২৬ এপ্রিল, ২০২৩ ০৮:১৮ পিএম

ঈদ উৎসবের স্বাস্থ্যকর খাবার 

ঈদ উৎসবের স্বাস্থ্যকর খাবার 
দীর্ঘ সংযমের পর ঈদের দিন এ রকম বাহারী খাবারে আল্লাহর আতিথেয়তায় অবগাহন করেন প্রত্যেক রোজাদার। তবে এতে একটু বেপরোয়া হলেই ঘটে বিপত্তি।

এক মাস রোজা পালনের পর মুসলমানের ঘরে ঘরে বয়ে যায় ঈদআনন্দ। রংবেরঙের নতুন জামায় মোড়ানো এই খুশির দিনে পুলকিত থাকে ছেলে-বুড়ো সবার মন। 

এর সঙ্গে থাকে মজাদার নানা খাবার, থাকে চিরায়ত ঐতিহ্যের অংশ ফিরনি-সেমাই। এ ছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চলে যুক্ত হয় রসনা তৃপ্ত করা ডুবো তেলের বিভিন্ন স্বাদের নানা রকম পিঠা। 

দীর্ঘ সংযমের পর ঈদের দিন এ রকম বাহারী খাবারে আল্লাহর আতিথেয়তায় অবগাহন করেন প্রত্যেক রোজাদার। তবে এতে একটু বেপরোয়া হলেই ঘটে বিপত্তি। 

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়েরর (বিএসএমএমইউ) গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আনওয়ারুল কবীর মেডিভয়েসকে বলেন, ঈদের সকাল বেলা থেকেই সেমাই থেকে বিভিন্ন রকমের মিষ্টি, পোলাও বিরিয়ানি খাওয়া শুরু হয়। একজন মানুষ সারামাস ধরে সারাদিন না খেয়ে থাকলেন, অথচ পরের দিন (ঈদের দিন) সকাল থেকেই সেমাই-নুডলস-ফিরনি, মিষ্টি, বিরিয়ানি, পোলাও খাওয়া আরম্ভ করলেন। এই অস্বাভাবিক পরিবর্তন পাকস্থলীকে অস্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে চলে যায়।

ঈদের দিন অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের অপকারিতার কথা জানিয়ে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা যখন ঈদের দিন বিভিন্ন বাসায় গিয়ে বারবার খেতে থাকি, এটা আমাদের পেটে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপের জন্য পেটে গ্যাস দেখা দেয়, এতে পেট ফেঁপে যায়, ফুলে যায়।  

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঈদ উৎসবে পেটের অসুখ নিয়ে বহু রোগী হাসপাতালে আসেন। সীমিত জনবলে ব্যাপক সংখ্যক রোগীর স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের।

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বলেন, অনিয়ন্ত্রিত খাবারের কারণে এই দিন অনেকের ডায়রিয়া, আমাশয় দেখা দেয়। এ ছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস নিয়ে অনেক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন।

তিনি বলেন, আরেকটা রোগ নিয়ে এ সময় রোগীরা হাসপাতালে আসেন, যা সাধারণত অন্যান্য সময় পাওয়া যায় না। তাহলো পিত্তথলীতে পাথরের রোগী। তারা এই সময় বেশি ফ্যাটি ফুড খেলে কোলেসিস্টাইটিজ (পিত্তথলীল পাথর) নিয়ে হাসপাতালে আসেন।

ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার শরীরে নানা ক্ষতি ডেকে আনে জানিয়ে ঈদের আনন্দ অস্বস্তিতে না ডুবাতে তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. মো. আনওয়ারুল কবীর বলেন, ফ্যাটি ফুড পাকস্থলীকে ছোট করে দেয়, খাদ্যনালীকে সরু করে দেয়। ফলে খাদ্যনালী ফুলে থাকে। তাই এ জাতীয় সমস্যা এড়াতে কম পরিমাণেই খান। এ সময় বরং একটু সালাদ খান। তাতে পেটের পীড়া থেকে সুরক্ষা পাবেন, স্বস্তিতে থাকতে পারবেন। এ সময় বিরিয়ানি-পোলাও অপরিমিত খেলে বেশি কষ্ট হবে।   

