২৭ নভেম্বর, ২০২১ ১২:২১ পিএম

তৃতীয় লিঙ্গের শিশুর চিকিৎসা: বিএসএমএমইউ শোনাচ্ছে আশার বাণী 

তৃতীয় লিঙ্গের শিশুর চিকিৎসা: বিএসএমএমইউ শোনাচ্ছে আশার বাণী 
অপূর্ণাঙ্গ বা ত্রুটিপূর্ণ লিঙ্গ নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুর বাইরের প্রজনন অঙ্গ ও ভেতরের প্রজনন অঙ্গের মধ্যে পার্থক্য থাকে। এ সমস্যাকে বলা হয়, ডিজঅর্ডার অব সেক্সুয়াল ডেভেলমেন্ট (ডিএসডি)। ছবি: মজিবুর রহমান

আবু নাঈম মনির: অপূর্ণাঙ্গ বা ত্রুটিপূর্ণ লিঙ্গ নিয়ে জন্মগ্রহণকারী একটি শিশু পরিণত বয়সে সমাজে পরিচিতি পায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে। বিকাশ-প্রকাশে নানা অপূর্ণতার কারণে চলতে-ফিরতে সব মহলে তাকে হতে হয় অবজ্ঞা-অবহেলার শিকার। এক পর্যায়ে স্বাভাবিক জীবন থেকে ছিটকে পড়তে হয় তাকে। জায়গা মেলে ভাগ্যবিড়ম্বিত হিজরা জনগোষ্ঠীর কাতারে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষ সাধনের যুগে এ মিছিল ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকা যেন সমাজের দায়িত্বহীনতারই বিবস্ত্র প্রকাশ। 

এমনই প্রেক্ষাপটে অঙ্কুরেই এ রোগের লাগাম টেনে ধরতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শুরু হয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের শিশুদের চিকিৎসা, যার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনের পথ খুঁজে পাবে একেকটি মানবশিশু। 

মেডিভয়েসের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে শিশুদের লিঙ্গ রূপান্তরের বিষয়টি যদি ব্যাখ্যা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কে এম জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, অপূর্ণাঙ্গ বা ত্রুটিপূর্ণ লিঙ্গ নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুর শারীরিক ফেনোটাইপ বা বাইরের প্রজনন অঙ্গ ও জেনোটাইপ বা জিনগত ভেতরের প্রজনন অঙ্গের মধ্যে পার্থক্য থাকে। অর্থাৎ ইন্টারনাল সেক্স, যা ক্রমোজম (জেনোটাইপ) দিয়ে নির্ণয় করা হয়, সেটা এক রকম—কিন্তু বাহিরেরটা (ফেনোটাইপ) অন্য রকম। 

সেটা আবার স্বাভাবিক না। অর্থাৎ একজন ছেলে শিশুর বা মেয়ে শিশুর স্বাভাবিক লিঙ্গ যেমন থাকে—এ রকম হয় না, বরং দুটোর সংমিশ্রণ থাকে। যেমন: একজন ছেলে, কিন্তু তাকে দেখতে মেয়ের মতো মনে হয়। জেনেটালই তার লিঙ্গ মেয়েদের মতো হয়। এ সমস্যাকে আমরা বলি, ডিজঅর্ডার অব সেক্সুয়াল ডেভেলমেন্ট (ডিএসডি)।

জন্মের পর পরই এগুলো চিহ্নিত করা যায়। বিষয়টি সন্তানের বাবা-মা বুঝতে পারলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। অথবা ক্লিনিকে শিশু জন্মের সময় কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ বিষয়টি দেখে এটি চিহ্নিত করতে পারেন। তিনি বুঝতে পারেন যে, তার লিঙ্গ স্বাভাবিক না।

