কর্নেল অব. অধ্যাপক ডা. জেহাদ খান
এমডি, এমসিপিএস, এফসিপিএস
এফআরসিপি (গ্ল্যাসগো, এফএসিসি (ইউএসএ)
পােস্ট ফেলোশিপ ট্রেনিং ইন কার্ডিওলজি (জার্মান ও ইন্ডিয়া)
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও কার্ডিওলজিস্ট এক্স ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট, সিএমএইচ, ঢাকা।
২০ জানুয়ারী, ২০২১ ১২:৩১ পিএম
আমাদের রক্তনালীর আজব কথা
বিজ্ঞান যতই এগিয়ে যাচ্ছে, সীমাহীন মহাবিশ্বের কোটি কোটি গ্রহ নক্ষত্র থেকে শুরু করে আমাদের শরীরে কোষ (শরীরের ক্ষুদ্রতম ইউনিট বা অংশ) পর্যন্ত সবকিছুতে মহান সৃষ্টিকর্তার অসীম জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ছাপ পরিলক্ষিত হচ্ছে।
‘তোমাদের সৃষ্টি কি অধিক শক্ত ও কঠিন কাজ কিংবা আসমান সৃষ্টি? আল্লাহ্ই তো তা নির্মাণ করেছেন। এর ছাদ অনেক উচ্চে তুলেছেন, অতঃপর তাতে ভারসাম্য স্থাপন করেছেন।’ (৭৯ সুরা আননাযিয়াত ২৭-২৮)
মহান আল্লাহর কাছে মানুষ সৃষ্টি করা কোনো কঠিন কাজ নয়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা মানুষ দেহে অনেক জটিল জিনিসের সন্ধান পাচ্ছেন। আমাদের শরীরে প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন (কোটিতে হিসাব করা কঠিন) কোষ রয়েছে। আমাদের শরীরে অনেক কোষ রয়েছে যেগুলো ৩৫,০০০ প্রোটিন তৈরি করতে পারে। প্রোটিন, ডিএনএ, আরএনএ , জিন ও ক্রোমোসমসহ প্রত্যেকটি জিনিসকে সুক্ষ ও নিখুঁতভাবে প্রোগ্রামিং বা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
‘বলুন, (হে মুহাম্মদ) সমুদ্রগুলো যদি আমার সৃষ্টিকর্তা প্রতিপালকের কথাসমূহ লেখার জন্য কালি হয়ে যায়, তাহলে তা ফুরিয়ে যাবে। কিন্তু আমার সৃষ্টিকর্তা প্রতিপালকের কথা লেখা শেষ হবে না, এ পরিমাণ কালি যদি আমরা এনে লই তবে তাও যথেষ্ট হবে না। (১৮ সুরা আল কাহাফঃ ১০৯)
একবিংশ শতাব্দীর জ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তি মহান সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিরহস্যকে আরও বেশি বেশি উন্মোচিত করছে। শুধু মানুষের হৃদপিণ্ড ও রক্তনালীর উপর গবেষণা ও চিকিৎসার জন্য সারা পৃথিবীতে শত শত প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে হাজার হাজার চিকিৎসক ও গবেষক কাজ করে যাচ্ছেন। আজকের আলোচনায় আমি মানুষের শরীরের রক্তনালীর অপূর্ব বৈশিষ্ট্যের উপর আলোকপাত করতে চাই।
আমাদের প্রত্যেকের শরীরের রক্তনালীর মোট দৈর্ঘ্য হচ্ছে ষাট হাজার মাইল, যা দিয়ে পৃথিবীকে দুইবার পেঁচানো সম্ভব।
আমাদের শরীরে প্রধানত তিন ধরণের রক্তনালী রয়েছে Artery (ধমনী), Vein (শিরা) এবং Capillary (কৈশিক)।
