চিকেন পক্স: লক্ষণ ও চিকিৎসা

মো. তাওহিদুল ইসলাম: জলবসন্ত বা চিকেন পক্স অতি সংক্রামক ভাইরাসজনিত একটি রোগ। শীতের শেষে বসন্তের আগমনে আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে দেখা দেয় যন্ত্রণাময় এ রোগ। মূলত আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। ছোঁয়াচে এ রোগ বছরের যেকোনো সময়ই হতে পারে। তবে বসন্তকালে এর প্রাদুর্ভাব বেশি। এ রোগে সাধারণত শিশুরা বেশি আক্রান্ত হলেও যেকোনো বয়সেই এটি হতে পারে।
এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে হালকা সর্দি জ্বর বা খারাপ লাগা কাজ করতে পারে। এ ছাড়া শরীরে ছোট ছোট বিচি বা র্যাশ উঠে। এই র্যাশ দেখতে অনেকটা ফোসকার মতো। এগুলো খোটাখুটি করতে ও কবিরাজি চিকিৎসা নিতে নিষেধ করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
তারা বলেন, চিকেন পক্স বছরের যেকোনো সময়ই হতে পারে। তবে বসন্তের শুরুতে এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয় মানুষ। তার অন্যতম কারণ আবহাওয়া পরিবর্তন। পক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির সবার থেকে আলাদা থাকতে হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে।
এ বিষয় ঢাকা মেডিকল কলেজের অধ্যাপক ডা. মাসুদা খাতুন মেডিভয়েসকে বলেন, শীতের শেষের দিকে আর গরমের শুরু বা বসন্তের শুরুতের মূলত জলবসন্ত বা চিকেন পক্সের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এটি অতি সংক্রামক ভাইরাসজনিত একটি রোগ। ছোঁয়াচেও এই রোগ দেখা দিলে রোগী সবার সংস্পর্শ এড়িয়ে যাবেন। আক্রান্ত হলে শুরুতে হালকা জ্বর ও শরীরে খারাপ লাগা কাজ করে।
তিনি আরও বলেন, পক্স থেকে সুস্থ হতে সাধারণত সাত থেকে ১০ দিন সময় লাগে। এ রোগের বিশেষ কোনো ওষুধ নেই। তবে জ্বর থাকলে রোগী নাপা খাবেন আর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলবেন। কিন্তু পক্স প্রতিরোধে বা সুস্থ্ হতে কবিরাজি চিকিৎসা করানো যাবে না। এই রোগের জন্য কবিরাজি অপচিকিৎসা। আর এই রোগ কারো একবার হলে দ্বিতীয়বার হওয়ার আর আশঙ্কা থাকে না। দ্বিতীয়বারের মতো পক্স হয়, এটা খুব বিরল।
চিকেন পক্সের লক্ষণ
পক্সে আক্রান্ত হওয়ার শুরুতে হালকা ব্যথা, অল্প জ্বর থাকতে পারে। আবার জ্বর নাও আসতে পারে। হালকা সর্দি জ্বর বা খারাপ লাগা কাজ করতে পারে। এ ছাড়া শরীরে ছোট ছোট বিচি বা র্যাশ উঠবে। সাধারণত এ র্যাশ বুকে-পিঠে দেখা যায়, তবে সারা শরীরেই উঠতে পারে। এতে পানি থাকে, দেখতে অনেকটা ফোসকার মতো।
করণীয়
জলবসন্ত বা চিকেন পক্স রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বাসার সবার থেকে আলাদা থাকবে। রোগীর ব্যবহৃত পোশাক অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। এ সময় রোগী ঘরের বাইরে যেতে পারবে না। বাসার বাইরে গেলে ছোঁয়াচে এই রোগে অন্য কেউ আক্রান্ত হতে পারে। এমন সময় বাসায় বিশ্রামে থাকবে। কোনোভাবেই কর্মস্থলে যাওয়া যাবে না। এ সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রতিদিনই হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারবে রোগী। তবে শরীর ঘষতে পারবে না। খেয়াল রাখতে হবে যাতে র্যাশ ভেঙে না যায়। গোসল শেষে যতটা সম্ভব স্বাভাবিকভাবেই শরীর শুকিয়ে নিতে হবে।
খাদ্য তালিকা
পক্সে আক্রান্ত ব্যক্তি সব কিছুই খেতে পারবে। খাবারে কোনো নিষেধ নেই। তবে পুষ্টিকর খাদ্য বেশি করে খেতে হবে।
চিকিৎসা
চিকেন পক্সের জন্য বিশেষ কোনো ওষুধের প্রয়োজন নেই। তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। ইনফেকশন প্রতিরোধে চিকিৎসকের পরামর্শ মতে অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টি ভাইরাল খাওয়া যেতে পারে। আর জ্বর থাকলে নাপা ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে।
পক্সের দাগ দূর করতে করণীয়
চিকেন পক্সের র্যাশ বা বিচিগুলো খুঁটলে স্থায়ীভাবে দাগ বসে যেতে পারে। তাই না খোটাই ভালো। এ দাগ এমনিতেই চলে যাবে। তবে কারো দাগ অনেক বেশি হলে, তখন এন্টিবাইরাস ক্রিম প্রয়োজন হয়।
এমইউ