
ডা. মারুফ রায়হান খান
লেকচারার, ফার্মাকোলজি বিভাগ, এনাম মেডিকেল কলেজ, সাভার, ঢাকা।
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১১:৪১ এএম
পৃথিবীতে টিকে যায় মাঝারি গোছের মানুষেরা

পৃথিবীতে টিকে যায় মূলত মাঝারি গোছের মানুষেরা। যারা উচ্চ সফলতায় অভ্যস্ত, তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুখী হতে পারেন না। জীবনে যারা সবসময় জিততেই থাকে, জিততেই থাকে-জীবন কি তাদের আজীবন জেতার গৌরবই দেয়? না, এটি ধরার নিয়ম নয়। স্বাভাবিকভাবেই তারা একটা সময় এসে হারের স্বাদ পায়, কিন্তু যে সবসময় জেতার স্বাদ পেয়ে অভ্যস্ত, সে কি এই পরাজয় মেনে নিতে পারে? পারে না। সে বিশ্বাস করতে পারে না কীভাবে হারতে পারে। এটাও সম্ভব? সে কীভাবে অকৃতকার্য হতে পারে? সারাজীবনে যা হয়নি, আজ সেটি কীভাবে হলো? ফলে সে দুমড়েমুচড়ে যায়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, পরাজয়ের সংজ্ঞা কী? পিছিয়ে পড়ার সংজ্ঞা কী? দেখা যাবে একজন হাই এচিভার (সর্বদা জিতার মানুষ) সামান্য থেকে সামান্যতর বিচ্যুতিকেই পরাজয় হিসেবে সংজ্ঞায়িত করছে। অথচ পৃথিবীর ৯০ শতাংশ মানুষ এটিকে মোটেও পরাজয় তো মনে করবেই না, বরং এতটুকু পর্যন্ত পৌঁছা অনেকের জন্য ভীষণ আরাধ্য।
যারা সারাজীবন পরিবারের, আত্মীয়-স্বজনের, পাড়া-প্রতিবেশী ও বন্ধুবান্ধবের প্রশংসা পেয়েছে, সমীহ পেয়েছে, কদর পেয়েছে, তারা যখন কোনো ব্যর্থতার সম্মুখীন কিংবা যখন নতুন নতুন সাফল্যের খবর দিতে পারছে না, তখন ভেবে নিলো সে আর ভ্যালিডেশান (স্বীকৃতি) পাবে না। সে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।
বাস্তবতা সবসময় এমনও নয়। বাস্তব জীবনের চাইতে সে তার মনের ভেতরকার জীবনটাকে আরও অনেক কঠিন করে ফেলে। তার চাই চাই আরও চাই। নতুবা সে স্যাটিসফাইড (সন্তুষ্ট) হতে পারে না। যে আজীবন মানুষের প্রশংসায় অভ্যস্ত, যখন সে কখনও তিরস্কার পায়, কটু কথার সম্মুখীন হয়, অপমানের শিকার হয়, তখন সেটি মেনে নেওয়ার মতো মানসিক শক্তি তার থাকে না।
অন্যদিকে মাঝারি গোছের মানুষ যারা, তারা সফলতাও যেমন দেখেছে তেমনি ব্যর্থতার চোরাবালির গভীরতাও তারা জানে, জীবনের বাঁকগুলো তাদের কাছে বেশি স্পষ্ট। তাদের ব্যর্থতার এক্সপোজার (প্রকাশ) মেনে নেওয়ার অভ্যাস রয়েছে এবং মানিয়ে নেওয়ার অভিজ্ঞতাও তাদের বেশি। আবার সফলতা যেহেতু তারা ডালভাতের মতো পায়নি, তাই সফলতা পেলে ওই আনন্দও তাদের বাঁধভাঙা। ব্যর্থতায় তারা ভেঙে পড়ে না, তারা আজীবন শুধু সুন্দর সুন্দর প্রশংসাই শোনেনি, তিরস্কারও শুনেছে, অপমাণিত হয়েছে বহুবার। ফলে দুইএকটা অপ্রীতিকর ঘটনায় তারা মুষড়ে পড়ে না। এমনটা হতেই পারে বলে গা ঝাড়া দিতে পারে। তাদের কাছে সবাই আহামরি সাফল্যজনক কিছু আশা করে না। ফলে তারা অনেকটা চাপমুক্ত হয়ে কাজ করে যেতে পারে। মাঝারি সাফল্যই তাদের মনের মধ্যে সুখ ডেকে নিয়ে আসে। অনেক বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাদের নেই বলে সুখী হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
অধিক উচ্চাকাঙ্ক্ষীদের মতো কোনো এক আঘাতে তারা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে থাকে না। এক দুঃসহ অভিজ্ঞতার ওজনকে নিজের মনের মধ্যে আরও সহস্রগুণ বাড়িয়ে নিয়ে, সে ভার আজীবন বইতে থাকে না। এজন্য ব্যর্থতা ও না পাওয়ার গ্লানির সঙ্গে শৈশবে পরিচিত হওয়া প্রয়োজন।
এএইচ/
-
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
-
১৯ অগাস্ট, ২০২৩