মারা যাব কিন্তু ছেলেমেয়েদের নিঃস্ব করে যাব না

ডায়ালাইসিস করা প্রত্যেকটা রোগীর মাঝে সবসময় ই একটা আলাদা ভাল লাগা কাজ করে কারন এদের প্রত্যেকের মাঝেই আমি আমার বাবার গন্ধ পাই। একটা সুন্দর সাজানো গোছানো পরিবার কিভাবে একটু একটু করে ধংসের দিকে এগিয়ে যায় খুব কাছ থেকে না দেখলে বুঝতেই পারবেন না।
গতকাল শুনলাম লোকটা মারা গেছে। মাস দুয়েক আগে পরিচয়, বয়স খুব বেশি না ৩৫/৩৬ হবে। এক ছেলে এক মেয়ে, ছেলেটা ক্লাস টু তে পড়ে আর মেয়ের বয়স টু কি থ্রিতে পড়ে। ওনার বিয়েটা পারিবারিক ছিল না রিলেশনশিপ এর বিয়ে, বাবা মা মেনে নেন নি আলাদা ভাবে থাকতেন! পড়ে অবশ্য ৩/৪ বিঘা জমি ভাগে পেয়েছিলেন আর নিজে ছোট্ট একটা কাজ করতেন। বছর দুয়েক আগে কিডনি ফেইলার ধরা পড়ে, বাঁচার জন্য অনেক চেষ্টা ই করেছিলেন।
অল্প কথায় অনেক কিছুই শুনেছিলাম তার কাছে...
রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ইন্ডিয়া চিকিৎসার জন্য অনেক জায়গায় গিয়েছেন কিন্তু কোন খানেই টাকার অভাবে ভাল চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারেন নি। লাস্ট ৬ মাস মাত্র ১ দিন পর পর বাসা থেকে রংপুর আসতেন সরকারী মেডিকেলে কম খরচে ডায়ালাইসিস করানোর জন্য কারন বগুড়া মেডিকেলে কোন ডায়ালাইসিস সেন্টার নেই, প্রাইভেটে করাতে গেলে অনেক খরচ।
শেষবারের দেখাতে শুধু একটা কথায় শুনেছিলাম তার কাছে- মারা যাব কিন্তু ছেলেমেয়েদের নিঃস্ব করে যাব না। তিনি সত্যিই তার কথা রেখেছেন চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন কিন্তু অবশিষ্ট ২ বিঘা জমি বিক্রি করেন নি।
জীবন আসলে অনেক কিছুই দেখায়, অনেক ছোট ছোট ঘটনার পিছনে অনেক বড় আত্মকথা লুকিয়ে থাকে শুধু আমরা দেখি না। সৃষ্টিকর্তা যা করেন সব সময় ভালর জন্যই করেন কিন্তু কখনো কখনো এই ছোট্ট কথাটা মানতে কষ্ট হয়, খুব কষ্ট হয়।
আমাদের গভর্নমেন্ট মেডিকেলের সংখ্যা ৩৫/৩৬ আর বেসরকারি মেডিকেলর সংখ্যার কথা না হয় না ই বললাম, সরকার পারলে সপ্তাহে ২ টা করে অনুমোদন দিত!
মানের উন্নতি নেই, যন্ত্রপাতি নেই ভাল শিক্ষক নেই শুধু মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্টা করে টাকা পকেটে ভরলেই চিকিৎসা সেবার মান বাড়বে না, নিজেরা তো ঠিক ই ইউরোপ আমেরিকায় গিয়ে চিকিৎসা করাবেন আবার মাঝে মাঝে ঢং করে বলবেন আমি বিদেশি চিকিৎসা চাই না দেশি চিকিৎসা করাব।
কিন্তু একবার সেসব লোকের কথা ভেবে দেখুন যারা দিনের পর দিন হাসপাতালে পরে থেকেও ভাল চিকিৎসার অভাবে ধুকে ধুকে মরছে।
জানি এতিমের কান্না আপনাদের কাছে পৌছায় না, রাস্তার মানুষগুলো রাস্তাতেই থাকবে প্রাসাদে উঠতে পারবে না তবে একটা কথা কিন্তু চিরন্তন সত্য- আল্লাহ ইহকাল পরকাল মিলে একটা ইকুয়ালিটি দিয়েছেন, আজ যেটা নিবেন কাল সেটা অবশ্যই দিতে হবে।
প্রথম আলোতে কিছুদিন আগে "মেডিকেল শিক্ষায় জোড়াতালি" নামে একটা শিরোনাম পড়েছিলাম, খুব ভাল লেছেছিল- সাংবাদিক দের যতই গালি দেওয়া হোক না কেন সবাই এখনো সিস্টেমের বিরুদ্ধে যান নি। ভাল চিন্তাভাবনা আমদের সবার মধ্যেই আছে কেউ প্রকাশ করি কেউ করি না।
ঘৃনাকে ঘৃনা করতে থাকলে ঘৃনা বাড়তেই থাকে, ভালবাসা বাড়াতে হয় না, এটা সার্বজনীন।
সবাই নিজের দুঃখে কাঁদার আগে অন্যের কষ্টগুলো একটু অনুভব করার চেষ্টা করুন, দেখবেন ভাল আছেন, কারন আপনার চেয়ে অনেক কষ্টে থাকা মানুষগুলো ও হাসতে জানে, বাচঁতে জানে।
Moushum A. Ridoy
Rangpur Medical College
করোনার চিকিৎসা
বিশেষ প্রণোদনা পাচ্ছেন ১৪৭৪ চিকিৎসকসহ ২৮৬১ স্বাস্থ্যকর্মী
মেডিভয়েসকে বিশেষ সাক্ষাৎকারে পরিচালক
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শতাধিক করোনা বেড ফাঁকা

পিতাকে নিয়ে ছেলে সাদি আব্দুল্লাহ’র আবেগঘন লেখা
তুমি সবার প্রফেসর আবদুল্লাহ স্যার, আমার চির লোভহীন, চির সাধারণ বাবা

কিডনি পাথরের ঝুঁকি বাড়ায় নিয়মিত অ্যান্টাসিড সেবন
বেশিদিন ওমিপ্রাজল খেলে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ে
