৈশব ও কৈশোর সম্পর্কে জানতে চাই।
আব্দুল্লাহ: আমার নিজ জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ। আমি সদর উপজেলার রাজারামপুরের ছেলে। সেখান থেকে আমার বেড়ে ওঠা। ওইখান থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। এরপর রাজশাহী কলেজ থেকে পড়াশোনা করেছি। ছোটবেলা খুব ভালো কেটেছে পারিবারিক পরিবেশে। আমি আমার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। আমার আম্মু গৃহিনী আর আব্বু বেসরকারি চাকরিজীবী।
-
১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
-
১২ মার্চ, ২০২৩
-
০৬ এপ্রিল, ২০২২
-
০৭ এপ্রিল, ২০২১
-
০৭ এপ্রিল, ২০২১