ডা. হাবিবুর রহমান

ডা. হাবিবুর রহমান

জুনিয়র কনসালটেন্ট (এনেস্থেশিয়া),
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল


১১ অগাস্ট, ২০২৩ ১২:১৭ পিএম

ডা. ফজল নাসেরের হৃদ্যতার গল্প 

ডা. ফজল নাসেরের হৃদ্যতার গল্প 
ফজল নাসের। ছবি: সংগৃহীত

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন পোস্টে সিনিয়র স্যারদের চেম্বারে জুনিয়রদের রোগী নিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা পড়ি। এ ব্যাপারে অধিকাংশের অভিজ্ঞতাই সুখকর নয়। এ রকম অভিজ্ঞতা আমারও কম না।

তিক্ততা এড়াতে ইদানীং আমি পরিচয় গোপন করে একজন স্যারের চেম্বারে যাই। কিন্তু সমস্যা অন্যখানে।

দুই-চার লাইন বলার পরই মুখ ফসকে কিছু কথা বের হয়ে পড়ে। আর এতেই ওই প্রান্তের মানুষটি বুঝে ফেলেন আমি তাঁর সমগোত্রীয়। তখন কেমন যেন লজ্জায় পড়ি।

যাই হোক, আজকেও এ রকম একটি অভিজ্ঞতার কথা বলতে চাই। তবে এ ঘটনা অতৃপ্তির নয়, বরং সৌহার্দে মোড়ানো এক স্বস্তির গল্প। গল্পের আদর্শ মানুষটিকে নিয়ে কিছু না বলা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না।

একই সঙ্গে বিবেক বলছে তাঁর সম্পর্কে অন্যদেরও জানানো দরকার। কেননা তাঁর কাছ থেকে শেখার আছে অনেক কিছু।

মানবিক এই চিকিৎসকের নাম মো. ফজল নাসের। তিনি জাতীয় কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (নিকডু) ইউরোলজি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।

এমবিবিএস পড়ার সময় রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে স্যার আমার শিক্ষক ছিলেন। এক যুগের বেশি সময় আগের কথা।

যেই ঘটনা বলতে আজকে কলম ধরলাম, তাহলো—আমার ছেলেকে দেখানোর জন্য সকালে সিরিয়াল ম্যানকে নক দিলাম। তবে তিনি আজ সিরিয়াল নিতে পারবেন না বলে জানালেন।

একান্তই বাধ্য হয়ে স্যারকে ফোন দিলাম। স্যার ফোন ধরেননি। হয়তো ব্যস্ত ছিলেন কিংবা আমার নাম্বার সেইভ করা ছিল না।

পরে হোয়াটসঅ্যাপে এ নক দিয়ে স্যারকে জানালাম, আমি তাঁর চেম্বারে আসতে চাই।

দেখলাম, স্যার ক্ষুদে বার্তাটি পড়েছেন, কিন্তু কোনো উত্তর দেননি। তারপরও প্রত্যাশা নিয়ে তাঁর চেম্বারে যথাসময়ে হাজির হলাম।

কাউন্টারে আমার পরিচয় দিতেই শুনলাম স্যার নাকি আমার কথা বলে রেখেছেন। বিষয়টি জানার পর স্যারের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় হৃদয়টা ভরে যায়।

একজন রোগী দেখা শেষেই স্যার আমাদেরকে ডেকে নিলেন। অনেকক্ষণ শুধু আমার খোঁজ-খবর নিলেন।

ছেলেকে অত্যন্ত যত্নসহকারে দেখলেন, পরামর্শ দিলেন। এক পর্যায়ে আক্ষেপ করে বললেন, এই ব্যস্ততা থেকে তিনি মুক্তি চান, দেশ-বিদেশে ঘুরতে চান, জীবন উপভোগ করতে চান।

যাই হোক, প্রয়োজনীয় কথা-বার্তা শেষে স্যারের কাছ থেকে বের হয়ে ফি দিতে গেলে সিরিয়াল ম্যান ভদ্রতার সাথে অস্বীকৃতি জানালেন।

বাচ্চার অসুস্থতা সত্ত্বেও মনে কেমন যেন এক প্রশান্তি অনুভব করলাম।

স্যারের চেম্বার থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে বললাম, বাসায় না, চলো ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে যাই।

সিনিয়র স্যারদের কাছ থেকে আমরা এতটুকুই তো প্রত্যাশা করি, এর বেশি কিছু নয়। 

এমইউ

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  ঘটনা প্রবাহ : মানবিক চিকিৎসক
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
নম্বরের কথা চিন্তা করে পড়াশোনা করিনি: ডা. জেসি হক
এমআরসিপিতে বিশ্বসেরা বাংলাদেশি চিকিৎসক

নম্বরের কথা চিন্তা করে পড়াশোনা করিনি: ডা. জেসি হক