নাইটিংগেল মেডিকেলের ৫২ শিক্ষার্থীকে মাইগ্রেশনের নির্দেশ হাইকোর্টের

মেডিভয়েস রিপোর্ট: সাভারের আশুলিয়ায় বেসরকারি নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ৫২ শিক্ষার্থীর ভর্তি অন্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরের (মাইগ্রেশন) সু্যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। রোববার (৪ জুন) বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী খাজা তানভীর আহমেদ।
পরে আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, 'অন্য যেসব বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আসন শূন্য আছে, সেসব মেডিকেলে এসব শিক্ষার্থীদের মাইগ্রেট করতে বলা হয়েছে। আর মাইগ্রেশনের খরচ নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে বহন করতে বলেছেন আদালত।'
আাগামী তিন মাসের মধ্যে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মেডিসিন অনুষদের ডিনের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নানা অনিয়মের ও অব্যবস্থার অভিযোগে ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বরে ২০১৭-২০১৮ শিক্ষা বর্ষে সাভারের আশুলিয়ায় অবস্থিত বেসরকারি নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজসহ বেসরকারি পাঁচটি মেডিকেল/ডেন্টাল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি না করার নির্দেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
পরে এই বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন নাইটিংগেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ রিটের প্রাথমিক শুনানির পর ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি ভর্তি বন্ধের নির্দেশনা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন আদালত। পরে একই বছরের মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের অধীনে ৫২ জন শিক্ষার্থীকে নাইটিংগেল কলেজে ভর্তি নেওয়া হয়।
পরবর্তীতে আদালত থেকে স্থগিতাদেশের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে নেয় মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রয়োজনীয় শিক্ষক, অপারেশন থিয়েটার, হাসপাতালে রোগী না থাকায় চতুর্থ বর্ষে এসেও শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরীক্ষা ব্যাহত হচ্ছিল। নিয়ম অনুযায়ী, এমবিবিএস পঞ্চম বর্ষে এসে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করতে হয়।
রেজিস্ট্রেশনের বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো তথ্য না পেয়ে বিএমডিসিতে যোগাযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে জানানো হয়, ভর্তি স্থগিতের নির্দেশ দেওয়া মেডিকেল কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে না। এরপর ২০১৭-১৮ শিক্ষা বর্ষের ৫২ শিক্ষার্থীর মধ্য ৪৫ জন শিক্ষার্থী অন্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে ভর্তি স্থানান্তরের সু্যোগ চেয়ে গত বছর আগস্টে হাইকোর্টে রিট করেন।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২০২২ সালের ৩০ আগস্ট হাইকোর্ট শিক্ষার্থীদের অন্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মাইগ্রেশনের সু্যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন।
হাইকোর্টের এ আদেশ স্থগিত চেয়ে লিভ টু আপিল দায়ের করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চেম্বার আদালত হয়ে গত বছরের ৯ নভেম্বর মামলাটি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসে।
শুনানির ধারাবাহিকতায় গত মাসে এসব শিক্ষার্থীদের মাইগ্রেশনের বিষয়ে আদালতকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, হাইকোর্টে বিচারাধীন রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের মাইগ্রেট করা সম্ভব না। এরপর গত ১৬ এপ্রিল নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে বিচারাধীন রিট প্রত্যাহার করে নেয়।
তারপরও নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজের ৪৫ শিক্ষার্থীর মাইগ্রেশনের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদ কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আপিল বিভাগে আবেদন করেন শিক্ষার্থীরা। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিনকে তলব করেন আপিল বিভাগ।
গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ঢাবির মেডিসিন অনুষদের ডিন আদালতে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের মাইগ্রেশনের বিষয়ে সময় চাইলে এ আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।