অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ

ভাইস চ্যান্সেলর
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।


২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১২:৫৮ পিএম
জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ

বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার জন্য স্বর্ণোজ্জ্বল দিন

বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার জন্য স্বর্ণোজ্জ্বল দিন
আজকের এই দিনে জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ

আজ ২৫ সেপ্টেম্বর, সারা পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষি মানুষের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭৪ সালের আজকের দিনটি নিঃসন্দেহে বিশ্বের বুকে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। কারণ এই দিনে জাতিসংঘে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম বাংলায় ভাষণ প্রদান করেছিলেন, বাঙালির জন্য একটা পরম পাওয়া। 

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছিলেন। তেমনি বঙ্গবন্ধু সম্পূর্ণ বাংলা ভাষাভিত্তিক একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং জাতিসংঘের সদস্যপদ অর্জনের পর সেখানে প্রদত্ত বাংলা বক্তৃতার মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে আরও সুউচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন। আর এই কারণে আজকের দিনটি শুধু বাংলাদেশের জন্যই গর্বের দিন নয়, বরং এটি গোটা বাঙালি জাতির জন্যই গৌরবের।

জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুকে প্রথমেই অনুরোধ করা হয়েছিল, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ইংরেজীতে বক্তৃতা করবেন, কিন্তু প্রিয় মাতৃভাষা বাংলার প্রতি সুগভীর দরদ ও মমত্ববোধ থেকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করতে চাই।’

জাতিসংঘে বাংলাদশের সদস্যপদ লাভের আট দিনের মাথায় বঙ্গবন্ধু সাধু বাংলায় জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণের শুরুতেই বলেন, ‘মাননীয় সভাপতি আজ এই মহামহিমান্বিত সমাবেশে দাঁড়াইয়া আপনাদের সাথে আমি এই জন্য পরিপূর্ণ সন্তষ্টির ভাগিদার যে, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ আজ এই পরিষদে প্রতিনিধিত্ব করিতেছেন। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের পূর্ণতা চিহ্নিত করিয়া বাঙালি জাতির জন্য ইহা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার অর্জনের জন্য এবং একটি স্বাধীন দেশে মুক্ত নাগরিকের মর্যাদা নিয়া বাঁচার জন্য বাঙালি জনগণ শতাব্দীর পর শতাব্দীব্যাপী সংগ্রাম করিয়াছেন, তাহারা বিশ্বের সকল জাতির সঙ্গে শান্তি ও সৌহার্দ্য নিয়া বাস করিবার জন্য আকাঙ্খিত ছিলেন। যে মহান আদর্শ জাতিসংঘ সনদে রক্ষিত রহিয়াছে, আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষ সেই আদর্শের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করিয়াছেন। আমি জানি শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সকল মানুষের আশা-আকাঙ্খা বাস্তবায়নের উপযোগী একটি বিশ্ব গড়িয়া তুলিবার জন্য বাঙালি জাতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের এই অঙ্গীকারের সহিত শহীদদের বিদেহী আত্মাও মিলিত হইবেন।’

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও মুক্তি সংগ্রামে সমর্থন দানকারী দেশগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়া বঙ্গবন্ধু বলেন, যাঁহাদের ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ বিশ্বসমাজে স্থান লাভ করিয়াছে, এই সুযোগে আমি তাঁহাদের অভিনন্দন জানাই। বাংলাদেশের সংগ্রামে সমর্থনকারী সকল দেশ ও জনগনের প্রতি আমি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিতেছি। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ছিল শান্তি ও ন্যায়ের মিলিত সংগ্রাম। জাতিসংঘ গত ২৫ বছর ধরিয়া এই শান্তি ও ন্যায়ের জন্যই সংগ্রাম করিয়া যাইতেছে।
 
