
ডা. সাইফুল ইসলাম
ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিন বিভাগ, জেমস কুক বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল।
০৪ নভেম্বর, ২০২০ ১২:২১ পিএম
এক মেধাবী চিকিৎসকের দেশ ছেড়ে যাওয়ার গল্প
প্রান্তিক স্বাস্থ্যের অব্যবস্থাপনা দূর করার ক্ষমতা ছিল না তাই চাকরি ছেড়ে দিলাম

যেদিন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (UH&FPO) স্যারের কাছে আমার রেজিগনেশন লেটার জমা দিয়েছিলাম সেদিন তিনি কয়েক মুহুর্ত অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।
: আমার ত্রিশ বছরের চাকরি জীবনে কাউকে এভাবে স্বেচ্ছায় সরকারি চাকরি ছেড়ে দিতে দেখিনি, উল্টোটা দেখেছি। চাকরির জন্যে হাহাকার করতে দেখেছি।
শোন সাইফুল, তোমার অল্প বয়স। হুট করে একটা কিছু করে ফেলার আগে আরেকটু ভেবে নাও।
⁃ না স্যার, আপনি চিন্তা করবেন না, আমি কোথাও আটকাব না।
যতজন ডাক্তার ছিল সেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তাদের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে ছোট ছিলাম বলেই কিনা বেশ স্নেহ করতেন আমাকে। নিতান্ত অযোগ্য হলেও এরকম অনেক মানুষের স্নেহ ভালোবাসা প্রাপ্তির সৌভাগ্য এ জীবনে আমার হয়েছে, সে কথা আরেকদিন বলা যাবে।
পরতে পরতে ঘুণে ধরা প্রান্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনা দূর করার ক্ষমতা আমার ছিল না, তাই ইচ্ছের বিরুদ্ধে নিজের সঙ্গে প্রতারণা করে একটা চাকরি করার কোন অর্থ খুঁজে পাইনি। পরিচিত সকলের কথার বিরুদ্ধে গিয়ে সসম্মানে চাকরি ছেড়ে চলে এসেছিলাম। ২০১০ সালের কথা।
ঝোঁকের বশে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ফিরে গেলাম। এখন খাব কি? দামড়া ছেলে, ডাক্তারি পাশ দিয়ে তো মায়ের কাছে হাতখরচ চাওয়া যায় না। বিডি জবস এ চাকরি খুঁজতে লাগলাম। একটা ইন্টারভিউর ডাকও পেলাম। আকিজ গ্রুপের সিগারেট ফ্যাক্টরিতে মেডিক্যাল অফিসারের চাকরি। ইন্টারভিউ বোর্ডে আমাকে জিজ্ঞেস করা হল সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে এইখানে কেন ইন্টারভিউ দিচ্ছি।
বলেছিলাম:
চুরি শিখতে পারিনি, মানুষকে ঠকানো শেখায়নি মা-বাবা কোনোদিন অথচ যেখানে পোস্টিং ছিল সেখানে চাকরি করতে চাইলে দুটোই করা লাগত; তাই ছেড়ে দিয়েছি।
⁃ ছেড়ে না দিয়ে বদলির চেষ্টা করলে হত না?
: চেষ্টা করেছিলাম। দু‘বার মহাখালীর ডিজি অফিসে গিয়ে কান ধরেছি, ওমুখো আর কোনোদিন হবো না। রাস্তার কুকুর বেড়ালের একটা দাম আছে, ডিজি অফিসে একজন ডাক্তারের তাও নাই।
আমি জানতাম চাকরিটা আমার হয়ে যাবে, হয়েছিলও।
টানা দুবছর করেছি সে চাকরি। ভোর ছয়টায় উঠে রেডি হয়ে বেড়িয়ে পড়তাম। রিকশা > বাস > টেম্পু করে অফিস। বিকেল চারটায় অফিস শেষে আবার টেম্পু করে বাস স্ট্যান্ড। কোনোদিন ভাগ্য ভাল হলে দশ মিনিট নতুবা এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে বাসে উঠতাম। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হতে না হতেই সন্ধ্যা সাত টা। আবার ভোরে উঠেই দৌড়।
এরমধ্যে বিয়ে করেছি, চাইলেই এই দুর্ভোগের চাকরি টা ছাড়া যাচ্ছে না। ওদিকে সরকারি কাগজ যেমন শামুকের বেগে চলে সেভাবেই চলছিল আমার ইস্তফা পত্র। খবর নিয়ে শুনি এক বছরে এখনো জেলা শহর পার হয়নি। এরপর বিভাগীয় শহর, ঢাকার ডিজি অফিস অতিক্রম করে যাবে সচিবালয়। জব টার্মিনেশন লেটার সচিবালয় থেকে না পাওয়া পর্যন্ত পাসপোর্ট করাতে পারছিনা, বিদেশে একটা চাকরির চেষ্টা করছিলাম সেটা আটকে আছে।
অগত্যা যস্মিন দেশে যদাচার। নানা জায়গায় খাতির যত্ন করে অবশেষে আমার কাগজ উদ্ধার হল, পাসপোর্ট করলাম।
মালদ্বীপের এক হাসপাতালে স্বামী স্ত্রী দুজনের চাকরি হবার কথা ছিল কিন্তু হল শুধু স্ত্রীর। না ভুল বললাম, চাকরি হল দুজনেরই কিন্তু কোন এক অদ্ভুত কারনে আমার ভিসা গেল আটকে। এমন ভাবেই আটকাল যে সাত মাস লেগে গেল জট ছোটাতে। এই কদিন পাড়া প্রতিবেশী বন্ধু আত্মীয়দের কাছে সকাল বিকাল শুনে গেলাম :
মালদ্বীপ কোন দেশ হইল?
বাংলাদেশের সরকারি চাকরি বাদ দিয়ে কেউ মালদ্বীপ যায়? যত্তসব পাগল ছাগলের মত কাজ।
কাউকে বোঝানো যায়নি ... আমার মূল গন্তব্যে পৌঁছাতে হলে শুধু পড়াশোনা আর শ্রম দিয়ে হবে না, সাথে অনেক টাকাও লাগবে। বিড়ির ফ্যাক্টরির সকাল সন্ধ্যা চাকরি বাসা ভাড়ার যোগান দিতে পারলেও আমার স্বপ্নের পালে হাওয়া দিতে পারবে না।
এখানে একটা কথা বলে না রাখলে পাপ হবে। অনিশ্চয়তার উদ্দেশ্যে আমার সেই যাত্রাটা কখনোই হয়তো শুরু করা যেতো না একটা অসাধারন মানুষের সাহায্য না পেলে। তিনি আমার মেডিক্যাল কলেজের তিন ব্যাচ সিনিয়র তরিকুল হাসান পলাশ ভাই। উনার প্রচণ্ড প্রচেষ্টার ফলেই মালদ্বীপের চাকরিটা জুটেছিল।
আমার পিতা পরিবারের দেখভাল করতে বাধ্য হয়ে বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন আমি যখন প্রথম শ্রেণীতে। ছেলে ডাক্তার হয়ে নিজেও আরেক দেশে চলে যাচ্ছে।
অথচ এর মাঝের বিশ বছরে দেখা হয়েছে হাতে গুনে ছয় সাত বার। যা হোক সে আরেক প্রসঙ্গ। মূল কাহিনীতে ফেরা যাক। সকলের কথার বিরুদ্ধে গিয়ে স্ত্রী নাজিয়া রহমানকে সঙ্গে নিয়ে পিছনে হাউমাউ করে ক্রন্দনরত মাকে রেখে প্লেনে উঠে পড়লাম। সেদিন জীবনে প্রথম বার উড়োজাহাজে চড়ার উত্তেজনা ফিকে হয়ে গিয়েছিল পরিবার, বন্ধু স্বজনদের পিছনে ফেলে যাবার বেদনার কাছে।
নতুন দেশ, নতুন হাসপাতাল।
জীবনে দুই লাইন টানা ইংরেজী বলতে হয়নি কখনো (মেডিক্যাল কলেজের ভাইভা বোর্ড ছাড়া) অথচ এখানে আমাকে টানা ইংরেজি বলে যেতে হবে ভেবেই নাড়িভুড়ি প্যাঁচ খেতে লাগল পেটের ভিতর।
ডাক্তারি পাশ করার পর থেকে নিতান্ত অজপাড়াগাঁয়ে সরকারি চাকরির এক বছর আর আকিজ সিগারেট ফ্যাক্টরির দুই বছরে গ্যাসের ব্যথা, বাতের ব্যথা আর ভিটামিন বড়ি লিখে লিখে ডাক্তারি বিদ্যা যা জানা ছিল তাতে জং ধরে গিয়েছিল। সেই জং ধরা বিদ্যায় বিদেশের অত্যাধুনিক হাসপাতালে টিকে থাকাটাই প্রায় অসম্ভব হয়ে গেল। এর মধ্যে একদিন এক পাকিস্তানি ডাক্তার তো আয়েস করে টিটকারি করে নিল আমার অপ্রস্তুত চালচলন দেখে।
আমি চোয়াল শক্ত করে সহ্য করে গেছি।
জীবনে কোনদিন আইসিইউ‘র দরজায় উঁকি দেইনি অথচ সেই আমাকেই মেডিসিনের পাশাপাশি আইসিউ'র রোগী সামলানোর দায়িত্ব দেয়া হল। আমি খাবি খেতে লাগলাম।
হাল ছেড়ে দেয়ার কোন উপায় নেই। কাজের ফাঁকে যেটুকু সময় কপালে জুটত সমানে পড়াশোনা করতে লাগলাম। আইসিইউ‘র কিছু ভাল বই যোগাড় করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে ফেললাম, সেইসাথে ইউটিউবে দেখতে লাগলাম বিভিন্ন আইসিইউ প্রসিডিওরের ভিডিও। আস্তে আস্তে হাত পাকতে লাগল। জীবনে কোনদিন ল্যারিঙ্গোস্কোপ না ধরা আমি আস্তে ধীরে ইন্টিউবেশনটা বেশ ভালই শিখে ফেললাম। এর মাঝে MRCP part 1 পাশ করা হয়ে গেল। নড়বড়ে শুরুর দিনগুলি পার হয়ে বেশ শক্ত একটা অবস্থান তৈরি হল মেডিসিন ডিপার্টমেন্টে।
বাংলাদেশী শুনলেই যে দেশে মাছ ধরার নৌকায় কাজ করা জেলে মনে করত লোকজন সেখানে বাংলাদেশী ডাক্তাররাও যে ডাক্তারি জানে সেটা লোকজন আঁচ করল কিছুটা। আমি অপরূপ সুন্দর সেই দ্বীপ দেশটির সবচেয়ে বড় হাসপাতালটি ছেড়ে এসেছি চার বছর আগে তবু একথা দৃঢ় চিত্তে বলতে পারি সেই হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ কিংবা আইসিইউ তে গিয়ে আজও সাইফুল নামটা বললে কারো চিনতে এক মুহুর্ত বিলম্ব হবে না। ভাল কথা... আমার একদম শুরুর দিকের ইতস্তত চালচলন নিয়ে যে পাকিস্তানি ডাক্তার টিটকারি মেরেছিল তাকে পরে কোন একদিন সাপের সাত পা দেখিয়ে ছেড়েছিলাম। সে গল্প ও তোলা থাক অন্য আরেকদিনের জন্য।
এর মাঝে স্ত্রী একবার মরনের দুয়ার থেকে ফিরে আসল ফেলোপিয়ান টিউব রাপচার হয়ে। লম্বা অপারেশনের ঝক্কি কাটিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি তখনই জানা গেল ওর একমাত্র অক্ষত টিউবটা ভিতর থেকে বন্ধ। আবার ওকে যেতে হয় সার্জনের ছুরির নীচে। এতো কষ্ট, ত্যাগ-তিতিক্ষার পর ওর কোলে আসল আমাদের জীবনের শ্রেষ্ট অর্জন। আমাদের অমিয়।
নাজিয়াকে পুত্রের দেখাশোনার জন্যে সাধের চাকরি ছেড়ে দিতে হল। একার চাকরিতে বর্ধিত পরিবারের দেখভাল করা কষ্টকর হয়ে উঠলো। সময় আসল মালদ্বীপ ছাড়ার।
কিন্তু যাব কোথায়?
ওমানের লাইসেন্সিং পরীক্ষা দেয়ার নিয়ত করলাম। ওখানে একজনের বেতনে ভালই চলা যাবে আবার MRCP পরীক্ষার সেন্টার থাকায় ওটাও শেষ করা যাবে, এই চিন্তা করে Prometric OMSB পরীক্ষা দিয়ে দিলাম অনলাইনে। ৬০% নাম্বার না পেলে ফেল, কপাল ভাল ছিল বিধায় পেয়ে গেলাম ৬৭%।
কিন্তু তাতেও লাভ নেই। মৌখিক পরীক্ষা পাস করতে হবে, আর সেটা দিতে হবে ওমানে গিয়ে। শুধু তাই না, কোন হাসপাতাল বা ক্লিনিক আমাকে চাকরি দিতে রাজি হলে তাদেরকে আমার হয়ে ভিসা যোগাড় করতে হবে এবং মৌখিক পরীক্ষার জন্যে স্লট বুকিং দিতে হবে।
চাকরি একটা পাওয়া গেল ওমানের এক নিতান্ত গহীন অঞ্চলের এক প্রাইভেট ক্লিনিকে। তারা আমার ভিজিট ভিসা যোগাড় করল, ভাইভার তারিখ ও ঠিক হল।
খোঁজ খবর নিয়ে দেখি এই ভাইভাতে পাসের হার ভয়াবহ। বিশ পঁচিশ জন পরীক্ষা দিলে সাধারণত দুই অথবা তিনজন পাস করে। এ কি বিপদে পড়া গেল? ফেল করলে চাকরি তো মিলবেই না, সেই সাথে প্লেন ভাড়া বাবদ যে পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ করেছি সেটাও জলে যাবে।
বিধাতা এবারও মুখ তুলে তাকালেন। ১৮ জনের পরীক্ষাতে যে দুজন সেবার পাস করেছিল আমি ছিলাম তাদের একজন ভাগ্যবান।
সাগরের দেশ থেকে চলে গেলাম মরুর দেশে। ছয় মাসের ছেলেকে দেশে তার মায়ের কাছে রেখে আমি একা উড়াল দিলাম। কর্মস্থলের পরিবেশ দেখে মনে হল এ যেন বছর পাঁচেক আগে ফেলে আসা বাংলাদেশের সেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। চিৎকার করে কিছুক্ষণ কাঁদতে ইচ্ছা হল।
প্রথমদিন কাজে যোগ দিয়ে আগেই অনুমিত ভয়টা ভয়াল আকারে সত্যি হয়ে দেখা দিল। রোগীদের প্রায় ৯৯% ইংরেজি বোঝে না। অর্থাৎ আমাকে আরবি ভাষা শিখতে হব দ্রুততম সময়ে না হলে এখানে টেকা যাবে না। খিদের জ্বালায় মানুষ নাকি মাটি খেতে পারে সে তুলনায় নতুন ভাষা শেখা তেমন দুঃসাধ্য কিছু না। আমিও আস্তে আস্তে কাজ চালানোর মত আরবি শিখে ফেললাম। ওমানে আসার তিন মাসের ভিতরেই কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়াশোনা করে MRCP part 2 টাও পাশ করে ফেললাম। তারও মাস তিনেক পর বউ বাচ্চার ভিসাও যোগাড় হল। ভালই চলছিল সব শুধু মাত্র একটা বিষয় ছাড়া। আমার কোন সাপ্তাহিক ছুটি ছিলনা। হ্যাঁ, অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে আমি প্রায় চারটা বছর রোজ দশ ঘণ্টা করে কাজ করে গেছি, সপ্তাহের সাত দিন। এখন ভাবতে গেলে নিজের কাছেই অবাস্তব মনে হয়।
পুত্র বড় হয়ে যাচ্ছে, আশেপাশে ভাল কোন স্কুল নেই, যাতায়াতের ভাল কোন ব্যবস্থা নেই। দ্রুত একটা কিছু করতে হবে। MRCP এর শেষ পর্ব PACES এর জন্যে এপ্লাই করলাম যেন পাশ করে তাড়াতাড়ি ইউকের দিকে আগাতে পারি কিন্তু বিধিবাম! সিট পেলাম না। এতো লম্বা লাইন পরীক্ষার্থীদের যে
ওমানে কোন কালে PACES দেয়ার সুযোগ মিলবে তার কোন ঠিক ঠিকানা নেই।
ঠিক করলাম PLAB দিব। কিন্তু PLAB দিতে হলে আগে IELTS বা OET পরীক্ষা দিতে হবে। সময় এবং খরচ সাপেক্ষ পরীক্ষা। দেড় মাসের মধ্যে প্রিপারেশন নিয়ে দিয়ে দিলাম মার্চ ২০১৯ এ। ভাগ্য সুপ্রসন্ন, প্রয়োজনীয় গ্রেড মিলে গেল।
এবার PLAB 1.
কিন্তু সমস্যা হল বাংলাদেশে গিয়ে যে এই পরীক্ষা দিব সে উপায় নেই কারন সে বছরের জন্যে সব আসন বুক্ড। কাছেপিঠে দুবাই যাওয়া যায় কিন্তু বাংলাদেশিদের ওরা সহজে ভিজিট ভিসা দিচ্ছিল না। ঠিক করলাম ইংল্যান্ডে গিয়েই দিব পরীক্ষা যত আগে সিট পাই তত আগেই। প্রিপারেশন কোনমতে নাকেমুখে গুঁজে নিয়ে নেব না হয়। সমস্যা হল অন্য জায়গায়। ইংল্যান্ডের ভিসা পাওয়া এতো সহজ ব্যাপার না। এত এত টাকা খরচ করে পরীক্ষা বুকিং দিলাম পরে দেখা গেল ভিসা হল না। সব গচ্চা!
ভিসা হল। কয়েক লাখ টাকা খরচ করে সপরিবারে বিলাত গিয়ে দিয়ে আসলাম PLAB 1, কপালগুনে পাসও হয়ে গেল। এবার বাকি PLAB 2, সবচেয়ে কাছে সুবিধামত তারিখ পাওয়া গেল নভেম্বর মাসে কিন্তু বিপত্তি হল অন্যখানে। ব্যাংকে একটা ফুটা পয়সা নেই। আবার ইংল্যান্ডে গিয়ে, থাকা খাওয়া, PLAB 2 কোচিং, বিমান ভাড়া সব মিলিয়ে চার পাঁচ লাখ টাকার মামলা। পরের তিনমাসের বেতন থেকে যতটুক সম্ভব জমিয়ে আর বাকিটা ধার করে ২০১৯ এর ২৭ নভেম্বর এই পরীক্ষাও দিয়ে দিলাম।
এতটুকু লিখতে লিখতে আমার নিজেরই ঘুম চলে এসেছে আর আপনি যে অসম্ভব রকম ধৈর্য্য নিয়ে এপর্যন্ত পড়েছেন তা দেখে আপনার জন্যে আমার মায়া হচ্ছে।
আসুন এই বোরিং রচনা ফাস্ট ফরোয়ার্ড করা যাক।
আমি এখন ইংল্যান্ডের বেশ বড় সড় একটা হাসপাতালের আইসিইউতে কাজ করছি।
মনে হতে পারে আমার সুদীর্ঘ যাত্রার এই বুঝি গন্তব্যে এসে পৌঁছেছি।
না।
আসলে যাত্রা কেবল শুরু হল।
বিধাতা চাইলে একদিন অবশ্যই আমি NHS এর কনসালট্যান্ট হব। আমার খুব ইচ্ছা আমি একটা বই লিখব। সে বই আমার দেশের মেডিক্যাল কলেজগুলোতে পড়ানো হবে।
হয়তো কোনদিন আমার মেডিক্যাল কলেজের কোন শিক্ষক ক্লাসে আমার বইটি তাঁর নবীন ছাত্রদেরকে দেখিয়ে গর্ব করে বলবেন -
"এই যে দেখ এই বইটা আমার এক ছাত্র লিখেছে, কোন এক কালে সেও ঐ বেঞ্চ গুলোতে বসত, তোমরা আজ যেখানে বসে আছ। সত্যি বলতে কি এই গাধাটা ছাত্র হিসেবে ছিল খুবই জঘণ্য, সে যে কিভাবে কিভাবে NHS এর কনসালট্যান্ট হয়ে গেল আবার একটা বইও লিখে ফেললো সেটাই মাথায় ঢুকছে না।"
হা হা হা!
যতোসব হাস্যকর কল্পনা।
তবু আশা করতে তো দোষ নেই, তাই না?
মনে আছে Andy Dufresne তার বন্ধু Red কে কি বলেছিল?
বলেছিল:
Hope is a good thing, may be the best of things, and no good thing ever dies.