‘আমার খরচ চালাতে গিয়ে বড় ভাই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন’

গত ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) এমডি-এমএস রেসিডেন্সি কোর্সে ভর্তি পরীক্ষা। এতে পাঁচটি অনুষদে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১০ হাজার ৪৩৫ জন। এর মধ্যে মেডিসিন অনুষদে ৩ হাজার ৭০৯ জন, সার্জারি অনুষদে ৪ হাজার ৪৪২ জন, বেসিক সায়েন্স ও প্যারাক্লিনিক্যাল সায়েন্স অনুষদে ৬৮৮ জন, ডেনটিসট্রি অনুষদে ৬৫৭ জন এবং শিশু অনুষদে ৯৩৯ জন অংশ নেন।
পরীক্ষায় নিউরোসার্জারি বিভাগে বেসরকারি প্রার্থী হিসেবে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৬ জন। গর্বিত এ তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন রংপুর মেডিকেল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ডা. ওবাইদুল ইসলাম। ফল প্রকাশিত হওয়ার পর মেডিভয়েস মুখোমুখি হয় এই কৃতি শিক্ষার্থীর। আলাপচারিতায় উঠে আসে মাত্র দুই মাসের প্রস্তুতিতে ভর্তি পরীক্ষায় বিস্ময়কর সাফল্য অর্জনের নেপথ্য কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. মনির উদ্দিন।
মেডিভয়েস: এমন ফলাফলে সন্তুষ্ট কিনা?
ডা. ওবাইদুল ইসলাম: আলহামদুল্লিল্লাহ! আমি এ ফলাফলে সন্তুষ্ট। এমন ফলাফলে আমার পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুরাও সন্তুষ্ট।
মেডিভয়েস: পরীক্ষার প্রস্তুতি বা কৌশল সম্পর্কে জানতে চাই।
ডা. ওবাইদুল ইসলাম: রেসিডেন্সি ভর্তি পরীক্ষার আগে আমি বিসিএসের জন্য আমি পড়াশোনা করেছিলাম। তারপর আমার হাতে দুই মাস সময় ছিল। এ দুই মাস আমি কাজে লাগিয়েছিলাম। যেহেতু বিসিএসের জন্য আমার পূর্বেই প্রায় সবকিছু পড়া ছিল। এই পড়াশোনা আমার রেসিডেন্সি পরীক্ষার অভাবনীয় সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতির জন্য যখন ঢাকায় আসি, তখন একটি কোচিংয়ে ভর্তি হয়ে বিসিএসের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমাদের বিসিএস বিশেষ (স্বাস্থ্য) হওয়ায় আমরা মেডিকেল বিষয়ক পড়াশোনাই অধিক করেছি। আমি মেডিকেল অংশটিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। সাধারণ অংশটুকু খুবই কম পড়া হয়েছিল। আমার লক্ষ্য ছিল, বিসিএস হোক আর না হোক এর মাধ্যমে যেন পরের ধাপগুলো সহজে পার হতে পারি। আলহামদুলিল্লাহ, তা কাজে দিয়েছে। বিসিএস পরীক্ষায় আমি উত্তীর্ণ হয়েও ভাইভা বোর্ডে বাদ পড়ি। পরবর্তীতে ক্যাডার না হতে পারার ক্ষোভটাকে কাজে লাগিয়েছি। বিসিএসের ফলের পর আরও দুইমাস সময় ছিল। আমি বড় ভাইদের থেকে পরামর্শ নিলাম, তারা বললো দুইমাস পড়ে রেসিডেন্সি সম্ভব না। জবাবে বললাম, আমার তো ইতিমধ্যে পড়া আছে। তবুও সময়টিকে সবাই পূর্ণ প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট নয় বলে মত দিলো। এর মধ্যে একজন ভাই বললেন, এভাবে পড় হয়তো তোমার হয়েও যেতে পারে। তার কথাটি আমাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
রেসিডেন্সির জন্যে মোটামুটি সবগুলো বিষয় পড়তে হয়। বিশেষ করে নিউরো-সার্জারিতে ভর্তি হওয়ার জন্য আই-ইএনটি-সার্জারি ফেকাল্টির বিষয়গুলো ভালোভাবে রপ্ত করতে হয়। যেহেতু প্যাথলজি, মাইক্রো ও ফার্মা—এ তিনটি বিষয় হুবহু আসে, তাই এগুলো আমি ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছি। এই বিষয়টি আমার কাজে লেগেছিল।
মেডিভয়েস: রেসিডেন্সি কোর্সে যারা সুযোগ পেতে চান, তাদের ব্যাপারে আপনার পরামর্শ?
ডা. ওবাইদুল ইসলাম: রেসিডেন্সি কোর্সে পাঁচটি ফ্যাকাল্টির উপর পরীক্ষা হয়। বিশেষ করে যারা সার্জারিতে সুযোগ পেতে চান, তাদের আই-ইএনটি-সার্জারি ফেকাল্টির উপর গুরুত্ব দিতে হবে। যারা এমবিবিএস প্রথম বর্ষে থাকবে, তাদের অবশ্যই বুঝে বুঝে পড়তে হবে এবং যাদের ইন্টার্ন শেষ হয়ে যাবে তারা কোনো বড় ভাই অথবা কোচিংয়ের গাইডলাইনে থাকলে, এটি সহায়ক হবে।
মেডিভয়েস: আগামী দিনের পরিকল্পনা নিয়ে কিছু বলুন।
ডা. ওবাইদুল ইসলাম: আমার পরিকল্পনা হচ্ছে একজন ভাল নিউরোসার্জন হওয়া। কোনো একটি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মানুষকে সেবা দেবো। সর্বোপরি বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমি ভূমিকা রাখার চেষ্টা করবো।
মেডিভয়েস: অবসর সময় কিভাবে কাটে?
ডা. ওবাইদুল ইসলাম: অবসর পেলে ঘুমাই। পাশাপাশি মোবাইলে বিভিন্ন রকম শিক্ষণীয় ভিডিও দেখি, আলোচনা ও গান শুনি। এ ছাড়া বিভিন্ন রকমের বই পড়ে অবসর সময় কাটানোর চেষ্টা করি।
মেডিভয়েস: আপনাকে ধন্যবাদ আমাদেরকে সময় দেওয়ার জন্য।
ডা. ওবাইদুল ইসলাম: আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।
বেড়ে ওঠার গল্প
চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট ডা. ওবাইদুল ইসলাম। বাবা একজন কৃষক। মা গৃহিণী।
চার ভাইবোনের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া অভিভাবকদের জন্য কষ্টকর ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় আমার খরচ চালাতে গিয়ে বড় ভাই পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন।’
রেসিডেন্সিতে ভর্তি হওয়ার গল্প
জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার এ কৃতি সন্তান জানান, ‘রংপুর মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করার সময় থেকেই নিউরো-সার্জারিতে পড়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করি। ইন্টার্ন শেষ করার পর ২০২০ সালে আমি ঢাকায় চলে আসি। ঢাকায় এসে মেডিকেলের বড় ভাইদের পরামর্শে একটি কোচিংয়ে ভর্তি হই। কোচিংয়ের গাইডলাইন এবং বড় ভাইদের অনুপ্রেরণায় আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার রেসিডেন্সি কোর্সে সুযোগ হয়েছে।’
