মেডিভয়েসকে বিশেষ সাক্ষাৎকার
চিকিৎসকরা যেভাবে রাতদিন কাজ করছেন তা অবিশ্বাস্য: ইমরুল কায়েস
করোনাভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্ব স্থবির। থমকে গেছে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। বন্ধ হয়ে গেছে সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান। গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন সব পেশার মানুষ। এই সংকটময় মুহূর্তে মেডিভয়েসকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে নিজের বিভিন্ন ভাবনার কথা বলেছেন জাতীয় দলের তারকা ওপেনার ইমরুল কায়েস। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল-মামুন
মেডিভয়েস: করোনার সংক্রমণ এড়াতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে ঘরে থাকার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে। এ ব্যাপারে আপনি কিছু বলুন।
ইমরুল কায়েস: করোনাভাইরাস এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। এর সংক্রমণ এড়াতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে পরামর্শ দিয়েছে, আমি ওইটাই ফলো করছি। অনেকে হয়তো মানছে বা মানছে না। তবে আমার কাছে মনে হয় সবাই ভালো থাকতে হলে এই নির্দেশনাগুলো মানতে হবে। দশজন মানল আর একজন মানবে না, তাহলে দেখা যাবে ওই একজন থেকেই বাকি ১০জন আক্রান্ত হয়ে যাবে।
আমার কাছ সবচেয়ে অবাক লাগে মানুষ এখন জীবনের চেয়ে পেটের চিন্তা আগে করছে। যেখানে বাঁচারই কোনো গ্যারান্টি নেই সেখানে খাবারের চিন্তা করে কী লাভ? এটা আসলে খুবই দুঃখজনক। দেশবাসীর উদ্দেশে আমি বলব, আর কয়েকটা দিন অন্তত ঘরে থাকুন, তাহলে নিজেও বাঁচব পরিবারটাও বাঁচবে।
মেডিভয়েস: করোনার এখনও প্রতিষেধক বের হয়নি, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিনিয়ত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকে মারাও গেছেন, অনেকে আক্রান্ত। চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এ লড়াইকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
ইমরুল কায়েস: আমাদের দেশে ডাক্তাররা যেভাবে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, এটা হয়তো পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নেই। আপনি দেখেছেন আমেরিকার মতো দেশও রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে, অনেক রোগীকে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের ডাক্তার ও নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের ধন্যবাদ জানাই, তারা যেভাবে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন তা অবিশ্বাস এবং প্রশংসনীয় ব্যাপার। আমি আশা করব তারা এই সমস্যার সমাধান হওয়ার আগ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন। তাদের জন্য দোয়া ও ভালোবাসা রইল।
মেডিভয়েস: আমাদের বর্তমান এই সমাজে করোনাভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে বা মারা গেলে খোঁজও নেয়া হচ্ছে না। এ ব্যাপারে কিছু বলুন।
ইমরুল কায়েস: এটা আসলে জাতি হিসেবে খুবই লজ্জাজনক বিষয়। পৃথিবীর সব মানুষই এখন আতঙ্ক অবস্থায় আছে। তাই বলে একজন করোনায় আক্রান্ত হলে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা বা ঘৃণার চোখে দেখা এটা লজ্জাজনক বিষয়। কারণ সে তো অঅর ইচ্ছে করেই নিজ থেকে আক্রান্ত হয়নি। আমার মনে হয় এটা একটা সমন্বয়হীনতার অভাব। সবার ভিতরে এই জিনিসটা থাকা উচিত। যে কোনো সময় এই রোগটা আমারও হতে পারে! তখন আমাকে কে দেখবে? করোনায় আক্রান্ত হওয়া মানেই যে, আপনি মারা যাচ্ছেন তা কিন্তু না। আমার মনে হয় সবাই সবাইকে এই সংকট মুহূর্তে হেল্প করা উচিত, তাহলে এই যুদ্ধে আমরা সফলকাম হতে পারব।
মেডিভয়েস: বিশ্লেষকরা বলছেন করোনা পরবর্তী সময়ে বিশ্বে বড় ধরনের একটা আর্থিক মন্দা দেখা দিতে পারে, আপনার কী মত?
ইমরুল কায়েস: আপনি দেখুন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষের চেয়ে আমাদের দেশের মানুষ অসহায়দের খাদ্য দেয়ার জন্য সেচ্ছায় এগিয়ে আসছে। উন্নয়নশীল দেশে হয়তো এটা লাগে না। লাগলেও তারা আমাদের দেশের মতো এতটা আন্তরিকভাবে দিচ্ছে না। মানুষকে বুঝতে হবে জীবনের চেয়ে কিন্তু খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, আগে জীবন। আমরা যদি অন্তত আরও একটা মাস সবাই মিলে সামর্থ অনুসারে অসহায়দের হেল্প করি তাহলে আমার মনে হয় এই সমস্যা দ্রুত কেটে যাবে।
মেডিভয়েস: করোনায় ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক সব খেলাই বন্ধ, এমন পরিস্থিতিতে ফিটনেস ধরে রাখা কতটা চ্যালেঞ্জিং?
ইমরুল কায়েস: টনেস ধরে রাখাতো অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং তার কারণ একা একাতো সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা সম্ভব না। টিমের সঙ্গে থাকলে যেটা হতো সেটা এখন বাসায় চাইলেও সেভাবে হবে না। আপনি চাইলেই এখন জিম বা নেটে গিয়ে ব্যাটিং করতে পারবেন না। ব্যক্তিগতভাবে আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব সেটা করছি, নিজেকে ফিট রাখার জন্য। এছাড়া তো এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি কিছু করা সম্ভব না।
মেডিভয়েস: জাতীয় দলের বাইরে যারা তারা তাদের ঘরোয়া লিগই এক মাত্র রুটি-রুজির মাধ্যম। কিন্তু এখন খেলা নেই, তারা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। এ ব্যাপারে কিছু বলবেন?
ইমরুল কায়েস: তাতো অবশ্যই, সবাই বুঝতেছি। আসলে আমরা পরিস্থিতির স্বীকার। এখানে কারো কোনো হাত নেই, কারো কোনো দোষও নেই। আশা করছি দ্রুত এ সমস্যা কেটে যাবে এবং সবাই আগের মতো পুরো উদ্যমে খেলার মাঠে ফিরতে পারবে। আশা করি প্রিমিয়ার লিগ দিয়েই ফের খেলা শুরু হবে। তাহলে লোকাল ক্রিকেটাররা কিছুটা হলেও পারিশ্রমিক পাবে।
মেডিভয়েস: করোনা এমনিতেই সবাই আতঙ্কে আছেন। এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেই আপনার বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় পৃথিবী থেকে চলে গেলেন।
ইমরুল কায়েস: বাবা দুর্ঘটনায় পড়ার আগে ঢাকায়ই ছিলাম, ওনার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় গ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। এখন গ্রামের বাড়িতে চলে এসেছি। এখানে পরিবারের সবাই আছে, গ্রামে এখনও করোনা এতটা প্রভাব পড়েনি। তুলনামূলক কিছুটা ভালো পরিস্থিতি আছে।
মেডিভয়েস: সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।
ইমরুল কায়েস: আপনাকেও ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।