ছেলে-মেয়ে শিশু চিহ্নিতকরণ

এর পর এসব রোগীদেরকে এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, পেডিয়াট্রিক সার্জারি অথবা পেডিয়াট্রিক এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগে পাঠান সংশ্লিষ্টরা। তখন বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগীর শারীরিক অবস্থার বিষয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। স্বাভাবিক একটি ছেলে শিশুর যা যা থাকা দরকার অথবা একটি মেয়ে শিশুর যা থাকা দরকার, তা আছে কিনা—ফিজিক্যাল পরীক্ষায় এগুলো বেরিয়ে আসে। শিশুদের লিঙ্গ যে আকারের হওয়ার কথা, অস্বাভাবিক শিশুদের সে রকম থাকে না। তাদের লিঙ্গ ছোট, বড় অথবা অবিন্যস্ত থাকে। শিশুর লিঙ্গের নির্দিষ্ট সাইজের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা অবগত, তারা অস্বাভাবিক লিঙ্গ দেখলেই বুঝতে পারেন।

অপূর্ণাঙ্গ বা ত্রুটিপূর্ণ লিঙ্গের বিষয়টি জানার পর শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসার পরার্মশ দিয়ে অধ্যাপক ডা. এ কে এম জাহিদ হোসেন বলেন, শৈশবে এর সমাধান না হলে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পথ হারাতে থাকবে মানব সভ্যতা বিস্তারের এই অনুসঙ্গ।  

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি বোঝার পর আমরা তার বিভিন্ন রকম পরীক্ষা করি। এন্ড্রোজেন নামে একটি হরমোনগুলো সিনথেসিস থেকে এ সমস্যা হয়। তার ক্রমোজমাল অ্যানালাইসিস করা হয়। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, তার ক্রোমোজম ৪৬ এক্সএক্স নাকি ৪৬ এক্স ওয়াই। ৪৬ এক্সএক্স হলে আমরা তাকে মেয়ে ধরি, আর ৪৬ এক্স ওয়াই হলে ধরি ছেলে। এর মধ্যেও আবার ব্যতিক্রম আছে। একটি শিশুর ক্রমোজম ৪৬ এক্সএক্স অথবা ৪৬ এক্স ওয়াই থাকে, পাশাপাশি যদি এর সঙ্গে জেনিটালই মিল না থাকে, তাহলে এই অবস্থাকে আমরা ডিজঅর্ডার অব সেক্সুয়াল ডেভেলমেন্ট (ডিএসডি) বলি।

এর পর আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অভিভাবকদের বোঝানোর চেষ্টা করি, আপনার সন্তানের ক্রমোজম ছেলের, কিন্তু তাকে মেয়ের মতো দেখায়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাকে ছেলের মতো করা যাবে। তা না হলে সে মেয়ের আকৃতি নিয়ে বড় হবে, কিন্তু তার ভেতরে থাকবে ছেলের মতো।

ছিটকে পড়ে জীবন থেকে 

অধ্যাপক জাহিদ হোসেন বলেন, এভাবে বড় হলে তার সেকেন্ডারি সেক্স কারেক্টারগুলো যেমন: চেহারাসহ দৈহিক অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছেলের মতো বিকাশ হবে না, অথচ ছেলেদের মতো তার কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হয়ে যাবে। তখন স্বাভাবিক মানুষের মতো সবার সঙ্গে মিশতে পারবে না সে। স্বাভাবিক জীবনে আসতে পারবে না। 

সে কারণে দৈহিক অসঙ্গতিগুলো ধরা পড়ার ছয় মাস থেকে এক বছর কিংবা দুই বছরের মধ্যে যদি অপারেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক করা যায়, তাহলে তার মধ্যে যে সেক্স ক্রমোজম পাওয়া যাবে—সে অনুযায়ী কনভার্ট করে দেওয়া গেলে সে ভেতর-বাহির উভয় দিক থেকেই ওই সেক্স নিয়ে বেড়ে উঠবে।

কত সিট নিয়ে যাত্রা শুরু 

অধ্যাপক ডা. এ কে এম জাহিদ হোসেন বলেন, লিঙ্গ রূপান্তর চিকিৎসার জন্য আলাদা কোনো ইউনিট নাই। পেডিয়াট্রিক ইউরোলজির যে বিভাগটি খোলা হয়েছে, এর অধীনে ডিএসডি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে। ১০টি শয্যা নিয়ে এ বিভাগের যাত্রা শুরু হয়েছে। ইউরোলজির অধীনে এই রোগীগুলো ভর্তি হবে। সুতরাং ওয়ার্ডে শয্যা খালি সাপেক্ষে ডিএসডি রোগীদের ভর্তি করা হবে। যদি পাঁচটি শয্যা খালি থাকে, তাহলে পাঁচজনকেই জায়গা দেওয়া হবে। যেহেতু বিরল এ রোগীদের চিকিৎসার লক্ষ্যে আমরা জোর চেষ্টা চালাচ্ছি, সেহেতু লক্ষ্য থাকবে সব সময় এ ধরনের ২/১ জনকে ভর্তি রাখতে। যেন তাদের দিকে বাড়তি নজর দেওয়া যায়। 

অসমর্থ পরিবারের শিশুদের বিনামূল্যে চিকিৎসা

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান জানান, এসব শিশুদের চিকিৎসায় বিএসএমএমইউতে স্থাপিত ক্লিনিকে অসমর্থ পরিবারের শিশুদের জন্য সর্ম্পূণ বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। 

তিনি বলেন, ‘এখানে দরিদ্র রোগীদেরকে আমরা ফ্রি বেডে ভর্তি করি। এসব রোগীদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা ফ্রি হয়। আর ব্যয়বহুল কিছু পরীক্ষা স্বল্পমূল্যে হয়। এক কথায় সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষাই এখানে হয়। অপারেশনের সময় কিছু খরচ লাগে। যেমন: সেলাইয়ের সুতা, স্পেশাল এন্টিবায়োটিক কিছু দরকার হলে...। তবে সাধারণত আমাদের কাছে থাকা ওষুধেই সব কিছু হয়ে যায়। কিন্তু সোশ্যাল ম্যাটেরিয়াল রোগীদের বাহির থেকে সংগ্রহ করতে হয়। ক্যাথেটার ও টিউবসহ সামান্য কিছু জিনিস কিনতে হয়। যাদের সক্ষমতা আছে, তারা কিনবেন। আর যাদের সামর্থ্য নাই, তারা আবেদন করলে আমাদের এখান থেকে বিশেষ তহবিল থেকে ব্যবস্থা করা হবে। আমরা সুপারিশ করলে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে এককালীন ১০ হাজার টাকা পায় ডিএসডি রোগীরা। আর সমাজ কল্যাণ তহবিল থেকে কিছু ওষুধ সরবরাহ করা হয়। এভাবেই দরিদ্রদের রোগীদের বিনামূল্যে সেবা দেওয়া হয়।’

সামর্থ্যবানদেরদের খরচের পরিমাণ

তৃতীয় লিঙ্গের চিকিৎসায় সামর্থ্যবান পরিবারকেও তেমন খরচ করতে হয় না জানিয়ে অধ্যাপক ডা. এ কে এম জাহিদ হোসেন বলেন, সামর্থ্যবান রোগীদের জন্য শয্যা বাবদ প্রতিদিন আড়াইশ’ টাকা দিতে হয়। সে হিসাবে ২/৩ সপ্তাহ থাকলে পাঁচ হাজারের কিছু বেশি টাকা খরচ হবে। বড় অপারেশনের জন্য ৮-১০ হাজার টাকা দিতে হবে। এই দুটি খরচ বাড়তি লাগে। তবে এটা বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় অনেক কম। আর সবার জন্য এখান থেকে খাবার সরবরাহ করা হয়। কেউ চাইলে বাহির থেকে খাবার গ্রহণ করতে পারেন। মূলত খরচ খুব বেশি না। একটা শূন্যতা আছে, সেটা হলো: শয্যা স্বল্পতা। কারণ এ বিভাগে ডিএসডি ছাড়াও অন্য অনেক ধরনের রোগী আছে। সারাদেশের শিশুদের যত জটিল রোগ আছে, যার চিকিৎসা অন্যান্য হাসপাতালে হয় না, একমাত্র বিএসএমএমইউর পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগেই হয়, সেসব রোগীরা এখানে ভিড় করে। এ ছাড়া তাদের এমন কিছু অপারেশন আছে, যেগুলো দেশের করপোরেট কোনো হাসপাতাল—এমননি অন্যান্য স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটেও হয় না, সেগুলো শুধু এখানেই হয়। মূলত সেসব রোগী বেশি আসে। সে কারণে এ বিভাগে ওইসব রোগীর চাপ বেশি। ফলে অনেক সময় সিট দেওয়া যায় না।

লিঙ্গ রূপান্তরের পর গ্রহণযোগ্যতা

তৃতীয় লিঙ্গের শিশুদের অস্ত্রোপচারে সফলতার ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে নিজের প্রকৃত অবস্থা ফিরে পাবে রোগীরা। 

অধ্যাপক জাহিদ হোসেন বলেন, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রোগীকে নিজের প্রকৃত অবস্থায়ই ফিরিয়ে দেওয়া হবে, যা অবিন্যস্ত অবস্থায় ছিল। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বিন্যাসের পর মেয়েকে মেয়ের মতো করে দেওয়া হবে। তখন তার মধ্যে মেয়েদের প্রতিটি চরিত্রই আসবে। হরমোনাল সমস্যা সমাধানের জন্য তাকে দেওয়া হবে হরমোন থেরাপি। তাহলে একটি মেয়ে পূর্ণ মেয়ের মতোই হবে। আগে অপারেশন হয়েছে, এ রকম মেয়ের দৃষ্টান্ত আছে। অপারেশনের পর বিয়ে হয়েছে, তার বাচ্চা হয়েছে। বিএসএমএমইউতে এই বিভাগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। সুতরাং এ বিষয়ে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।

সার্জারির পরিণতি ও ঝুঁকি

বিএসএমএমইউ শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান বলেন, প্রতিটি পুনর্নির্মাণযোগ্য সার্জারিই ব্যর্থ হওয়ার একটি আশঙ্কা থাকে। সুতরাং ডিএসডির বেলায়ও তা হতে পারে। তাই কখনো এটি ব্যর্থ হলে একাধিকবার করারও দরকার হতে পারে। যেহেতু এসব রোগীদের ঘিরে সামাজিক বিভিন্ন বিষয় জড়িত। সে ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটলে, এসব রোগী অস্ত্রোপচারে সুস্থ হয়ে যাবে। কারও অপারেশনের পর কোনো কারণে যদি দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচার দরকার হয়, তখন সামাজিক কারণে সে না আসলে ঝঁকির ব্যাপার থেকে যায়। যদিও আমাদের পক্ষ থেকে ফলোআপ অব্যাহত থাকবে। এজন্য সচেতনতার কোনো বিকল্প নাই। 

‘এ ক্ষেত্রে আমাদের জোরালো প্রচারণা দরকার, তাহলো—এ ধরনের রোগীরা অপারেশনের মাধ্যমে ঠিক হয়ে যাবে। একবার না হলে দ্বিতীয়বারে, না হয় তৃতীয়বারে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন। এখানে সচেতনতার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক রোগী হয় তো মনে করবে, আমাকে একবার করা হলো অথচ ঠিক হলো না, আবার অস্ত্রোপচার করতে হবে। তারা একাধিবার অস্ত্রোপচারের বিষয়টি গ্রহণ করবে কিনা, সেটাই চ্যালেঞ্জের। তবে কাউন্সিলিংয়ের সময় তাদের বিষয়গুলো বুঝিয়ে দেবো। একাধিকবার প্রয়োজন হলে তারা যেন হতাশ না হন। অর্থাৎ যথার্থ আশার বাণীই থাকবে’, যোগ করেন অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন।

আইনি জটিলতা

অন্য ১০টির মতো হওয়ায় এ ধরনের সার্জারিতে এখনো পর্যন্ত আইনি জটিলতা হয়নি বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান। 

তিনি  বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে নৈতিক একটি বিষয় আছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে শিশুদের মতামত যেহেতু পিতা-মাতা দিয়ে থাকেন, সেহেতু তাদের থেকে নেবো। আর পরিণত রোগীদের মতামত তাদের কাছ থেকেই নিতে হবে। তারা যদি মতামত দেন, তাহলে আইনি কোনো জটিলতা থাকবে না। এসব সার্জারির জন্য দেশে আলাদা কোনো আইন নাই, অন্য ১০টি সার্জারির মতোই স্বাভাবিক। এজন্য আমরা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করি। তাহলো: পিতা-মাতার মতামত নেওয়া। এই সার্জারিতেও তাদের মতামতটাই প্রাধান্য পাবে। সেজন্য তাদেরকে ভালো করে কাউন্সিলিং করতে হবে। যেহেতু বিষয়টি সময়সাপেক্ষ, একই সঙ্গে ফলোআপের। তাদেরকে সাইকোলজিক্যাল সাপোর্টও দিতে হবে। এ বিষয়ে এখনো কোনো আইনি জটিলতা হয়নি। ভবিষ্যতে আসলে তখন দেখা যাবে।’

পরিণত রোগীদেরকে এ ধরনের সার্জারির করার সময় আইনের দরকার হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশেষ করে শৈশবে সার্জারির পর একজন শিশু বড় হয়ে আইনের আশ্রয় নেয় কিনা—এটা নিয়ে ভাবার অবকাশ রয়েছে। এমনটি হলে জটিলতা দেখা দিতে পারে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট আর পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। আমাদের শিশুরা পিতা-মাতার ওপর নির্ভরশীল। অভিভাবকরা যে মতামত দেয়, সেটার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোতে মতদ্বৈততা দেখা দিয়েছে, সেটা হলো: পিতা-মাতা যদি মত না দেন, তাহলে এই অপারেশন করা যাবে না। শিশুটি বড় হওয়ার পর করতে চাইলে করবে।

এ ছাড়া এ রকম রোগী বড় হওয়ার পর অপারেশন করলে উত্তরাধিকার সম্পত্তির বেলায় সমস্যা হতে পারে। কারণ এতো দিন সবাই যাকে নারী হিসেবে জেনে এসেছে, সে যদি পুরুষে পরিণত হয়, তাহলে বিপত্তি তৈরি হবে। কিন্তু যখন শৈশবে অস্ত্রোপচার করা হবে, তখন তো একজন স্বাভাবিক ছেলে বা মেয়ে হিসেবেই বড় হবে। তখন তার পরিচয় নিয়ে জটিলতা দেখা দেবে না। শৈশবেই তার ক্রমোজোমাল জেন্ডার সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। ক্রমোজম অনুসারেই তার লিঙ্গ নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। তাই সম্পত্তির পাওয়ার বিষয়ে আইনি জটিলতা হওয়ার আশঙ্কাও কম।

এদিকে স্বাভাবিক জীবনের প্রত্যাশায় প্রিয় শিশুকে নিয়ে এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে শুরু করেছেন অভিভাবরা। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক মেডিভয়েসকে জানান, ‘আমরা প্রথমে শিশুকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাই। সেখানে আমাদেরকে এখানে আসতে বলেছেন। প্রত্যাশা নিয়ে এসেছি। আশা করি, চিকিৎসার মাধ্যমে আমার কলিজার টুকরা স্বাভাবিক জীবনের সন্ধান পাবে।’

 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত