চিকিৎসক বাবা-শিক্ষিকা মায়ের সন্তান রিফাত জাতীয় মেধায় তৃতীয়

ছোটবেলা থেকেই প্রবল ইচ্ছে ছিল মানুষের সেবা করার। সেই চিন্তা থেকেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তাযকিয়া তাবিয়া রিফাত। চিকিৎসক বাবা ও শিক্ষিকা মায়েরও স্বপ্ন ছিল মেয়েকে চিকিৎসক বানাবেন।
স্বপ্ন ছোঁয়ার পথে পেয়েছেন কলেজ শিক্ষকদের অকৃত্রিম সহযোগিতা ও মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের শিক্ষকদের সযত্ন পরিচর্যা। সেই সঙ্গে নিজের কঠোর অধ্যাবসায় ও সৌভাগ্যের ভেলায় চড়ে বাস্তবায়ন হতে চলেছে রিফাতের ইচ্ছা।
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় ৩য় স্থান অধিকার করেছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের এ কৃতি শিক্ষার্থী।
ফলাফল প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পর মেডিভয়েসকে সেসব গল্পই শুনিয়েছেন আগামীর চিকিৎসক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাহেদুজ্জামান সাকিব, ক্যামেরায় ছিলেন শাফিন আহমেদ।
আকাশছোঁয়া সাফল্যের অনুভূতি
স্বপ্নছোঁয়া সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তাযকিয়া তাবিয়া রিফাত বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, সমস্ত প্রশংশা মহান রাব্বুল আলামীনের জন্য, যিনি আমাকে এত বড় সাফল্য দান করেছেন। অনেক ভালো লাগছে।’
প্রস্তুতির সূচনা যেভাবে
প্রস্তুতির দীর্ঘ পরিক্রমার কথা উল্লেখ করে তাযকিয়া তাবিয়া রিফাত বলেন, ‘আমি ইন্টারমিডিয়েটের মাঝামাঝি সময় থেকে মেডিকেল বিষয়ক প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। তখনও আমার সিলেবাস শেষ হয়নি, তারপরও মেডিকেলের প্রশ্ন দেখে দেখে পড়াশোনা করার চেষ্টা করতাম। এইচএসসির পর থেকে কোচিং শুরু হয়, তখন পুরোদমে প্রস্ততি নিতে শুরু করি।’
দুর্বলতা চিহ্নিতকরণ
নিজের দুর্বলতা চিহ্নিত করতে বেশি বেশি পরীক্ষা দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বেশি বেশি পরীক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে আমার প্রস্তুতিতে যেসব দুর্বলতা ছিল, তা চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি। যত বেশি পরীক্ষা দেওয়া যায়, তত নিজের দুর্বলতাগুলো ধরা পড়ে এবং ওই জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করে সেগুলো সংশোধন করা যায়।’
চিকিৎসক হওয়ার অনুপ্রেরণা
মানুষের সেবা করার আগ্রহ থেকেই চিকিৎসক হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন বলে জানান মেধাবী এ শিক্ষার্থী। তিনি বলেন ‘ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল মানুষের সেবা করার। চিকিৎসা পেশার মাধ্যমে বেশ কাছে থেকেই মানুষের সেবা করা যায়। সেখান থেকেই মেডিকেলে পড়ার অনুপ্রেরণা। এ ছাড়া আমার বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল আমাকে চিকিৎসক বানাবেন, এটাও আমার জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণা ছিল।’
সাফল্যের পেছনে যাদের ভূমিকা
তাযকিয়া তাবিয়া রিফাত বলেন, ‘আমার এতদূর আসার পেছনে সবটুকুই মহান রব্বুল আলামীনের অনেক বড় রহমত। তিনি চেয়েছেন বলেই এতদূর আসতে পেরেছি। এ ছাড়া আমার আব্বু-আম্মু অনেক সাপোর্ট দিয়েছেন, আমার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন। এর পাশাপাশি আমার স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ আমাকে অনেক যত্ন করে এতবড় করেছেন, আমার সাফল্যের পেছনে তাদের অবদানও অনেক। সবশেষে আমার মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের শিক্ষকবৃন্দ আমাকে সঠিক গাইডলাইন দিয়ে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন।’