বঙ্গবন্ধু জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে দেশে দেশে সেনাবাহিনী ব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানান এবং বাংলাদেশেসহ চারটিদেশ আলজেরিয়া, গিনি বিসাউ এবং ভিয়েত নামের নামোল্লেখ করে বলেন, ‘এই দেশগুলো অপশক্তির বিরুদ্ধে বিরাট বিজয় অর্জন করিতে সক্ষম হইয়াছে। চূড়ান্ত বিজয়ের ইতিহাস জনগণের পক্ষেই থাকে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু ফিলিস্তিন, জাম্বিয়া, নামিবিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন।

বঙ্গবন্ধু আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যুদয় এই উপমহাদেশের শক্তি কাঠামো সৃষ্টি করিয়াছে। আমরা শান্তি চাই। আর এই জন্যই অতীতের সকল গ্লানি ভুলিয়া যাইতে চাই।’ 

বঙ্গবন্ধু দৃঢ়তার সংগে বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলেন, ‘জাতি সংঘের সদস্য ও সম্ভাবনার যে দিক বাংলাদেশ উপলব্ধি করিয়াছে, আর কেউ তেমনটি করিতে পারে নাই।’
 
বঙ্গবন্ধু ভাষণের শেষ পর্যায়ে বলেন, “সম্মানিত সভাপতি, মানুষের অজয় শান্তির প্রতি আমার বিশ্বাস রহিয়াছে। আমি বিশ্বাস করি, মানুষ অসম্ভবকে জয় করিবার ক্ষমতা রাখে।’ 

তিনি উদাত্ত কণ্ঠে বলেন, অজেয়কে জয় করিবার সেই শক্তির প্রতি অকুণ্ঠ বিশ্বাস রাখিয়াই আমি আমার বক্তৃতা শেষ করিবো। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো সেই সব দেশ দীর্ঘ সংগ্রাম ও আত্মদানের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে, কেবল তাদেরই এই দৃঢ়তা ও মনোবল রহিয়াছে, মনে রাখিবেন সভাপতি, আমরা বাঙালি জাতি চরম দুঃখ ভোগ করিতে পারি, কিন্তু মরিবে না, টিকিয়া থাকিবার চ্যালেন্স মোকাবেলায় আমার জনগণের দৃঢ়তাই আমাদের প্রধান শক্তি।’

বঙ্গবন্ধুর বাংলার এই ভাষণ ১৯৭২ সালেই হতে পারতো, কিন্তু আমাদের স্বাধীনতার শক্র চীন বারংবার ভেটো দিয়ে জাতিসংঘে আমাদের সদস্য হওয়ার পথ রুদ্ধ করে রেখেছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর ধারাবাহিকতায় তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবছর জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়ে আসছেন এবং তিনি বাংলাকে জাতিসংঘের সপ্তম দাপ্তারিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানেরও আহ্বান জানিয়েছেন। নারীর ক্ষমতায়নকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যাপ্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন বলেই নারী শিক্ষা প্রসার নিয়ে কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের নারীরা এখন উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশীদার। সকল পেশার নারীর অংশগ্রহণের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, এটা বোধ হয় ব্যতিক্রম ব্যাপার যে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী, সংসদে বিরোধী নেতা, স্পিকার, সংসদে উপনেতা সকলেই নারী।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি ছিল বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রাম স্বাধিকার আন্দোলনের প্রস্তুতি ও দিকনির্দেশনা মূলক ভাষণ, ২৫ সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণটিও ছিল তেমনি সমগ্র বিশ্বের অধিকার বঞ্চিত নির্যাতিত নিষ্পেষিত মানুষের ন্যায়-সঙ্গত ও অধিকার প্রতিষ্ঠা ও বিশ্বশান্তি, ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার বলিষ্ঠ উচ্চারণ ও সাহসী পদক্ষেপ। 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
‘ছেলেরা কেন পিছিয়ে, কারণ অনুসন্ধান করুন’

অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের গালমন্দ নয়: প্রধানমন্ত্রী

‘ছেলেরা কেন পিছিয়ে, কারণ অনুসন্ধান করুন’

অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের গালমন্দ নয়: প্রধানমন্ত্রী

  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক