ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট স্বর্গীয় আনন্দ দিয়েছে: অধ্যাপক হাবিবুর রহমান

সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট করে প্রসংশায় ভাসছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রক্টর অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল। দীর্ঘ ৩০ বছরের সাধনাকে সফলতায় রূপ দিতে পেরে আনন্দিত তিনি। তাঁর এ সফলতায় দেশের চিকিৎসাখাতে উন্মোচিত হয়েছে নতুন দ্বার। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম এ ধরনের ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পন্ন হয়েছে। ব্যতিক্রম এ চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন স্বপ্নময় অভিজ্ঞতা অর্জনকারী বিএসএমএমইউর এই চিকিৎসক।
ঘটনার শুরু যেভাবে
দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন ২০ বছর বয়সী সারা ইসলাম। পরবর্তীতে তার মৃতদেহ থেকে দুটি কিডনি ও দুটি কর্নিয়া সফলভাবে চারজনের দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তাঁর দু’টি কিডনির একটি মিরপুরের বাসিন্দা ৩৪ বছর বয়সী শামীমা আক্তারের দেহে অন্যটি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে কিডনি ফাউন্ডেশনে অপর এক রোগীর দেহে। শামীমা আক্তারের অস্ত্রোপচারের কাজটি সম্পন্ন হয়েছে বিএসএমএমইউর কিডনি অপারেশন থিয়েটারে। দু’টি কিডনি সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, যার নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল।
মেডিভয়েসের মুখোমুখি হয়ে কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক ও সর্বশেষ ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্টের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছন অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাখাওয়াত আল হোসাইন
মেডিভয়েস: দেশের ইতিহাসে প্রথম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট, ঐতিহাসিক এ অস্ত্রোপচারের সাফল্যে কেমন লাগছে?
অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান: এটা স্বর্গীয় আনন্দ। দীর্ঘ ৩০ বছরের একটা স্বপ্ন ছিল ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট করবো, সেই স্বপ্ন আজ পূরণ হয়েছে। এ সাফল্য আমার একা নয়, এটি ইউরোলজি, নেফ্রোলজি, অ্যানেসথেসিওলজি, আইসিইউ ও ভাইরোলজিসহ সব বিভাগের সাফল্য বলে আমি মনে করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের বিরাট অবদান রয়েছে এ কাজে। আমি এখানে যোগদান করার পর থেকে তিনি এই বিষয়টার উপর গুরুত্বরোপ করেছেন এবং প্রচুর উৎসাহ দিয়েছেন।
মেডিভয়েস: আপনার অভিজ্ঞতার গল্প শুনতে চাই।
অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান: ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট আমার জীবনে একেবারেই নতুন এবং বৈচিত্রময় অভিজ্ঞতা। এটি নিয়ে আমরা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছি। এর আগে তিন-চারটা ক্যাডাভেরিক ডোনার পেয়েও শেষ মুহূর্তে মনোযোগ দেওয়া যায়নি বিধায় আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এবার আমরা বিষয়টা একেবারে নিরব রেখেছিলাম, যাতে কেউ না বুঝতে পারে। গত ১৩ জানুয়ারি রাতে সারা ইসলাম নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি হয়, ১৪ তারিখে আইসিইউ ইউনিটের সহকারী অধ্যাক ডা. সজিব জানায়, স্যার এ রকম একটা ক্যাডাভেরিক ডেথ হতে পারে, আপনারা প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। ইতিমধ্যে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে ফেললাম। খবর জানার পর আমরা যেটা করি, সেটা হলো, আমাদের রিসিপিয়েন্ট একটা পুল আছে। এই পুল রয়েছে- বিএসএমএমইউতে আর কিডনি ফাউন্ডেশনে। এই পুলের পিছনে এবং অপারেশন সফল করতে কিডনি ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ডা. হারুনের বিশাল অবদান রয়েছে।
