১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০৪:০৮ পিএম

‘ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি টাকা দিয়ে ওষুধ লেখায়, এটা অপরাধ’

‘ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি টাকা দিয়ে ওষুধ লেখায়, এটা অপরাধ’
অধ্যাপক ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হক। ছবি: তাওহিদুল ইসলাম

মেডিভয়েস রিপোর্ট: চিকিৎসকদের রেফারেল ফি’র চিন্তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক প্রখ্যাত চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হক। বলেন, অনৈতিক উপার্জনের জন্য মরণের পর জবাবদিহি করতে হবে। তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকদের তিনটি গুণ অর্জন করতে হবে, তাহলো: আদর্শ, সততা ও রোগীর প্রতি দায়িত্ববোধ।

আজ সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) চক্ষুবিদ্যায় ২০ থেকে ২৩ সাল পর্যন্ত পোস্ট গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করা নবীন বিশেষজ্ঞদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান এসব কথা বলেন তিনি।

অনৈতিক রোজগারের জন্য জবাবদিহি করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের মরতে হবে। এসব কথা মাথায় রাখতে হবে। মন থেকে রেফারেল ফি’র চিন্তা ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে।’

অধ্যাপক ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হক বলেন, ডাক্তারদের মাস শেষে ১০ হাজার টাকা দিয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলো নিজেদের ওষুধ লেখায়, এটা অপরাধ।

তিনি বলেন, ‘আমার ৪০ বছরে অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, আমি কোনো চশমার দোকান, কোনো ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে পয়সা নেইনি। এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি।’

নিজকে গঠন করতে পারলে রেফারেল ফি’র প্রয়োজন পড়বে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, দক্ষতা অর্জন করতে পারলে রোগীরাই খুঁজে বের করবে। এজন্য অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে।

বাংলাদেশে রেফারেল পদ্ধতি কমিশন নির্ভর হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, হাসপাতালের সামনে ফার্মেসি, সেখানে হাসপাতালের বিভিন্ন স্টাফ জড়িত। ডাক্তার, আয়া ও নার্সসহ অনেকেই জড়িত। ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ও ডাক্তাররাও রেফারেল ফি’র সাথে জড়িত। কিন্তু সারা জীবনেও আমি এগুলো করিনি। এটা কেন দরকার হবে? রোগীর সঙ্গে চিকিৎসকের সম্পর্কটা বিশ্বাসের হলে এগুলো দরকার পড়বে না।

চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে রেফারেল ফি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখানে লেন্সের ব্যবসা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। বিদেশি লেন্সের কথা বলে সন্ধ্যায় এসব পয়সা ভাগ করা হতো।

অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নীরিক্ষা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোগীর একটু মাথা ব্যথা হলেই সিটি স্কান, এমআরই দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, অপ্রয়োজনীয় অনেক সার্জারি হয়। আর এতে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। এমনকি মৃত্যুও হয়। 

ইনস্টিটিউটের পরিচালক থাকাকালীন রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার স্বার্থে এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ নেন বলেও জানান অধ্যাপক দীন মোহাম্মদ নুরুল হক।

অনুষ্ঠানে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, ‘মিশন ভিশন নিয়ে আমরা চক্ষু বিশেষজ্ঞ হয়েছি। আমরা সমাজকে চিকিৎসার সাথে সম্পৃক্ত না করতে পারলে মিশন ভিশন বিফলে যাবে। আমরা যা পারিনি, তোমরা (নবীন চিকিৎসকরা) তা আগামী দিনে করবে।’

বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসা সমিতির (ওএসবি) মহাসচিব নোট স্পিকার অধ্যাপক ডা. দীপক কুমার নাগ বলেন, ‘আজ নতুন চক্ষু চিকিৎসকদের সংবর্ধনা ও অনুপ্রেরণা দিতে এসেছি। একই সঙ্গে তোমাদের থেকে নিতে এসেছি অনুপ্রেরণা।’

নবীন চিকিৎসকের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নতুন আধুনিক প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হতে হবে। জানতে হবে, শিখতে হবে।

পারস্পরিক সহযোগিতা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জ্যেষ্ঠদের পরামর্শ নিতে হবে। অনুজদের সহযোগিতা করতে হবে। তাহলেই প্রত্যাশা অনুযায়ী রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

গবেষণা ছাড়া ডিগ্রি শেষ করা যাবে না জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের চক্ষু সেবা বিশ্বা মানের, কিন্তু বাংলাদেশের গবেষণার কাজ আমরা তেমন কিছু করতে পারিনি।’

অধ্যাপক ডা. দীপক কুমার নাগ বলেন, ‘কোনো সার্জারিতে কারও দুর্বলতা থাকলে, সে এই সার্জারি করবে না। অন্যজনকে দিয়ে সার্জারি করিয়ে নিজের নাম লেখা এবং এখান থেকে রেফারেল ফি নেওয়া নীতি-নৈতিকতার সাথে যায় না।

ফার্মাসিটিক্যালস কোম্পানি থেকে টাকা নেওয়া কোনোভাবেই উচিত নয় বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।

এ সময় সরকারি হাসপাতালে লোকবল সংকট আর বেসরকারিতে ব্যবসায়ী মনোভাবের কারণে চক্ষু রোগের সেবা উপেক্ষিত বলে মন্তব্য করেন নবীন বিশেষজ্ঞরা।

নিজেদের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে নবীন চিকিৎসকরা বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে লোকবল সংকট। এতে রোগী সন্তুষ্ট হচ্ছে না। আর প্রাইভেট হাসপাতালের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ব্যবসায়ী মনোভাব এবং বেসরকারি হাসপাতালে চক্ষু বিভাগকে অত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় না।’

এমইউ

 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক