ছোটগল্প
আকাংখা
প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে তলপেটে জরীর। ইদানীং রাতের ঘুমগুলো কোথায় যেন উড়ে গেছে। বাহিরের জগৎ দেখার অদম্য ইচ্ছায় পেটের ভেতর থেকে কেউ অনবরত পা ছুড়াছুড়ি করছে! মা গো বলে প্রচন্ড ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠে জরী। মেয়েটা হয়তো তার খুবই চঞ্চল, দুরন্ত হবে। এসব সাতপাঁচ ভেবেই জরীর রাত কেটে যায়। জরীরা ছিলো তিন বোন। এ নিয়ে কষ্টের কোনো সীমা ছিলো না জরীর মা সালেহা বানুর। উঠতে বসতে শ্বশুর শাশুড়ি থেকে শুরু করে পাড়ার সবাই পর্যন্ত খোঁটা দিত কিন্তু শুধুমাত্র সংসার টা টিকিয়ে রাখার জন্য স্বামীর শত অপমান, মারধোর দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করত সালেহা। কিই বা করা! জানতো বিয়ের পর বাপের বাড়ি ফিরে গেলে কেউ ই যে মেনে নিবে না। শেষমেষ জরীর দাদীর চাপে ছেলে সন্তানের আশায় যেদিন তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে টা করল। সালেহা বানু যে মরাকান্না টা কেঁদেছিল, আজও সেটা মনে পড়লে গা শিউরে ওঠে জরীর।
মাসেক দুই আগে জরীর স্বামী মালেক মিয়া অতি আনন্দে তাকে শহরে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে গেল। সারা রাস্তা তার মুখে একটাই কথা, "বুঝলি জরী, দেখবি আমাদের পোলাডারে মেলা পড়ালেখা করামু! কোনো কিছুর অভাব রাখুম না! " ভয়ে ভয়ে জরী বলে, "মাইয়াও তো হইবার পারে " মালেক মিয়া এমনভাবে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকিয়েছিল, এরপর আর দ্বিতীয় বাক্য বলার সাহস ছিলো না জরীর। শহরের বড় হাসপাতাল, শত শত মানুষ অবাক হয়ে মাথা ঘুরিয়ে দেখছে জরী! কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার আসল। সাদা রঙের পোশাকে একটা মেয়ে ডাক্তার। কি সুন্দর না দেখা যাচ্ছে, জরী নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে।
পেটের উপর একটা জিনিস ঘুরিয়ে কি যেন পরীক্ষা করে ডাক্তারনী। জরীর লজ্জা লজ্জা লাগে, এই পরীক্ষা করলে নাকি জানা যায় বাচ্চা ছেলে হবে না মেয়ে। কি আচানক কথা! বাচ্চা যেন ছেলে হয়, একমনে আল্লাহ কে ডাকতে থাকে জরী। মেয়ে হবে শোনা মাত্রই মালেক মিয়া যখন চোখ লাল করে বলে, "মাইয়া মানুষ পালার কোনো ঠ্যাকা নাই। চল পেট নামায় দেই "...জরীর অন্তরাত্মা সহ কেঁপে উঠে তখন। কিভাবে নিজের পেটের বাচ্চাকে মেরে ফেলবে সে? যে বাচ্চাটা একটু একটু বেড়ে উঠছে তার শরীরে, সেটাকে সে কিছুতেই মেরে ফেলতে পারে না, মরে গেলেও না। মালেক মিয়া এরপর থেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। কখনো কখনো গায়ে হাতও তোলে। ঠিকমতো খেতে পায় না জরী।
ডাক্তার আপা বলছিল এই সময় ভালোমন্দ খাওয়া দরকার ফলমূল, দুধ ডিম এসব। উপায় না দেখে সেদিন মালেক মিয়ার পকেট থেকে কিছু টাকা সরায় জরী। এক হালি ডিম আর এক পোয়া দুধ কিনে তার বাচ্চাটাকে সুস্থ রাখতে হবেই। মা ছাড়া পৃথিবী তে বাচ্চাটার কেইবা আছে। একটু একটু করে সময় এগিয়ে চলেছে। জরীর পেটে পরীর মত বাচ্চাটা বেড়ে চলেছে ইদানীং জরী প্রায় একটাই স্বপ্ন দেখে, তার মেয়েটা বড় হয়ে ডাক্তার হবে। সাদা পোশাক পড়া ওই ডাক্তারনীটার মত! নিজে সারা জীবন যে সুযোগ টা পায়নি পড়ালেখা করার, তার মেয়ের ক্ষেত্রে সে সেটা হতে দিবে না! ওকে অনেক পড়ালেখা করাবে। অনেক বড় করে তুলবে। জরীর পেটের পানি ভাঙছে, তার আর্তনাদ শোনার মত পাশে কেউ নাই। মাটিতে শুয়ে তড়পাতে থাকে সে। তার মেয়েটাকে বাঁচাতে হবেই। একটা মেয়ের আরেকটা মেয়েকে বাঁচানোর এই চেষ্টা বৃথা যেতে পারেনা, কিছুতেই না !!
(আসলে আমাদের সমাজে মালেক মিয়ার মত পুরুষদের সু-শিক্ষা প্রয়োজন)
বিশেষ সাক্ষাৎকার
ইন্টার্নদের ভাতা ৩০ হাজার টাকা হওয়া উচিত: মুগদা মেডিকেল অধ্যক্ষ
আসছে নতুন কাব্যগ্রন্থ
সাহিত্য চর্চায় আনন্দ খুঁজে পাই: অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন

পিতাকে নিয়ে ছেলে সাদি আব্দুল্লাহ’র আবেগঘন লেখা
তুমি সবার প্রফেসর আবদুল্লাহ স্যার, আমার চির লোভহীন, চির সাধারণ বাবা
