বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি নীতিমালা শিথিলের তথ্য ভিত্তিহীন: স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর

মেডিভয়েস রিপোর্ট: দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি নীতিমালা শিথিল হওয়ার তথ্য সঠিক নয়। এ নীতিমালা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নির্ধারিত হয়, অধিদপ্তরে নয়।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ জামাল মেডিভয়েসের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান।
এর আগে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত নিউজে বলা হয়েছে, ‘দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হলে জাতীয় মেধাক্রমে ৩৪ হাজারের মধ্যে থাকার বাধ্যবাধকতা শিথিল করতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর।’
অধ্যাপক ডা. জামাল বলেন, ‘ এ ধরনের অদ্ভুত নিউজ কোথায় থেকে পায়, এ বিষয়ে আমাদের কোনো আদেশ নেই, কিছুই নেই। এ তথ্য সঠিক নয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এ ধরনের কোনো আদেশ দেওয়া হয়নি। আর এটি অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টও নয়, এমবিবিএস-বিডিএস ভর্তি নীতিমালা জাতীয়ভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত। ভর্তি নীতিমালা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) প্রণয়ন করে। মেডিকেলে ভর্তি নীতিমালার পরিবর্তনের ইখতিয়ার স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর রাখে না।’
‘নীতিমালা যেভাবে দেওয়া হয়েছে, সেভাবেই বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি করা হবে। আর যদি কোনো পরিবর্তন করা হয়, তাহলে ঘোষণা দিয়েই নীতিমালা পরিবর্তন করা হবে। এ নীতিমালা শিথিল হওয়ার তথ্য সঠিক নয়, বিএমডিসির ওয়েবসাইটে সবকিছু দেওয়া আছে। যে নীতিমালা ওয়েবসাইটে আছে, সেই অনুযায়ীই বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি কার্যক্রম চলবে।’
প্রঙ্গত, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকার ৩৩ হাজার ৮৬০ এর মধ্যে থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গত ৯ মার্চ দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পরীক্ষায় শুধুমাত্র পাস করলেই বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির নিয়ম আর থাকছে না। এখন থেকে বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতি আসনের বিপরীতে মেধা অনুযায়ী ৫ জন ভর্তি হওয়ার যোগ্য হবেন। সে অনুযায়ী বেসরকারি মেডিকেলের ৬ হাজার ৭৭২টি সিটের বিপরীতে মেরিটে ৩৩ হাজার ৮৬০ এর মধ্যে থাকলে ভর্তির ক্ষেত্রে যোগ্য হবেন।’
তিনি বলেন, ‘এ বছর যারা পাস করে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবেন, সেখানে আমরা কিছুটা পরিবর্তন এনেছি। আগে পাস যতই করুক সবাই ভর্তিযোগ্য হতো। গত বছর ৮০ হাজার পাস করেছিল। ৮০ হাজারই ভর্তির যোগ্য ছিল।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘ভর্তির জন্য এ বছর আমরা সেটাকে কমিয়ে এক অনুপাত পাঁচ করেছি। অর্থাৎ একটা সিটের জন্য পাঁচজন করে আমরা কনফিগারেশন করব মেরিট অনুযায়ী। অর্থাৎ তাতে ৩৩ হাজার ৮৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে বেসরকারি ৬ হাজার ৭৭২টি সিটে ভর্তি হতে পারবে।’
এর আগে চলতি বছরের গত ১০ ফেব্রয়ারি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে তুলনামূলক যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্থান দিতে ও ভর্তি জালিয়াতি বন্ধে চালু হলো অটোমেশন পদ্ধতি। নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি প্রক্রিয়া হবে সফটওয়্যারে। ভর্তিতে পাস নম্বর ৪০ হলেই হবে না, মেধাক্রমে থাকতে হবে ৩৪ হাজারের মধ্যে। ফলে অনিয়ম ও অর্থের বিনিময়ে ভর্তির সুযোগ বন্ধ হবে।’
বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো: জামাল মেডিভয়েসকে বলেছিলেন, ‘ধরেন কোন বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৫০টি সিট আছে। তারা প্রথম দিকের সিরিয়াল থেকে ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে, পরে বেশি টাকার বিনিময়ে একবারে পেছন দিকে থেকে টান দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করেন। সিরিয়ালে আগে থাকা সত্বেও যাদের পক্ষে ১৮ বা ২০ লাখ টাকার বেশি দেওয়া সম্ভব নয়, তারা তখন আর সুযোগ পাচ্ছে না। এরা কিন্তু তুলনামূলক মেধাবী, হয়তো সামান্য কয়েক নাম্বারের জন্য সরকারি মেডিকেলে সুযোগ পায়নি।’
অধ্যাপক ডা. জামাল বলেন, ‘বাবা-মা কষ্ট করে জমি-জমা বিক্রি করে হলেও ১৮-২০ লাখ টাকা যোগাড় করে দিতে পারবে, কিন্তু ৫০ লাখ টাকা দিতে পারবে না। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর বেশি লাভের জন্য যোগ্য ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে বঞ্চিত হতেন।’
তিনি বলেন, ‘যারা বেশি টাকা দিয়ে পেছনে সিরিয়ালে থেকে ভর্তি হয়ে পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট করে, এদের কারণে আর ভালো শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে না পেরে হীনমন্যতায় ভোগে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মালিকদেরকেও বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। তারা এতো দিনে বুঝতে পেরেছেন কোয়ালিটি উন্নতি না করলে, তারাও টিকবে না। বেশিরভাগ প্রাইভেট মেডিকেলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।’
‘ভর্তিতে অনিয়ম এবং বেশি লাভ করতে গিয়ে অনেকগুলো প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অর্থনৈতিকভাবে ধুকছে। শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। এ জন্য অটোমেশন ও মেধা তালিকার নিয়ম একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মনে করি,’ যোগ করেন এবিএম ডা. জামাল।’
এসএএইচ/এএইচ