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বলেন, চর্বিজাতীয় খাবার যেমন গরুর মাংস, খাশির মাংস কিংবা এ জাতীয় মাংসের ঝোল, মিষ্টি, বেশি পরিমাণ, অতিরিক্ত মাত্রায় (দিনে ৩-৪টা) ডিমের কুসুম। এসব খাবার অতিরিক্ত গ্রহণের কারণে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। 

এ ছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে পেটের পীড়াসহ শারীরিক নানা জটিলতায় আক্রান্তদের খাদ্য গ্রহণে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।  

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বলেন, আমাদের কাছে সাধারণত পেপটিক আলসার ডিজিজ, ডিসপেপশিয়া, পুরনো লিভার রোগী যেমন- সিরোসিস, আইবিএসের রোগী- তারা সারা বছরই ওষুধের ওপর থাকেন। মাঝে মাঝেই তাদের রোগের মাত্রা বেড়ে যায়। এসব রোগীকে সব সময় খাবার গ্রহণে যেভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়, ঈদের সময় একইভাবে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলি।

সবাইকে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে উৎসব উদযাপনের পরামর্শ দিয়ে বিএসএমএমইউর এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ‘আমরা সবাইকে ঈদের আনুষ্ঠানিকতায় অংশ গ্রহণে উৎসাহিত করি। অন্যদের সঙ্গে আনন্দে যুক্ত হতে বলি। তবে সুগারের মাত্রা অবশ্যই মনে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে সকালে ঘুম থেকে উঠে রক্তের গ্লুকোজ মেপে নিন। এর ভিত্তিতে খাওয়া-দাওয়া করবেন। পুরনো রোগীরা এ ব্যাপারে অবগত আছেন। তাদের জন্য আলাদা করে কিছু বলার নেই। নতুন রোগীদের সুপারের মাত্রা যদি বেশি থাকে, তাহলে মিষ্টি জাতীয় খাবার অবশ্যই কম গ্রহণ করতে হবে। যদি সন্তোষজনক পর্যায়ে থাকে, মোটামুটি পরিমাণ খেতে পারবেন।

তাহলে কেমন হবে ঈদের দিনের খাদ্যতালিকা? এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. মো. আনওয়ারুল কবীর বলেন, ঈদের সকাল বেলা একটু কম খাওয়া উচিত। এজন্য সর্বোচ্চ সচেষ্ট হতে হবে। ঈদের দুপুর বেলায় বাসায় রান্না হয়, আত্মীয়-স্বজনের বাসায় গেলেন, সেখানেও রান্না হয়েছে। আত্মীয়ের মন রক্ষা করতে খান, খুব কম পরিমাণে খান। রমজানে এক মাসের অভ্যস্ততার জন্য সন্ধ্যায় আপনার একটু ক্ষুধা লাগবে, তখনও কিছু খান।

সুতরাং পুরোপুরি উপেক্ষা কিংবা ডুবে যাওয়া নয়, বরং রয়ে সয়ে যুক্ত হতে হবে উৎসব উদযাপনে। আর ঈদআনন্দ স্বস্তিদায়ক করতে মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যনীতি।ডায়াবেটিস রোগীদের মিষ্টি খাবার গ্রহণের সাবধানতা অবলম্বনের তাগিদ দিয়েছেন ডা. শাহজাদা সেলিম। তিনি বলেন, ঈদের বেলায় একজন মানুষ দিনের বেলায় খাওয়া শুরু করবেন। এক মাসের সিয়াম সাধনার পর ঈদের দিনের যে পরিবর্তন, এটা হজমের ওপর প্রভাব ফেলে। সুতরাং এমন কোনো খাবার খাওয়া উচিত হবে না, যেগুলো গুরুপাক। যেমন-অনেক বেশি ভাজা-পোড়া খাবার। তাই পোলাও-বিরিয়ানি যত কম খাওয়া যায়। আর ডায়াবেটিস রোগীকে মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণের আগে বিবেচনা করতেই হবে যে, তিনি কতটুকু খাবেন।   খাবার গ্রহণে পরিমিত বোধে সচেতনতায় গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাহমুদুজামান, ঈদের দিন যেখানেই যাবো, একবেলার খাবার বিভিন্ন বাসা থেকে ভাগ ভাগ করে অল্প পরিমাণে খাবো।

 

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক