২৯ জুন, ২০২০ ০৭:১৯ পিএম

করোনা পরীক্ষায় ফি নির্ধারণ: বিশেষজ্ঞদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

করোনা পরীক্ষায় ফি নির্ধারণ: বিশেষজ্ঞদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

মো. মনির উদ্দিন: করোনাভাইরাসের পরীক্ষা এত দিন বিনামূল্যে করার সুযোগ থাকলেও এবার ফি নির্ধারণ করেছে সরকার। আজ সোমবার (২৯ জুন) স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা এ সংক্রান্ত এক পরিপত্রে বলা হয়েছে, বুথে গিয়ে নমুনা দিয়ে পরীক্ষা ও হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের জন্য ২০০ টাকা লাগবে। তবে বাসা থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার ফি ধরা হয়েছে ৫০০ টাকা।

এমন সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক ও সময়োপযোগী বলে উল্লেখ করেছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। তাদের মতে, এ সিদ্ধান্তে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষার হার কমার পাশাপাশি রাষ্ট্রের অহেতুক খরচও কমবে। তবে এতে পরীক্ষার হার কমে গিয়ে এ মহামারী আরও ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন কেউ কেউ। তারা বললেন, এর মাধ্যমে কতিপয় সুবিধাবাদী ব্যক্তির অপ্রয়োজনীয় নমুনা পরীক্ষা বন্ধ করতে গিয়ে দরিদ্র মানুষকে বেকায়দায় ফেলা হলো। 

নমুনা পরীক্ষায় ফি নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া মেডিভয়েসকে বলেন, ‘সরকারের একটি সক্ষমতা থাকতে হবে। কয়েক লাখ পরীক্ষা হলো, এতে কয়েকশ’ কোটি টাকা ব্যয় হয়ে গেলো। এখন অনেকে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে পরীক্ষা করাচ্ছে। আমাদের ফিভার ক্লিনিকে অনেকে এসে পীড়াপীড়ি করে বলেন, আমার পরীক্ষা করিয়ে দেন জ্বরে ভুগছি। অনেক সময় জ্বর না থাকলেও মিথ্যা কথা বলে। এ সিদ্ধান্তের ফলে এগুলো অন্ততপক্ষে বন্ধ হবে। এ পরীক্ষা একটি ব্যয় সাপেক্ষ বিষয়। আমি মনে করি, এজন্য প্রথম থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ধরে দেওয়া উচিত ছিল। এ আপদকালীন সময়ে সরকার যদি বিনা পয়সায় পারে তাহলে ভালো, অন্যথায় সামান্য কিছু নিতে পারে। কারণ এটির অপব্যবহার হচ্ছে। আমরা এপ্রিলের ১ তারিখ থেকে ফিভার ক্লিনিক চালাচ্ছি। অনেকে অযথা বিরক্ত করছে। এসব ঠেকানো দরকার।’

এ প্রসঙ্গে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান মেডিভয়েসকে বলেন, নমুনা পরীক্ষা হয়েছে—এমন ব্যক্তিদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একজন ব্যক্তি বিনা কারণে ৬/৭ বার পরীক্ষা করিয়েছেন। এ পরীক্ষা তো যথেষ্ট ব্যয় সাপেক্ষ, এটা এভাবে চলতে থাকলে অহেতুক সরকারকে বিশাল একটি খরচ বহন করতে হতো, যা অপচয়। করোনার এ দুঃসময়ে এই টাকাটা অনেক যৌক্তিক কাজে ব্যয় করা যাবে। 

এতে পরীক্ষার হার কমে গিয়ে এ মহামারী আরও ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না না, এজন্য করোনা সংক্রমণে কোনো প্রভাব পড়বে না। যার উপসর্গ দৃশ্যমান হবে, তিনি নিজের তাগিদেই গিয়ে পরীক্ষা করাবেন। জনগণের কল্যাণে অঙ্গীকারাবদ্ধ এ সরকার মানুষের ওপর চাপ পড়বে—এমন কোনো ফিও নির্ধারণ করেনি।’

এ প্রসঙ্গে বিএসএমএমইউ পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আহমেদ আমিন মেডিভয়েসকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি দুই আঙ্গিকে চিন্তা করি। একটি হলো, আমার হাসপাতালে ফ্রি দেওয়া হচ্ছে। এখানে এমন ঘটনা আছে কেউ কেউ চারবার, পাঁচবার করেছে। ওর মনে হয়েছে—পাশ দিয়ে যাচ্ছি, একটি পরীক্ষা করে নিই। অথবা অনলাইনে সুযোগ পাচ্ছি, একটু করে নিই। আবার যখন মাত্র ৫ টাকা নির্ধারণ করা হলো, তখন দেখা যায় অপ্রয়োজনীয় অনেকে আর আসছেন না। এ রকম সিদ্ধান্ত মন্দ হবে না।’

তবে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ ভিন্নমত শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ইন্টার্নাল মেডিসিন বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. রিদওয়ানুর রহমানের কণ্ঠে। 

তিনি বলেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্তে পরীক্ষার হার কমে যাবে। ফলে রোগীদের আইসোলেট করা না গেলে রোগটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।

অধ্যাপক ডা. রিদওয়ানুর রহমান মেডিভয়েসকে বলেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে পরিস্থিতি বর্তমানের চেয়ে আরও খারাপ হবে। এটা একটি দুর্যোগ-মহামারী। দুর্যোগ-মহামারী আইনে বলা আছে, এ দুর্যোগ সামাল দেওয়ার পুরো দায়িত্ব সরকারের। একটি ক্লিনিকের ডায়াগনোসিস, চিকিৎসা, প্রিভেনশনসহ সব কিছু সরকারের তরফ থেকে করা হবে। এখানে ফি নির্ধারণ করাটা অযৌক্তিক। এ সিদ্ধান্ত করোনা নিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে যাবে। কেউ কেউ হয় তো এ ফি দিয়েই পরীক্ষা করাবে। কিন্তু অনেকে তিন মাস ধরে কোনো উপার্জন করতে পারছে না, তারা এ টাকা দিয়ে পরীক্ষা করাতে পারবে না। 

এ পরীক্ষা ব্যয় সাপেক্ষ হওয়ায় সরকার এর মাধ্যমে কিছু টাকা তুলে আনার চেষ্টা করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, কিন্তু এটা সাধারণে জন্য ভালো হবে না। এ সিদ্ধান্ত কারো মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলার মতো। মানুষকে উৎসাহিত করে পরীক্ষা করে আইসোলেশনে নেওয়ার যে পদ্ধতি আছে, এ সিদ্ধান্ত এর বিপক্ষে যাবে। সারা দুনিয়াতেই মানুষ সহজে পরীক্ষা করাতে চায় না। এখন পরীক্ষা না করলে আইসোলেট হবে না, আর আইসোলেট না হলে রোগটা নিয়ন্ত্রণে আসবে না। এটি আইসোলেশন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে। করোনা নিয়ন্ত্রণের তিনটি পিলার হলো—লকডাউন, টেস্ট আইসোলেশন ও ট্রেস কোয়ারেন্টাইন। সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তে একটি পিলার গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

তিনি আরও বলেন, কোনো কোনো ব্যক্তির অপ্রয়োজনীয় নমুনা পরীক্ষা বন্ধ করতে গিয়ে সবাইকে বঞ্চিত করা ঠিক হবে না। কিছু সুবিধাবাদী লোককে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ নেওয়া অযৌক্তিক। যারা বারবার পরীক্ষা করছে তারা কাউকে না কাউকে প্ররোচিত করে এটা করছে। ওদের পক্ষে ৫০০ টাকা কোনো ব্যাপার না। ওদেরকে ঠেকাতে গিয়ে দরিদ্র মানুষকে বেকায়দায় ফেলা হলো।

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : করোনাভাইরাস
‘ছেলেরা কেন পিছিয়ে, কারণ অনুসন্ধান করুন’

অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের গালমন্দ নয়: প্রধানমন্ত্রী

‘ছেলেরা কেন পিছিয়ে, কারণ অনুসন্ধান করুন’

অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের গালমন্দ নয়: প্রধানমন্ত্রী

  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক