২৫ জুন, ২০২১ ০৬:১৪ পিএম

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা: চালকদের বেপরোয়া গতিই দায়ী

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা: চালকদের বেপরোয়া গতিই দায়ী
ছবি: মেডিভয়েস

মুন্নাফ রশিদ: সৌর দিপ্তা মনোকুল। চার বছর বয়সী দিপ্তার যখন বন্ধুদের সাথে খেলায় মেতে থাকার কথা তখন হাসপাতালের বেডে নিঃসঙ্গ পুতুলই যেন তার একমাত্র খেলার সাথী।

গত ৮ জুন বাবা-মায়ের সাথে মোটরসাইকেলে লিচু বাগান দেখতে বেরিয়েছিল সৌর দিপ্তা মনোকুল। দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধামইর ইউনিয়নের গ্রীধরপুরে পৌঁছালে একটি প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মারা যান দিপ্তার বাবা সুমন্ত দাস। গুরুতর আহত হয় দিপ্তা আর পায়ে আঘাত পায় তার মা।

সৌর দিপ্তা মনোকুলের চাচা মেডিভয়েসকে বলেন, সচেতনতার একটু অভাবের কারণে আজ বাচ্চাটার এই পরিণতি, আমার ভাইটা আজ পৃথিবীতে নেই, তার পরিবারও আজ অন্ধকারে। দিপ্তার হাতে দুইটা ফ্রাকচার, পায়ে তিনটা ফ্রাকচার, মুখের চোয়াল ভেঙ্গে গেছে। ওর জীবন এখন সংকটাপন্ন।

দিপ্তার মতো বাবা নামের বটবৃক্ষটি না হারালেও একটি পা হারিয়ে একাদশ শ্রেণীর প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জিন্নাত হোসেন ইমনের জীবন এখন সংকটাপন্ন। প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মালবাহী ট্রাকের চাকা পিষে দেয় তার এক পা। এরপর থেকে হাসপাতালের বেড যেন আপন করে নিয়েছে ইমনকে। 

কান্নাজোড়িত কণ্ঠে আড়োষ্ঠ জিন্নাত হোসেন ইমন কাপা কাপা মেডিভয়েসকে বলেন, আমার মতো তরুণদের বাইকের প্রতি খুব বেশি আকৃষ্ট হওয়া ঠিক না। বাইক সখের হলেও পুরো জীবন নষ্ট হয়ে যাবে, বাইক জীবন ধংস করে দেয়। আমার তো অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। আমার একটা পা কেটে ফেলতে হয়েছে। জীবনে একটা উদ্দেশ্য ছিল সেটাও হারায় ফেলছি। 

ছেলের এমন পরিণতিতে নিরবতা নেমেছে মায়ের কণ্ঠে। বাবার চোখেমুখে হাতাশার ছোঁয়া। জিন্নাত হোসেন ইমনের বাবা মেডিভয়েসকে বলেন, আমার ছেলেটার এখন লাইফ শেষ। ওর দুইটা হাত ভাঙ্গা, ডান পাও ভাঙ্গা আর বাম পা কেটে ফেলতে হয়েছে। আগামীতে তার ভবিষ্যতের জন্য যতটুকু করা দরকার বাবা হিসেবে আমি করে যাচ্ছি।

প্রতিনিয়ত বাইক দুর্ঘটনায় আহত এমন অসংখ্য রোগী আসেন দেশের একমাত্র পঙ্গু হাসপাতাল তথা জাতীয় ট্রমাটোলজি এবং অর্থোপেডিক পুনর্বাসন ইনস্টিটিউট, নিটোরে। যাদের অধিকাংশই মোটরসাইকেল আরোহী। 

পরিসংখ্যান বলছে, সড়কে নিহতদের ৩০ ভাগই এসব মোটরসাইকেল আরোহী। বুয়টের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট বলছে, শুধু ২০২০ সালেই ১ হাজার ৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৯৭ জন ব্যক্তি। আর আহতরাও চরম জখম নিয়ে ভর্তি হন হাসপাতালগুলোতে।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহতদের অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে বাংলাদেশ স্পাইন সোসাইটির সেক্রেটারি জেনারেল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পাইন সার্জারি, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ারুল ইসলাম মেডিভয়েসকে বলেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সাধারণত দুই ধরনের দুর্ঘটনা হয়ে থাকে। প্রথমত, যিনি বাইক চালান তিনি এক ধরনের আঘাত পান আর যারা চালকের পেছনে থাকেন তারা আরেক ধরনের আঘাত প্রাপ্ত হন। সাধারণত যিনি ড্রাইভার থাকেন তিনি গুরুতর আহত হন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাইকের চালকের মাথায় প্রচন্ড আঘাত পান ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি স্পটেই মারা যেতে পারেন এবং অনেক সময় সেটিই ঘটে থাকে। বাইকের পিছনে যারা থাকেন তাদের সাধারণত হাত-পা ভাঙ্গে, কমোরে আঘাত পান, ঘাড়ে আঘাত পান। এমনকি অনেক সময় তাদেরও মাথায় প্রচন্ড আঘাত লাগে।   

অতিউৎসাহী আর সন্তানের মন রক্ষায় অপ্রাপ্ত বয়স্কদের হাতে মোটরসাইকেলের চাবি তুলে দেওয়া থেকে বিরত থাকার কথা বলেন তিনি।

অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলেটি যতদিন প্রাপ্তবয়স্ক না হবে, ভালোমন্দ বোঝার বয়স না হবে ততোদিন তার হাতে বাইক কেন কোনও কিছুরই চাবি তুলে দেওয়া উচিত না। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশের মধ্যে ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং পাঠাও বা উবারের অধিকাংশ চালকই অশিক্ষিত ফলে তারা নিয়মকানুন সম্পর্কে তারা অজ্ঞ। এছাড়া এদের অধিকাংশ বাইকের লাইসেন্স নাই। 

সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে আইনের মাধ্যমে মটরসাইকেলের গতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগের কথা বলেন অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ারুল ইসলাম।

 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক