রোড টু পিএইচডি-০৪: কেন আমেরিকা?

পৃথিবীতে ২০০’র মতো দেশ থাকতে কেন আমেরিকাকে বেছে নিবেন? কঠিন প্রশ্ন। ততোধিক কঠিন এর উত্তর।
অনেকগুলো দেশের ইউনিভার্সিটি ঘেঁটে, তাদের অ্যাপ্লিকেশানের প্রসেস জেনে অধম আমেরিকাকেই বেছে নিয়েছিল পিএইচডির ডেস্টিনেশান হিসেবে। একপর্যায়ে এ সিদ্ধান্তটি খুব স্বাভাবিক ভাবেই চলে এসেছিল।
বাস্তব কারণ হলো আমেরিকায় রিসার্চের জন্য ফান্ড আছে। এটিই সবচেয়ে বড় কারণ। তারমানে কি অন্যদেশে ফান্ড নেই? না, ব্যাপারটি তা নয়। পরিস্থিতি হলো– অন্যসব উন্নত দেশে রিসার্চের জন্য ফান্ড থাকলেও তা আমেরিকার মত এত বেশি নয় এবং সেটি পাওয়াও খুব সহজ নয়।
আমেরিকায়ও ফান্ড পাওয়া কঠিন। কিন্তু এখানে ইউনিভার্সিটি অনেক বেশি। তার থেকেও বেশি অনগোয়িং রিসার্চ প্রজেক্ট। তাই অধমের মত ছাপোষাদের জন্য সেখানে ফান্ড পাবার সম্ভাবনাও কিছুটা বেশি।
আমেরিকাকে পছন্দ করার আরেকটি কারণ হলো এরা সভ্যতার শীর্ষে অবস্থান করছে। এদের মেডিকেল কেয়ারের কোয়ালিটি পৃথিবীতে সেরা। রিসার্চে সবার চেয়ে এগিয়ে। যুদ্ধবাজ রেসিস্ট জাতি হিসেবে তাদের অপছন্দ করতেই পারেন। কিন্তু আপনি যার সন্ধানে বেড়িয়েছেন সে নলেজের জগতে আমেরিকাই লিডার। তাই জ্ঞানের সন্ধানে এদের কাছেই যেতে হবে আপনাকে। সে জ্ঞান পাবার পর কী করবেন সেটা আপনার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার।
আরেকটি কারণ হলো অন্যদেশ যেমন- বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডায় পাবলিক হেলথে পিএইচডি প্রোগ্রামে অ্যাপ্লাই করতে হলে আপনাকে রিসার্চ প্রপোজাল সাবমিট করতে হবে। অর্থাৎ কোন বিষয়ে রিসার্চ করতে চান তার ডিটেলস প্রপোজাল আপনাকে সাবমিট করতে হবে। সাথে অ্যাপ্লিকেশানের অন্যান্য রিকোয়ারমেন্ট তো আছেই। আমরা দেশের ডাক্তারেরা এ জায়গাটাতেই আটকে যাই। যেখানে রিসার্চের অআইঈ কিছুই জানিনা সেখানে পিএইচডি’র রিসার্চ প্রপোজাল সাবমিট করে ফেলবো! এতটা যোগ্যতা অনেকেরই হয়ে উঠে না।
আমেরিকায় এ সমস্যাটি নেই। এখানে অ্যাপ্লিকেশান করতে আপনাকে রিসার্চ প্রপোজাল সাবমিট করতে হবেনা। পিএইচডি করতে এসে প্রথমে কিছুদিন কোর্স করবেন। প্রফেসরের সাথে কাজ করবেন। তারপর ধীরে ধীরে পিএইচডি থিসিসের টপিক ঠিক করবেন।
আমেরিকায় অ্যাপ্লাই করার অসুবিধা হলো GRE। এই পরীক্ষার ভীতি নিয়ে আলাদা একটি পর্ব থাকবে এই সিরিজে। সেখানে এর খুঁটিনাটি নিয়ে আলাপ করার চেষ্টা করবো। আপাতত: শুধু এতটুকু বলি যে, এই GRE ভীতি কাটিয়ে উঠা খুব কঠিন কম্ম নয়, অসাধ্য কোন বিষয়ও এটি নয়। এই একটি পরীক্ষার ভয়ে অনেকেই আমেরিকা বাদ দিয়ে অন্যদেশে অ্যাপ্লাই করার চেষ্টা করেন।
আমি এর কোন মানে খুঁজে পাই না। GRE তো একটি পরীক্ষাই তাই না ? আপনার আমার মত পেট ভরে ডাল-ভাত খেয়ে, ভরদুপুরে নাক ডেকে ঘুমিয়ে, পেছনের বেঞ্চে বসে ঝিমিয়ে, ক্লাস বাংমেরেও বহু বাংলাদেশি GRE দিয়েছে এবং তাতে ভালো করে আমেরিকায় পাড়িও জমিয়েছে। তাই আর ভুড়ি না চুলকে, নাক থেকে আঙ্গুল বের করে পড়তে বসুন। GRE পড়তে বসুন।
অন্য দেশে যদি ফান্ড যোগাড় করতে পারেন তবে কুডোস–সম্মান–রেসপেক্ট। আপনার মাঝে বিশেষ কিছু আছে বলেই ফান্ড পেয়েছেন। অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে অভিনন্দন। বাকি সাধারণেরা GRE পড়তে বসুন।
ডিসক্লেইমার
পূর্ববর্তী পর্ব : রোড টু পিএইচডি-০৩: ‘ডাক্তারি ছেড়ে দিয়েছো’ নামক সামাজিক অত্যাচার এবং ‘প্রফেসরের চেম্বার’ নামক মরীচিকা
[পরবর্তী পর্ব : রোড টু পিএইচডি, পর্ব-০৫: চান্স পাওয়া আর ফান্ডিং পাওয়া একই জিনিস না]