৪৪তম বিসিএসে প্রশাসনে সুপারিশপ্রাপ্ত রামেকের ডা. সাজিদ, ক্যাডার পরিবর্তনের কারণ

মেডিভয়েস রিপোর্ট: ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) বিডিএস ২৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. সাজিদুল ইসলাম দুলু। তিনি এ বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে ২০৯তম হয়েছেন।
গত ৩০ জুন রাতে ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে এক হাজার ৭১০টি শূন্য পদের মধ্যে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত ১৬৯০ জনকে নিয়োগের জন্য সাময়িকভাবে মনোনীত করে কমিশন। তবে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী না পাওয়ায় কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারের ২০টি পদে প্রার্থী মনোনয়ন করা সম্ভব হয়নি।
এ বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ডা. সাজিদ মেডিভয়েসকে বলেন, ‘আল্লাহ তা’লা যখন দেন, তখন যেন সব ঢেলে দেন—এমন অনুভূতি হয়েছিল, যখন আমি রেজাল্টটা পেলাম। সত্যি বলতে আমার হাত-পা কাঁপছিল তখন। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, আমার বন্ধুকে বলেছিলাম, আমার রুলটা নিয়ে তুই দেখ, আসলে আমি ঠিক দেখছি কিনা! ও জানালো, তুই যা দেখেছিস, তা ঠিকই আছে।’
একজন চিকিৎসক অন্য ক্যাডারে চলে যাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বিডিএস নিয়ে পাস করেছি। আমার উদ্দেশ্য তো সেবা করা, তাই না? সেই সেবা যদি আরেকটু বড় পরিসরে দিতে পারি, তাহলে সেটা অবশ্যই আমার কাছে বেশি লাগার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি যদি টেকনিক্যাল থেকে জেনারেল খাতে যেতে পারি, তাহলে তাহলে সেবাটা আরেকটু বড় খাতে দিতে পারবো। তখন স্বাস্থ্যসেবায় প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিতে না পারলেও আমি পরোক্ষভাবে অবদান রাখতে পারবো। এ ছাড়া অন্যান্য সেবার যেসব খাত রয়েছে, সেখানেও আমি জনগণকে সাহায্য করতে পারবো। সেজন্য প্রশাসনের দিকে আমার মনোযোগটা বেশি ছিল।’
এ ছাড়াও অন্য কোনো কারণ ছিল কিনা, যেমন—স্বাস্থ্যক্যাডারে কর্মরতরা আন্তঃক্যাডার বৈষম্যের শিকার? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটাও আছে। খুব সম্ভবত ২৪তম বিসিএসের একজন চিকিৎসকের এখন পর্যন্ত পদোন্নতি হয়নি। অথচ উনার সময়ের জেনারেল ক্যাডারের কর্মকর্তারা হয় তো জেলা প্রশাসক হয়ে গেছেন। এটা তো আমাকে খানিকটা হলেও বিস্মিত করেছে, প্রভাবিত করেছে। সেই সাথে আরেকটি বিষয় হলো, কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই আমি হেলথ ক্যাডার থেকে দূরে সরে গিয়েছি। যেমন—আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটা পুরোপুরি কার্যকরী না। এ দেশের চিকিৎসকরা যোগ্য হলেও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা যা রয়েছে, যেমন—ডায়াগনোস্টিকসহ অন্যান্য সিস্টেম, সেগুলো সুন্দর না। হতে পারে সেটা সিন্ডিক্যাট বা অন্য কোনো কারণে। অর্থাৎ রোগী সেবা সহজে বা আরও আধুনিক উপায়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এখনো একটা পরীক্ষা করাতে বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াতে হয়, অথচ ওয়ানস্টপ সার্ভিস হলে এই কষ্ট থাকে না। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ওই পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারিনি। সুন্দর সেবা, নাগরিকদের কাঙিক্ষত চিকিৎসা, তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী দিতে পারবো না। তা ছাড়া কর্মস্থলে নিরাপত্তাহীনতা তো আছেই। এসব কারণে ক্যাডার পরিবর্তন করেছি।’
প্রশাসন ক্যাডারে গিয়ে নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ পাবেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই পাবো। চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে এ ব্যাপারে একজন জেনারেল শিক্ষিতের চেয়ে ভালো জানবো যে, এখানে মূলত সমস্যা কোথায়, ঘাটতিটা কোথায়? ফলে নিজের পেশাগত অভিজ্ঞতার কারণে ভালো ভূমিকা রাখতে পারবো। কোনো নীতি নির্ধারণের সময় আমি একটি ভূমিকা পালন করতে পারবো। ফলে যেটা আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য সমস্যা, সেটা দূর হবে বলে আমি আশাবাদী। কমিউনিটি হেলথের ব্যাপারে ধারণা থাকায় কোনো স্বাস্থ্য দুর্যোগের সময় নির্দ্বিধায় পদক্ষেপ নিতে পারবো, যা অন্যান্য জেনারেল শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে আসা কর্মকর্তা নিতে হয় তো অতটা সক্ষম হবেন না।’
বেড়ে ওঠার গল্প
ডা. সাজিদুল ইসলাম দুলুর বাড়ি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার চরাঞ্চলের পাখিউড়ায়। পার্শ্ববর্তী মধ্য চরসাজাই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তিনি প্রাথমিকের পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। পরে কোমরভাঙ্গি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে জিপিএ-৫ নিয়ে এসএসসি এবং জাদুরচর মডেল কলেজ থেকে ২০১৪ সালে একই স্কোর নিয়ে এইচএসসি পাস করেন। সাজেদুল ইসলাম ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ডেন্টালে ভর্তি হন। সেখান থেকে ২০১৯ সালে তার বিডিএস সম্পন্ন হয়। ২০২০ সালের জুনের দিকে ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করেন।
এর পর থেকে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন ডা. সাজেদ। এরই ধারাবাহিকতায় ৪৪তম বিসিএসে ক্যাডার পরিবর্তন করেও সাফল্য পান তিনি।
এমইউ/