ইচ্ছে গাইনোকোলজিস্ট হওয়ার
ভবিষ্যতে কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হতে চান এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হবো এটা এখনো ঠিক করিনি, তবে আমার ইচ্ছে আছে গাইনোকোলজিস্ট হওয়ার।’
পড়াশোনায় মায়ের বিশেষ ভূমিকা
পড়াশোনার বিষয়ে পরিবারের সর্বোচ্চ সহযোগিতা পেয়েছেন জানিয়ে রিফাত বলেন, ‘আমার পড়াশোনার বিষয়ে পরিবারে ভূমিকা ছিল অনন্য। বিশেষ করে আমার আম্মু আমার পড়াশোনার ব্যাপারে অনেক যত্নবান ছিলেন। আমার পরিবারের বাকি সবাই পড়াশোনার বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতেন। এর পাশাপাশি আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক বেশি ভূমিকা রয়েছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষকদের থেকে আমি অনেক বেশি সাপোর্ট পেয়েছি, যা আমাকে এত দূর নিয়ে এসেছে।’
ভর্তি পরীক্ষার সাফল্য ধরে রাখতে জরুরি
নিজেকে পড়াশোনার মধ্যে দৃঢ় রাখতে পারলে ভর্তি পরীক্ষার সাফল্য ধরে রাখা সম্ভব বলে জানান জাতীয় মেধায় ৩য় তাযকিয়া তাবিয়া রিফাত। তিনি বলেন, ‘মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার সাফল্য অনেকে ধরে রাখতে পারেন না, এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো পড়াশোনার ধারাটা ধরে রাখতে না পারা। এ ছাড়া বিপথে চলে যাওয়া কিংবা নৈতিক স্থলনও সাফল্য ধরে রাখতে না পারার কারণ হতে পারে। নিজেকে পড়াশোনার মধ্যে দৃঢ় রাখা এবং নৈতিক স্থলন যেন না ঘটে সে বিষয়ে খেয়াল রাখলে সাফল্য ধরে রাখা সম্ভব হবে।’
করোনায় পড়ায় যুক্ত থাকার কৌশল
করোনাকানীন পরীক্ষার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তাযকিয়া বলেন, ‘করোনার মধ্যে দুইটা মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা হয় এবং দুইটা পরীক্ষার মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। তবে ভালোভাবে পড়াশোনা করলে প্রশ্ন যেভাবেই হোক না কেন ভালো করা সম্ভব। আমি এটা নিয়ে ভয় না পেয়ে শুরু থেকে পড়াশোনায় মনোযোগ দেই এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতাম তাই আমার জন্য খুব বেশি সমস্যা হয়নি।’
দোয়া করতেন ঢাকা মেডিকেলের জন্য
তাযকিয়া তাবিয়া রিফাত বলেন ‘ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম চিকিৎসক হওয়ার। একটু বড় হওয়ার পর থেকেই ঢাকা মেডিকেলের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম। আমার আব্বু-আম্মুও দোয়া করতো। ফাইনালি আমি সুযোগ পেয়েছি, সেজন্য আবারো মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে শুকরিয়া জানাচ্ছি।’
মানব সেবা জীবনোদ্দেশ্য
পেশাগত জীবনে মানুষের সেবা করাই মূল উদ্দেশ্য বলে জানিয়ে এ মেধাবী শিক্ষার্থী বলেন ‘পেশাগত জীবন নিয়ে আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো শুধুমাত্র মানুষের সেবা করাই যেন আমার মূল উদ্দেশ্য হয়। পাশাপাশি আমি গাইনোকোলজি হিসেবে কাঙিক্ষত দক্ষতা অর্জন করতে চাই।’
বেড়ে ওঠা
তাযকিয়া তাবিয়া রিফাতের শৈশব-কৈশোর দুটোই ঢাকায় কেটেছে। শুরু থেকেই পড়েছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজে। এসএসসি ও এইচএসসি দুটোই এখান থেকে সম্পন্ন করেন তিনি।
এসএস/এমইউ
-
১৩ মার্চ, ২০২৩
-
০৬ এপ্রিল, ২০২২