এই রক্তনালীগুলো হৃদপিণ্ডের সাথে দুই ধরণের Circuit বা সংযোগ তৈরি করে। যথা:
১. Pulmonary circuit: যার মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের ডান পাশের দূষিত রক্ত ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে গিয়ে বিশুদ্ধ হয় এবং বিশুদ্ধ রক্ত শিরার মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের বাম পাশে ফিরে আসে।
২. Systemic circuit: এর মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের বাম পাশ থেকে বিশুদ্ধ রক্ত ধমনীর মাধ্যমে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পরে এবং দূষিত রক্ত শিরার মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের ডান পাশে ফিরে আসে।
হৃদপিণ্ড থেকে যে রক্তনালী প্রথম বের হয় তার নাম Aorta বা মহাধমনী, যা প্রায় ১ ইঞ্চি পাশ। এর তিনটি স্তর বা Layer রয়েছে। এর ইলাস্টিক ফাইবার খুব সুসংগঠিত। এই ফাইবার যদি না থাকত তাহলে উচ্চরক্তচাপে, মহাধমনী ফেটে যেত। এর মধ্যম স্তরে অবস্থিত মসৃণ পেশী (Smooth muscle) এর সংকোচন ও প্রসারের মাধ্যমে রক্ত সরবরাহ নিয়ন্ত্রিত হয়। ধমনীর সবচেয়ে ভিতরের স্তর মোজাইকের মতো বেশ মসৃণ ও পিচ্ছিল যা রক্ত চলাচলে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ধমনীর ইলাস্টিসিটির কারণে নিরবচ্ছিন্নভাবে রক্ত প্রবাহ সম্ভব হয়। আমাদের শরীরের অধিকাংশ ধমনীগুলো হাতের, পায়ের এবং শরীরের গভীর অংশে থাকে, যার ফলে এগুলো সহজে আঘাতপ্রাপ্ত হয় না। ধমনীর রক্তচাপ বেশি হওয়াতে এর থেকে রক্তক্ষরণ হলে বিপজ্জনক হতে পারে। তবে এ রক্তনালীগুলো শরীরে কিছু কিছু জায়গায় চামড়ার নিচেই থাকে।
যেমন: কব্জি, কনুই, গলা, কুচকি ও পা ইত্যাদি। এই অবস্থা ডাক্তারদের কাছে বেশ কিছু রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক।
যেমন: হাতের নাড়ী (Pulse) দেখে হৃদপিণ্ডের বেশ কিছু সমস্যা নির্ণয় করা যায়। নবম শতাব্দীর জগৎবিখ্যাত চিকিৎসক ইবনে সিনা তার ‘কানুন ফিত তিব’ বা ‘চিকিৎসার নিয়মাবলী’ বইয়ে নাড়ীর দশটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। যখন ইসিজি বা আধুনিক যন্ত্রপাতি ছিল না, তখন এই নাড়ীর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করে তিনি বেশ কিছু রোগ নির্ণয় করতেন।
প্রসঙ্গত, তার এই বই প্রায় চারশত বছর ইউরোপে প্রধান পাঠ্য বই ছিল। Dr William Osler এর ভাষায় “The Qanun has remained a medical Bible for a longer period than any other work.”
