ঢামেকে খাবার বিলের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি চিকিৎসকদের, প্রচারিত সংবাদের প্রতিবাদ

মো. মনির উদ্দিন: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে চিকিৎসকসহ দুই হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য মাসে ২০ কোটি টাকা খরচের বিষয়ে প্রচারিত খবরের প্রতিবাদ জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলেন, খাওয়া বাবদ এতো টাকা খরচ করা হলে প্রতিবেলায় তাদের বুফে খাওয়া-দাওয়া করা সম্ভব হতো। ভুতুড়ে এ বিলের সঙ্গে চিকিৎসকদের সম্পৃক্ততা নাই উল্লেখ করে এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সঠিক তথ্য প্রকাশের দাবি জানান তারা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) প্রধান সমন্বয়ক ডা. নিরুপম দাশ মেডিভয়েসকে বলেন, ‘এখানে চিকিৎসকদের মাসব্যাপী কি কি খাওয়ানো হয়েছে, তা আমরা দেখেছি। তাদেরকে যে মানের খাবার দেওয়া হয়েছে, তাতে ২০ কোটি টাকা কিভাবে খরচ হলো? এক মাসে এত টাকা খরচ করতে কমপক্ষে ১০ লক্ষ ডাক্তারকে খেতে হবে। এত টাকা খরচ দেখিয়ে মূলত ডাক্তারদের ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুই হাজার ডাক্তার যদি ২০ কোটি টাকার খাবার খান তাহলে প্রতিজনে ১৬৬৬ করে খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু যে মানের খাবার তারা পেলেন তা ৫০০ টাকায় পাওয়া যাবে। এখানে চিকিৎসকদের দায়বদ্ধতা আসা অমূলক। এই মানের খাবার দিয়ে ২০ কোটি টাকা কিভাবে খরচ হলো এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে জবাব দিতে হবে। এতো টাকা খরচ হলে তাঁরা প্রতিবেলায় বুফে খেতে পারবেন। আমরা এটা কোনোভাবেই মানতে পারছি না যে, দুই হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য ২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এটার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া জরুরি।’
টিম বিডিএফ চেয়ারম্যান ডা. মো. শাহেদ রফি পাভেল এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘গত দুইদিন ধরে একটি খবর ভাইরাল হচ্ছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল দুইশ’ চিকিৎসকের জন্য এক মাসে ২০ কোটি টাকা খরচ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘গত ২ মে থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কোভিড-১৯ এর রোগী ভর্তি শুরু করে। বর্তমানে সাত শতাধিক রোগী এ ইউনিটে ভর্তি আছে। দুই হাজার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী দুই মাসের থাকা, খাওয়া ও যাতায়াতের জন্য হাসপাতাল জুন শেষের বাজেট চেয়েছেন ২০ কোটি টাকা। সরকারি বরাদ্দ একজন চিকিৎসকের তিন বেলা খাবারের জন্য ৫০০ টাকা। তথাকথিত রিপোর্টে বলা হলো, দুইশ’ চিকিৎসক এক মাসে খরচ করেছে ২০ কোটি টাকা। সবাই ট্রল করলো যার যেমন অংকে জ্ঞান আছে সেভাবে। বিচিত্র সব মানুষ জন।’
এই পোস্টের কমেন্ট সেকশনে ডা. মো. হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি অনেক দূর গড়িয়েছে। আজ জাতীয় সংসদে পর্যন্ত আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে আগেই বিষয়টির প্রতিবাদ করা উচিত ছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এখন তো পাবলিকের কাছে এ ম্যাসেজ পৌঁছে গেছে এক মাসে করোনাকালে শুধুমাত্র ঢামেকের ডাক্তাররা খাবার বিল বাবদ বিশ কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে। এমনও কথা শুনতে হয়েছে, ভালো হোটেলে ইচ্ছে মতো খেয়ে তারা এমন বিল উঠিয়েছে।’
কমেন্টে ডা. শোয়াইব জাহিদভি বলেন, ‘খুব বাজেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তত্য যাচাই না করে স্বাস্থ্য বিষয়ক এ রকম সংবাদ যাতে উপস্থাপন না করে, এজন্য এখন থেকেই এই বিষয়ক প্যানেল রাখলে ভালো হয়। নিউজগুলো খুবই স্পর্শকাতর হয়।’
একই পোস্টে কমেন্ট করেন হোটেল রিজেন্সিতে অবস্থানরত ডা. তারিক আহাসান। সেখানকার খাবারের মানহীনতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হোটেল রিজেন্সির খাবার। রং দেখে খাবারের মান বোঝা যাবে না। মান বুঝতে হলে স্বাদ নিতে হবে। খাবার খাওয়াকে তারা অত্যাচারের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। কোয়ারেন্টাইন শেষ হলে বাঁচি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুলশানের হোটেল স্ট্রিং হিলে অবস্থানরত একজন চিকিৎসক মেডিভয়েসকে বলেন, খাবার-দাবারের মান একেক হোটেলে একেক রকম। এটা নির্ভর করে আমরা আসলে কোথায় অবস্থান করছি। এখানে দুই লিটার একটি পানির বোতলের দাম রাখা হয় ১২০ টাকা, যা বাইরে মাত্র ত্রিশ টাকা। হোটেলের হিসাবটা আলাদা। আমাদের খাবারের মান মোটামুটি ভালো। খাবার বাবদ যত খরচ দেখানো হয়েছে, এতো আসার কথা না। আমাদের সকালের নাস্তায় দুটি পরটা, একটি ডিম ও সবজি থাকে। এতে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা আসতে পারে। দুপুরে একটি এক প্লেট ভাত, ভর্তা, ডাল আর মাছ অথবা মুরগি দেওয়া হয়। এজন্য সর্বোচ্চ আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ টাকা বিল হতে পারে। এভাবে রাতের খাবারে সম-পরিমাণ খরচ হবে। এ হিসেবে দিনে সর্বোচ্চ ৭-৮শ’ টাকা আসতে পারে। সেখানে দিনে দেড় হাজারের উপরে খরচ দেখানো হয়েছে, এটা অভাবনীয়।’
