তামাকজাত পণ্যে আয়ের চেয়ে চিকিৎসা ব্যয় বেশি

মেডিভয়েস রিপোর্ট: সরকারের তামাকজাত পণ্য থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব পায়, তার চেয়ে তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় খরচ অনেক বেশি হয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ।
আজ বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বর্তমান অবস্থা ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা এ মন্তব্য করেন তিনি। এই আয়োজনে সহযোগিতা করে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন।
ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আইন না থাকায় মানুষ অন্যায় করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে। আইন থাকলে মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করবে। ব্যবসায়ীরা যার যার স্বার্থ দেখে। অথচ এ খাত থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায়, তার কয়েকগুণ বেশি টাকা তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় খরচ হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিগারেট মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীর আক্রান্ত করে। ধূমপান প্রতিরোধে আইন করতে হবে। আইন করতে গেলে প্রতিবন্ধকতা থাকবেই। তারপরও এ আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। তামাক, জর্দা, ও গুল এগুলো নিষিদ্ধ করতেই হবে।’
২০৪১ সালে ধূমপান মুক্ত দেশ গড়া প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই লক্ষ্য পূরণ করতে আমাদের চেষ্টা থাকবে। আমি আশা করি, প্রধানমন্ত্রীকে বুঝাতে পারলে, তিনি আইনটি করে ফেলবেন। করোনা ও ডেঙ্গুতে এমনকি মানুষ মারা যায়। তামাকজনিত রোগে প্রতিদিন ৪৫০ জন মারা যায়। এটা তো মারাত্মক।’
মতবিনিমিয় সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম বলেন, ‘আইনে যাই থাকুক, সব থেকে বড় কথা জনসচেতনতা বাড়ানো। আইন দিয়ে সব কিছু হয় না। দোকানে বিড়ি সিগারেট খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করতে হবে।’
চিকিৎসকদের মধ্যে বড় অংশ নিয়মিত ধূমপান করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকরা যাতে কোনোভাবেই ধূমপান না করে, তা শক্তভাবে দেখতে হবে। ধূমপানের ক্ষেত্রে আমরা নানা কারণ তুলে ধরি। কিন্তু কোনো কারণই ধূমপান করা যাবে না। আমরা প্রচারের ক্ষেত্রেই জোর দিতে চাই। এ জন্য সরকারি বিজ্ঞাপনে ধূমপানের সতর্কতা বা ভয়ের একটা লাইন যুক্ত করা, স্বাস্থ্য বিষয়ক সকল প্রচারে ধূমপান সতর্কতা থাকা উচিত।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্তি মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ‘টোবাকোর উপরে ট্যাক্স ও সিগারেটের দাম বৃদ্ধি করা উচিত। ট্যাক্স ডাবল করা গেলে ৮-১০ হাজার কোটি টাকা এই খাত থেকে স্বাস্থ্যের বাজেটে আসতে পারে। পরোক্ষ ধূমপানে ক্ষতির দায় আমাদের নিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য বক্তরা জানান, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনের গুরুত্বপূর্ণ সময় এখন। এ জন্য এই ডেঙ্গুর প্রকোপের মুহূর্তেও তামাক নিয়ে কথা বলছি। বাংলাদেশে অসংক্রমক রোগই এখন মূল সমস্যা। অসংক্রমক রোগের মূলই তামাকের ব্যবহার। তবে দেশে তামাকের ব্যবহার কমে এসেছে, কিন্তু তারপরেও দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার বেশি। পরোক্ষ ধূমপানে ব্যাপক লোক আক্রমণ হচ্ছে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুরাও তামাক জনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।
তারা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের কথা বললেই সরকারের রাজস্ব আদায় নিয়ে কথা উঠে। কিন্তু সরকার বছরে এ খাত থেকে যে রাজস্ব পায়, তার থেকে ২৭% খরচ বেশি হয় তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার জনিত রোগের চিকিৎসায়।
টিআই/এএইচ/