০২ মে, ২০২৩ ০৯:২৫ পিএম

রেসিডেন্সি কোর্স পুনর্গঠন করে প্রজ্ঞাপন, প্রান্তিক মেডিকেলে ২ বছর প্রশিক্ষণ

রেসিডেন্সি কোর্স পুনর্গঠন করে প্রজ্ঞাপন, প্রান্তিক মেডিকেলে ২ বছর প্রশিক্ষণ
প্রতীকী ছবি

মেডিভয়েস রিপোর্ট: পাঁচ বছরের রেসিডেন্সি কোর্সের দুই বছর স্থানীয় পর্যায়ের মেডিকেলে ক্লিনিক্যাল প্রশিক্ষণের বিধান রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। একই নির্দেশনার আওতায় ডিপ্লোমা/এমফিল কোর্সের চিকিৎসকগণ তাদের কোর্সের মেয়াদের এক বছর প্রান্তিক মেডিকেলে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন। আগামী জুলাই ২০২৩ সেশন থেকে চালু হচ্ছে নতুন এই নিয়ম।

আজ মঙ্গলবার (২ মে) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এ কথা বলা হয়েছে।

ফলে উল্লিখিত সেশন থেকে এমডি-এমএস ও ডিপ্লোমা/এমফিল কোর্সের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের পূর্ণ মেয়াদ (৫ বছর ও ৩ বছর) বড় শহরের ইনস্টিটিউটগুলোতে অধ্যয়নে ছেদ পড়ছে। এর পরিবর্তে তাঁদেরকে ক্লিনিক্যাল প্রশিক্ষণের সুবিধা আছে—এমন প্রান্তিক পর্যায়ের মেডিকেল কলেজে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তবে প্রস্তাবিত এই সময়সীমা (দুই বছর ও এক বছর) ফেজ-এ থেকে নাকি, ফেজ-বি থেকে নেওয়া হবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) সিদ্ধান্ত প্রদান করবে।

মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা শিক্ষা-১ শাখার রুহুল কুদ্দুস স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘দেশের অভ্যন্তরে স্নাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষা ও তদুদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত প্রেষণ নীতিমালা-২০২২ (সংশোধিত) এবং ইতঃপূর্বে এ সংক্রান্ত জারিকৃত প্রজ্ঞাপন যা-ই থাকুক না কেন, পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত জুলাই ২০২৩ সেশন থেকে ক্লিনিক্যাল সাবজেক্টসম্পূহের এমডি/এমএস কোর্সের ৫ বছরের মধ্যে ২ বছর এবং ডিপ্লোমা/এমফিল কোর্সের ২ বছরের মধ্যে ১ বছর অন-দা-জব ট্রেইনিং হিসেবে সম্পন্ন হবে। স্থানীয় পর্যায়ে ক্লিনিক্যাল প্রশিক্ষণ প্রদাণের সুবিধা বিদ্যমান থাকলে স্থানীয় পর্যায়েই প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে ক্লিনিক্যাল প্রশিক্ষণ প্রদানের সুযোগ না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ক্লিনিক্যাল প্রশিক্ষণ করতে হবে। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) বিধিমোতাবেক কারিকুলাম সংশোধন করবে।’

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ রাতে মেডিভয়েসকে বলেন, ‘নোটিসটি আমাদের নজরে এসেছে। এখানে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো বিবেচনায় নিয়ে আমরা প্রশাসনিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবো। আমাদের শিক্ষার্থীদের ক্ষতি না হলে নোটিস অনুযায়ীই চলবে। আর যদি দেখি, শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে কিংবা সরকারি-বেসরকারি প্রার্থীদের বেলায় দুই রকম হয়ে যায়, তাহলে আমরা সমন্বিত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সরকারের সঙ্গে কথা বলবো।’

তবে নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে খুব বেশি সমস্যা হবে না জানিয়ে বিএসএমএমইউ ভিসি বলেন, ‘যেখানে যেখানে কোর্স আছে, সেখানে রেসিডেন্ট ও ডিপ্লোমা-এমফিল কোর্সের সরকারি চিকিৎসকরা প্রশিক্ষণ নেবেন। সরকার যদি মনে করে যাদেরকে ডেপুটেশন দেওয়া হচ্ছে তাদেরকে সরকারি মেডিকেলে প্রশিক্ষণ করাবে, তাহলে তারা এমন একটি প্রস্তাব দিতেই পারে।’

এ ব্যাপারে সদ্য অবসরে যাওয়া স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ কে এম আমিরুল মোরশেদ মেডিভয়েসকে বলেন, আগে চিকিৎসকরা পাঁচ বছরের ডেপুটেশনে চলে আসতেন, তাতে প্রান্তিক পর্যায়ে চিকিৎসক স্বল্পতা লেগে থাকতো। বিদ্যমান ডেপুটেশন নিয়মের মধ্যে সাড়ে সাত থেকে আট হাজার চিকিৎসক একই সময়ে ডেপুটেশনে যান, এর মেয়াদ দুই বছর কমে গেলে প্রায় তিন হাজার চিকিৎসক প্রান্তিক পর্যায়ে চিকিৎসা দিতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, প্রশিক্ষণের বাধ্যবাধকতা না থাকায় কেউ সিএ, আইএমও, রেজিস্ট্রার পোস্টগুলোতে যেতে চান না। ফলে ঢাকা বা চট্টগ্রামসহ বড় শহরের মেডিকেলগুলোতে এসব পদ পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রিধারী চিকিৎসকগণ দখল করে আছেন। অন্য দিকে স্থানীয় পর্যায়ের মেডিকেল কলেজের প্রত্যেক বিষয়ের সিএ, রেজিস্ট্রার পদগুলো শূন্য হয়ে আছে। এতে সেবার মান নিশ্চিত হচ্ছে না। উদাহরণস্বরূপ বলি, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের (শেবাচিম) পেডিয়াট্রিক্সে ১৬টি পদের বিপরীতে মাত্র একজন চিকিৎসক আছেন। আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজে ২৪টি পদের বিপরীতে ১৯ জনই পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রিধারী, যাদের আসলে প্রশিক্ষণ নেওয়া নিষ্প্রয়োজন।

‘পাঁচ বছর প্রশিক্ষণের সময়ে অনেক রেসিডেন্ট চিকিৎসক সন্তানকে বড় শহরের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করান। ফলে তিনি প্রান্তিকে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। একান্ত বাধ্য হয়ে গেলেও বাসাটা শহরেই রেখে দেন, আসা-যাওয়ার মধ্যেই থাকেন। সবচেয়ে খারাপ দিক হলো, চাকরিবিধি অনুসরণ করে এসব চিকিৎসক দুই বছর পর কোর্সে অধ্যয়নের জন্য শহরে চলে আসেন। অথচ চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য ২/৩টি বিষয় খুব জরুরি, তাহলে—ফাউন্ডেশন ট্রেনিং, ডিপার্টমেন্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও সিনিয়র স্কেল পাস করা। দুই বছর পর চলে আসায় একজন চিকিৎসকের চাকরিটাও স্থায়ী হয় না, তিনি সিনিয়র স্কেলও দিতে পারেন না। এদিকে দেখা যায়, অনেকে আবার পাঁচ বছরে কোর্সে পাস করেন না, ছয় বছর, সাত বছর, কারও আট বছরও লেগে যায়। আট বছর পর তিনি দেখেন, অন্য ক্যাডারের লোকজন পরবর্তী গ্রেড পেয়ে গেলো, অথচ তার কোনো পদোন্নতি নেই’, যোগ করেন রেসিডেন্সি কোর্স পুনর্গঠন নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করা এ স্বাস্থ্য প্রশাসক।

প্রান্তিকের মেডিকেলে পাঠানোর পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, প্রান্তিকে যতগুলো কেন্দ্রে চিকিৎসা শিক্ষার উচ্চতর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তার সবগুলোতে সব বিষয় নেই, যেমন—পেডিয়াট্রিক্স অনকোলজি, গাইনি অনকোলজি ইত্যাদি। এমন পরিস্থিতিতে পড়লে বিএসএমএমইউ ওই শিক্ষার্থীর জন্য প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করবে। সেটা বিএসএমএমইউ, ঢামেক কিংবা অন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠান হতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ সাবজেক্ট যেমন- সার্জারি, গাইনি, আই, ইএনটি—এগুলো প্রান্তিক মেডিকেল কলেজে আছে এবং সেসব মেডিকেলের কোর্সও প্রশিক্ষণ হিসেবে গণ্য হয়।

এর আগে গত বছরের শেষ দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় রেসিডেন্সি কোর্স পুনর্গঠনের প্রস্তাব করা হয়। প্রস্তাবনায় বলা হয়, এমডি/এমএস রেসিডেন্সি কোর্স ০২ বছর প্রশিক্ষণ এবং ০৩ বছর সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের বিধান রেখে পুনর্গঠন করতে হবে। 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত