
অধ্যাপক ডা. মো. বাহাদুর আলী মিয়া
অধ্যাপক, নিউরোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০৬:৩৮ পিএম
ষাটোর্ধ্ব ৮.১ শতাংশ মানুষ আলঝেইমারে আক্রান্ত

আলঝেইমার রোগ মস্তিষ্কের একধরনের অস্বাভাবিকতা, যাতে সাধারণত স্মৃতিভ্রংশ হয়, রোগীর কগনিটিভ কার্যকারিতা বা পরিপার্শ্ব সম্পর্কে চেতনার ক্ষয় হতে থাকে। ৬৫ বছরের পরে এ রোগ হওয়ার প্রবণতা বেশি।
আলঝেইমারের লক্ষণ
আলঝেইমার রোগের অন্যতম একটি কারণ হলো বয়সের সাথে সাথে ব্রেন ভ্রংশ হয়ে যাওয়া। এ রোগে আক্রান্তরা সহজেই বিরক্ত হয়ে যান, প্রায়ই হতাশাগ্রস্ত দেখা দেয়। এর ফলে দৈনন্দিন কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। চূড়ান্ত পর্যায়ে রোগীরা নিজে নিজের যত্ন নিতে পারেন না, নিজের মা-বাবা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী—কাউকেই চিনতে পারেন না। গোসল করা, টয়লেট করা, কাপড় পরা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি কারও সাহায্য ছাড়া করতে পারেন না। দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চিনতে পারেন না। খাবার গ্রহণ করার পরপরই তা ভুলে যান, হাঁটাচলা করতেও সমস্যা হয়। এ সময় রোগীর সংক্রমণ, জ্বর, ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্ত শূন্যতা, পুষ্টিহীনতা, ডিহাইড্রেশন ইত্যাদিও দেখা দিতে পারে।
রোগের অবনতির সঙ্গে সঙ্গে রোগী দ্বিধাগ্রস্ততা, অস্থিরতা, রোষপ্রবণতা, ভাষা ব্যবহারে অসুবিধা ও দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিভ্রংশতা দেখা দেওয়া এবং ক্রমান্বয়ে শারীরিক ক্রিয়াকর্ম বিলুপ্ত হয়ে অবশেষে মৃত্যুবরণ করেন।
কোথায় চিকিৎসা দেওয়া হয়?
আলঝেইমার হলো নিউরোলজি সম্পর্কিত একটি রোগ। যিনি এই রোগে আক্রান্ত হন, তিনি কখনও বুঝতে পারেন না। ফলে বুঝতে পারেন না, কখন চিকিৎসা করা দরকার। এ রোগে আক্রান্ত রোগীর স্বজনদের বুঝতে হবে, কখন এবং কোন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। আলঝেইমার যেহেতু ব্রেনের একটি অসুখ। রোগীদের সবচেয়ে উপযুক্ত চিকিৎসক হলো নিউরোলজিস্ট। যদি আশপাশে নিউরোলজিস্ট না পাওয়া যায়, তাহলে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বা সাইক্রিয়াটিস্ট। আর সবচেয়ে ভালো হলো, যে হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগ আছে সেখানে চিকিৎসা করানো।
প্রতিরোধের উপায়
একটি রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা গেলে তা প্রতিরোধ করা যায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ জানা যায়নি। আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধের তেমন কোনো পথ নেই। তবে লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে যদি আমরা চিকিৎসা শুরু করি, তাহলে এই রোগটাকে একটু দমানো যায় বা সাময়িকভাবে প্রতিরোধ করা যায়। আজকাল সহজলভ্য কিছু মেডিসিন রয়েছে। সে মেডিসিনের প্রাপ্যতাও রয়েছে। সেগুলো যদি আমরা প্রয়োগ করে অসুখের মাত্রার গতি রোধ করতে পারি।
একজন রোগী চিকিৎসা নিলে যে অবস্থায় থাকে, সে যদি চিকিৎসা না নেয় তবে আরও খারাপ অবস্থায় থাকে। পাঁচ বছর পর যে অবস্থায় যাবে, যদি আমরা চিকিৎসা করি তাহলে সে হয়তো এ পরিস্থিতিতে যেতে যেতে দশ বছর সময় লেগে যাবে। এ রোগীকে আমরা অতিরিক্ত পাঁচ বছর ভালো একটা জীবন কাটাতে দিতে পারি। এ রোগ প্রতিরোধের কোনো উপায় নেই। কেউ আক্রান্ত হলে পুরোপুরি সুস্থ হবেন না, তবে সাময়িকভাবে উন্নতি হবে। এ রোগীদের ঘুম না হলে ঘুমের ব্যবস্থা করা যাবে। প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে না থাকলে, তা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
আলঝেইমারে আক্রান্তদের পরিসংখ্যান
বাংলাদেশে আলঝেইমারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কত? স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা কোনো সংগঠনের কারও কাছে সুনির্দিষ্টভাবে সে তথ্য নেই। তবে গত বছর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৬০ বছর বয়সের বেশি মানুষের শতকরা ৮.১ ভাগ মানুষ আলঝেইমারে আক্রান্ত। ২০৩০ সালে এ সংখ্যাটা দ্বিগুণ হবে।