করোনায় সাহায্যের জন্য আমার এ লেখা
করোনাভাইরাস মহামারীকালে এই রমজানে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে রোগীদের সেবায় আপনার দান হিসেবে হাইফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলা (HFNC) দান করতে পারেন। এর মাধ্যমে কষ্ট কমাতে বা বাঁচাতে পারেন কোভিড-১৯ রোগীদের জীবন।
ফেসবুকে অল্প সল্প লেখালেখি করি। আমার নিজস্ব কোন গ্রুপ নেই, তাই ব্যাপক পরিচিতিও নেই। তবে অনেক গ্রুপের সদস্য হয়ে গেছি ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, জেনে- না জেনেই। আমার ফ্রেন্ড লিস্টের বা লিস্টের বাইরে যারা পড়ছেন তাদের সবার কাছে করোনা সময়ে সাহায্যের জন্যই লিখছি। এ সাহায্য প্রার্থনা সকল কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য, একজন সরকারি চিকিৎসক হিসেবে, একজন ভাইরোলজিস্ট হিসেবে।
করোনাভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত রোগ কোভিড-১৯। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন কোন জেলা নেই যেখানে কোভিড-১৯ আক্রান্ত একজন রোগী নেই। রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি কোভিড হাসপাতালের সাধারণ বেড, আইসিইউ, এইচডিইউ, পোস্ট আইসিইউ কোথাও ফাঁকা নেই। রোগীসহ রোগীর আত্মীয়-স্বজন এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটছেন। অক্সিজেনের জন্য হাহাকার। হ্যাঁ, যে অক্সিজেন আমরা আল্লাহর দয়ায়, রহমতে বিনা মূল্যে জন্মের পর থেকেই পাচ্ছি সেই অক্সিজেন কোভিড-১৯ রোগীদের শ্বাসতন্ত্র নিজে থেকে নিতে পারছে না। তাঁর যে সাহায্য দরকার।
কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে সরাসরি কাজ করে এমন কোন এন্টিভাইরাল ড্রাগ এখন পর্যন্ত স্বীকৃত নয়। হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয় একেকটি গাইড লাইন মেনে। সিম্পটোমেটিক রিলিভ বা উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা সেখানে প্রাধান্য পেয়েছে। আর সে সাথে নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সাপ্লাই প্রয়োজন হয়, যা রোগীর পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়।
হাই-ফ্লো-ন্যাসাল ক্যানুলা আগে অ্যাক্যুইট রেসপাইরেটরি ফেইলিউরে শিশুদের মধ্যে প্রয়োগ করে জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। বর্তমানে এটি কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে রোগীদের শ্বাস কষ্ট কমানো আর মৃত্যুর হার কমানো গেছে। তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বারবার সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে ব্যাপকভাবে হাই-ফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলার ব্যবস্থা করার বিষয়ে মত প্রকাশ করেছেন। হাই-ফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলাতে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় শতভাগ আর্দ্রতা বজায় রেখে ৬০লিটার/মিনিট পর্যন্ত অক্সিজেন সাপ্লাই দেওয়া সম্ভব। আর আক্রান্ত রোগীকে যদি শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ার (উপসর্গ: ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া, প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট, বুকে প্রচণ্ড ব্যথা, অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমতে শুরু করা ইত্যাদি) সাথে সাথে যদি অন্যান্য মেডিসিনের সাথে হাইফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলা ব্যবহার করা হয় তো মৃত্যুর হার অনেকাংশেই কমানো সম্ভব।
সরকারি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল চালুর পর থেকেই সরকারি এবং বেসরকারিভাবে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষে হাই-ফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলা প্রদান করে ইন্সটল করা হয়। কিন্তু বিশাল জনগোষ্ঠীর এ দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পরা কোভিড-১৯ রোগীদের তুলনায় তা মোটেই পর্যাপ্ত নয়। রাজধানীতে নিজস্ব রোগীদের সংকুলান হচ্ছে না। সেজন্যই, দেশের অন্যান্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল এমনকি বেশি আক্রান্ত এলাকার উপজেলা হাসপাতালেও হাই-ফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলা জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন।
দেশের এই ক্রান্তিকালে, রমজান আসন্ন। অনেকেই রমজান উপলক্ষে দান ছদকা করে থাকেন বেশি নেকি লাভের জন্য। সেক্ষেত্রে বিত্তবান নর-নারী, প্রতিষ্ঠান হাই-ফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলা প্রদান করতে পারেন। একার পক্ষে সম্ভব না হলে একাধিক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এগিয়ে আসুন- জীবন বাঁচানোর এই রকম ভালো কাজের অংশীদার হয়ে যান। সদকায়ে জারিয়া হিসেবে এই যন্ত্র যতদিন মানুষের উপকার আসবে আপনার আমলনামায় নেকি বাড়তে থাকবে।
এই যন্ত্র ব্যবহার করার জন্য টেকনিক্যাল সাপোর্টও দরকার! অনেক রোগীর সাথে আসা এটেনডেন্ট এই যন্ত্র ব্যবহার করতে পারেন না বা ভুল ব্যবহারে নষ্ট করে ফেলেন। এই দামী জীবন বাঁচানোর যন্ত্রটি ব্যবহার সঠিকভাবে শিখে নিন, তারপর ব্যবহার করুন। আজ হয়তোবা আপনার প্রিয় কাল অন্য কারো প্রিয়জনের জন্য এটি প্রয়োজন হতে পারে কিংবা আপনার নিজের ও দরকার হতে পারে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রতিটি ভালো কাজের উত্তম প্রতিদানদাতা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।