অর্থাৎ “অন্য যেকোনো বইয়ের তুলনায় কানুন দীর্ঘতর সময় মেডিক্যাল বাইবেলরূপে বিবেচিত হয়েছে।”
ধমনী প্রসঙ্গে ফিরে আসি। কব্জি ও কুচকির ধমনী চামড়ার নিচে থাকায় এনজিওগ্রাম, রিং বসানো ও অন্যান্য চিকিৎসা সুবিধাজনক হয়েছে। এগুলো শরীরের গভীর অংশে অবস্থান করলে উল্লেখিত চিকিৎসার পর ধমনীর রক্ত বন্ধ করা কঠিন হয়ে যেত অর্থাৎ হৃদরোগের আধুনিক চিকিৎসার বিস্তার ঘটতো না।
ধমনী (Artery) ক্রমশ সরু হয়ে আর্টেরিওল (Arteriole) এ পরিণত হয়। ধমনী ও শিরার মাঝে Capillary (কৈশিক) এর অবস্থান। আর্টেরিওলে মাংসপেশীর শক্তিশালী স্তর থাকে যা ভাল্ভ (Valve) হিসেবে কাজ করে এবং নরম কৈশিকগুলোকে উচ্চরক্তচাপ থেকে সুরক্ষা দেয়।
কৈশিক হচ্ছে আমাদের শরীরের সবচেয়ে ক্ষুদ্র রক্তনালী, যা আমাদের চুলের চেয়েও সরু। এর মধ্য দিয়ে রক্তের শুধু লোহিতকণিকা (অক্সিজেন সরবরাহকারী) এক লাইনে অতিক্রম করতে পারে। আমাদেরর শরীরে ১০ বিলিয়ন (১০০০ কোটি) কৈশিক রয়েছে। মস্তিষ্কে যে কৈশিক রয়েছে তার দৈর্ঘ্য হচ্ছে প্রায় ৪০৩ মাইল।
পাঠক, এই তথ্যগুলো কি খুব আজব মনে হচ্ছে? মহান সৃষ্টিকর্তা বলেছেন, “আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টি হচ্ছে মানুষ সৃষ্টির চেয়ে বড়। অথচ অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।” (৪০ সুরা আলগাফিরঃ ৫৭)।
উল্লেখ্য যে, বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা করে এই সীমাহীন মহাবিশ্বের কোটি কোটি গ্রহ নক্ষত্রের মাত্র ২০% সম্বন্ধে ধারণা করতে পেরেছেন। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, মানুষের তুলনায় এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি কত বিশাল ও জটিল।
এই কৈশিকগুলোতে আবার গেইট বা দরজা আছে, যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রয়োজনীয় বস্তু আমাদের কোষে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু অক্সিজেন ও কার্বনডাইঅক্সাইডের জন্য কোন গেইট প্রয়োজন হয় না। তারা সরাসরি কৈশিকগুলোর প্রাচীর (Capillary Wall) দিয়ে প্রবেশ ও বাহির হতে পারে। এজন্য অক্সিজেন ধমনী থেকে কোষে পৌঁছাতে মাত্র ১০ সেকেন্ড সময় লাগে। আর শারীরিক পরিশ্রম করলে কোষে অক্সিজেন পৌছে মাত্র ২-৩ সেকেন্ডে। লোহিত কণিকা দৈনিক ১০০০ বার আমাদের কোষের কাছে এসে হাজির হয় কোন বিশ্রাম ছাড়া।
হৃদপিণ্ড থেকে রক্তের যে পথচলা শুরু হয়, তার ফিরতি যাত্রা শুরু হয় শিরার (Vein) মাধ্যমে। মোটা শিরাগুলো পেন্সিলের মত প্রশস্ত। এর প্রাচীর ধমনীর তুলনায় পাতলা, এর ভিতর রক্তচাপ খুব কম। আমাদের হাতে পায়ে যে রক্তনালীগুলো দেখা যায় এগুলোই হচ্ছে শিরা। শরীরে কোন আঘাত পেলে ও রক্তক্ষরণ হলে এ রক্তনালীগুলোই প্রধানত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু এর মধ্যে রক্তচাপ ও রক্তের গতি কম থাকাতে রক্তক্ষরণ সহজে বন্ধ হয়।
শিরার ভিতরে ভাল্ব আছে, যা শুধু হৃদপিণ্ডের দিকে রক্ত প্রবাহে সহায়তা করে থাকে। হৃদপিণ্ড থেকে শিরাগুলো দূরে অবস্থান করায় সে তার থেকে কোন সহায়তা পায় না। তাই হাতের, পায়ের ও বক্ষপিঞ্জের মাংশপেশী তাকে এ কাজে সহায়তা করে থাকে। ধমনীতে কোনো ভাল্ব নেই। কারণ হৃদপিণ্ডের Pressure ই তার জন্য যথেষ্ট। ধমনী ও শিরার রক্তচাপের মধ্যে অনেক পার্থক্য। শিরার সংখ্যা ও প্রশস্থতা ধমনীর তুলনায় বাড়ানো হয়েছে, ফলে রক্ত চলাচলে কোন জট সৃষ্টি হয় না।
আমাদের শরীরে ৬৪% রক্ত শিরাগুলোতে থাকে। জরুরি প্রয়োজনে শিরার এই রিজার্ভ থেকে রক্ত সরবরাহ করা হয়। এজন্য হঠাৎ করে শরীর থেকে ২০% পর্যন্ত রক্তক্ষরণ হলেও মানুষ বেঁচে থাকতে পারে।
মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ সবসময় ঠিক রাখতে হয়। শরীরে কোথাও রক্তক্ষরণ হলে অনেক অঙ্গের রক্ত সরবরাহ কমে যায়, কিন্তু মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ ঠিক থাকে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পরিবেশে মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডের ক্ষতি হতে পারে। তাই হাতের ও পায়ের রক্তনালী সংকোচিত হয়, তাতে মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ড ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা পায়। শীতে রক্তনালীর অতিরিক্ত সংকোচনের কারণে হাত ও পায়ের আঙুলের ক্ষতি হতে পারে তবুও জীবন রক্ষা পায়।
শীতে শরীর বেশী ঠাণ্ডা হলে রক্তনালী সংকোচিত হয়, মস্তিষ্ক বার্তা পাঠায়, তখন কাঁপুনি শুরু হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
অতিরিক্ত গরমে রক্তনালীগুলো সম্প্রসারিত হয়, ঘাম উৎপন্ন হয়, শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। বিশ্রামের সময় মাংপেশীর রক্তসরবরাহ অনেক কমে যায়। আবার খাদ্যগ্রহণের পর খাদ্যনালীর রক্ত সরবরাহ অনেক বেড়ে যায়। আমাদের শরীরের রক্তনালীগুলো বিশেষ করে কৈশিকগুলো প্রয়োজনমত খোলে ও বন্ধ হয়। যদি কৈশিকগুলো একই সময়ে সব খোলা থাকত, তাহলে মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেত। দীর্ঘক্ষণ এ অবস্থা বিরাজ করলে মস্তিষ্কের ক্ষতি হতো। মানুষ অতিরিক্ত ভয় বা দুঃখ পেলে রক্তনালীগুলো সম্প্রসারিত হয়, তাতে মস্তিষ্কের রক্তসরবরাহ কমে যায়। ফলে মানুষ অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। শায়িত থাকার কারণে মস্তিষ্কের রক্তসরবরাহ পুনঃস্থাপিত হয়, জ্ঞান ফিরে আসে। ততক্ষণে ভয় অনেক কমে যায়।
এভাবেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, শরীরের যে কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মত রক্তনালীগুলোকে বিভিন্নভাবে Programming বা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। Programming দৈবক্রমে হয় না। এতে একজন Programmer এর দরকার হয়। আর তিনি হচ্ছেন মহান ‘আল্লাহ তায়ালা’। একবিশ শতাব্দীর সর্বাধুনিক প্রযুক্তি যেখানে আমাদের শরীরের একটি কোষ (Cell) তৈরি করতে পারে না, সেখানে দৈবক্রমে সবকিছু হয়েছে তা বিবেকবুদ্ধির অগম্য।
“হে লোকেরা! একটি দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়েছে। মনোযোগ সহকারে শোন। আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব উপাস্যকে তোমরা ডাক, তারা সকলে মিলে একটি মাছি পয়দা করতে চাইলেও তা পারবে না এবং মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কোন জিনিস কেড়ে নিয়ে যায়, তবে এরা তা ছাড়িয়েও নিতে পারবে না। সাহায্যপ্রার্থীরাও দুর্বল আর যাদের কাছে সাহায্য চাওয়া হচ্ছে তারাও দুর্বল। (২২ সুরা হজ্জঃ ৭৩)
আসলে যারা দৈবক্রমে সবকিছু হয়েছে বলে বিশ্বাস করেন, তারা মহান স্রষ্টাকে শুধু নয়, গণিতকেও অস্বীকার করেন। ধরুন ১ থেকে ২০ লিখে আপনি ২০টি কাগজ আপনার পকেটে রাখলেন। এখন ক্রমান্বয়ে ১ হতে ২০ নম্বর কাগজ বের করতে চাইলে এর সম্ভাবনা কতটুকু? অংক করলে দেখা যাবে তা হবে অনেক কোটি ভাগের এক ভাগ। তাহলে আমাদের দেহের আজব রক্তনালীগুলোসহ সব কিছু দৈবক্রমে সৃষ্টির সম্ভাবনা কতটুকু?
আলোচ্য প্রবন্ধে রক্তনালী সম্বন্ধে যে আলোচনা করলাম, তা কয়েক হাজার বছর ধরে মানুষের চিন্তা ও গবেষণার ফসল। এর একক কৃতিত্ব ইউরোপ বা কোন জাতির নয়। ইতিপূর্বে চিকিৎসা বিদ্যায় ইবনে সিনার অবদানের কথা বলা হয়েছে। গ্যালেনসহ অন্যান্য গ্রিক চিকিৎসকরা মনে করতেন, ধমনীর রক্ত (বিশুদ্ধ রক্ত) হৃদপিণ্ড থেকে উৎপন্ন হয় এবং শিরার রক্ত (দূষিত রক্ত) লিভার বা যকৃত থেকে তৈরি হয়। এই হৃদপিণ্ডের মধ্যে অদৃশ্য ছিদ্র আছে, যার মাধ্যমে দুই রক্ত প্রবাহের মধ্যে সংযোগ হয়ে থাকে। এই থিউরি প্রায় দুই হাজার বছর ধরে চিকিৎসা জগতে প্রচলিত ছিল।
তেরশ শতাব্দীর আরব বিজ্ঞানী ইবনে নাফিস প্রথম Pulmonary Circulation বা হার্টের সাথে ফুসফুসের রক্তনালীর সংযোগের পক্ষে মত প্রকাশ করেন। তার হস্তলিখিত কপি বার্লিনের রাষ্ট্রীয় লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে। ইবনে সিনার ধারণা ছিল, হৃদপিণ্ডের ডান পাশের রক্ত থেকে হৃদপিণ্ডের মাংসপেশীতে রক্তসরবরাহ হয়ে থাকে। ইবনে নাফিস এই ধারণারও বিরোধিতা করে লেখেন, হৃদপিণ্ডের রক্ত সরবরাহের মধ্যে অবস্থিত রক্তনালী দিয়েই হয়ে থাকে। এভাবে তিনি Coronary Circulation বা হার্টের রক্তসরবরাহের সঠিক ধারণাও উপস্থাপন করেন।
ইবনে নাফিসের তিনশত বছর পরে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী উইলিয়াম হারভে রক্তনালী ও রক্তসরবরাহ সম্বন্ধে একই ধারণা প্রবর্তন করেন। বর্তমানে উ. হারভেকে রক্ত সঞ্চালন আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। Max Mayerhoff সহ বেশ কয়েকজন ঐতিহাসিকের মত এই যে, Pulmonary Circulation বা ফুসফুসের রক্ত সঞ্চালনের কৃতিত্ব ইবনে নাফিসকেই দেওয়া উচিত।
-
২০ জানুয়ারী, ২০২১