বিএসএমএমইউর নেফ্রোলজির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল আর অধ্যাপক ডা. হারুনকে বলার পর পুল থেকে আমরা পাঁচজনকে নির্বাচিত করি, নির্বাচিতদের ভর্তি করে ফেলি। রোগীদের টিস্যু মেসিং, এইচএলএ টাইপিং করি। এটা করেছে ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক আফজালুননেসা, এসব কাজে তিনি খুবই দক্ষ। আগে থেকে টিস্যু টাইপিং করা থাকে। ১৮ তারিখ সকালে যখন জানলাম, এটা ক্যাডাভেরিক ডেথ, এরপর রোগীর মাকে বলা হলো। সারার মা আগে থেকে মোটিভেটেড ছিল অঙ্গদানে। পরে আমরা জানতে পারলাম, সারা যখন বুঝতে পারছে, সে বাঁচবে না-তখন তিনি তার বডি ব্যবহার করার জন্য সম্মতি দেন।
তারপর সারার মা তাঁর প্রিয় সন্তানের এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন, এর পর পরই আমরা ক্রস মেসিংয়ে পাঠাই। ফাইনাল কাজ দুইটা রক্তের সাথে ক্রস মেস হবে। প্রথম এসেছে দুইজন রোগীর নেগেটিভ, এরপর আমাদের হাতে তিনজন রোগী থাকলো। দ্রুত সময়ের মধ্যে কিডনি ফাউন্ডেশনের হারুন স্যারকে ফোন দিলাম, বললাম স্যার আপনাদের ক্রস মেসের কী অবস্থা? তিনি বললেন, একটু সময় লাগবে, নয়টার দিকে জানা যাবে। নয়টা এক মিনিটে তিনিও জানালো নেগেটিভ। আমরাও মনে মনে ভাবলাম, আমরা হয়তো আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবো। এরপরই আমরা দুজন রোগীকে সিলেক্ট করে ফেলি।
একটি বিএসএমএমইউতে আরেকটা কিডনি ফাউন্ডেশনে। এর মধ্যে ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে সারার মা সম্মতি ফরমে স্বাক্ষর করেন ক্যাডাভেরিক ডোনেশনের জন্য। ৪৫ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে যায়। আমরা সাড়ে দশটার দিকে অপারেশন শুরু করে সারার দেহ থেকে অপারেশন করে কিডনি দুটো বের করে নিয়ে আসি এবং এই পার্ট-ই হলো আমাদের জন্য একেবারে নতুন।
আমার জীবনে অসংখ্য অপারেশন করেছি, কখনও এরকম ইমোশনাল হইনি-এই অস্ত্রোপচারের সময় যেমন হয়েছি। যখন সারার দেহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছিলাম, তখন আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছিলাম। আর ভাবলাম, আল্লাহ এ রকম একটা বাচ্চা মেয়ে ১৯ বছর দুরারোগ্য ব্যাধিতে কষ্ট করেছে, শেষ বেলাতে এসে এই মেয়েটিই আবার দেহটাও দান করে গেছে। কি পরিমাণ মানবতাবাদী হলে এ রকম সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আর কখনও এমন অপারেশন করা হয়নি। অন্যান্য থিওরোটিক্যাল দক্ষতা সবই আছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, এটা একটা স্বর্গীয় আনন্দ। অপারেশন শেষ করার পর মনে হয়েছে এ রকম অপারেশন হাজার হাজার করেছি আল্লাহ তায়ালা আমাকে এ রকম একটা ক্ষমতা তখন দিয়েছেন।
মেডিভয়েস: এমন স্বপ্নময় মুহূর্তের সাক্ষী হবেন, কখনও কি ভেবেছিলেন?
অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান: সত্যিকার অর্থেই আমি হয়তো ভাগ্যবান এবং আল্লাহ আমাকে এই সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। এটাকে আমি বলবো, স্বর্গীয় ব্যাপার। কোনো কিছু করেছি, এজন্য হয়তো আল্লাহ আমাকে এই প্রতিদান দিয়েছেন। এই সফলতা শুধু আমার একার নয়, পুরো টিমের।
মেডিভয়েস: সারাহ ইসলামের সন্ধান পেলেন কীভাবে? মরণোত্তর অঙ্গদানে জনসাধারণকে কী বার্তা দিতে চান?
অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান: সারা ইসলাম গত কয়েক মাস আগে আমার অধীনে এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। তখন আমরা জানতে পারি, সারা দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। এই রোগের চিকিৎসা নেই। গত ১৩ জানুয়ারি এখানে ভর্তি হওয়ার আগে বাহিরে তার ব্রেইনের টিউমার অপারেশন হয়। আর অপারেশন জটিল হওয়ায় আইসিইউর প্রয়োজন পড়ে, তখন আমাদের এখানে ভর্তি হয় এবং আইসিইউ বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে জানতে পারি ব্রেইন ডেথ হচ্ছে। ওই সময় থেকে আমরা প্রক্রিয়া শুরু করি।
আর জনগণকে বার্তা দিতে চাই, এটা একটা অপারেশন মাত্র। সারা ইসলামের উদাহরণ সৃষ্টির মাধ্যমে আমরা দেশব্যাপী মানুষের মধ্যে জাগরণ দেখতে পেয়েছি। আমাদের মধ্যে যে ট্যাবুগুলো ছিল, সেটা ধ্বংস করে দিয়ে গেছে সারাহ। একটা শুরু করতে পারলে পরেরগুলো সহজ হয়ে যাবে। আমাদের ১৮ কোটি মানুষের দেশে অর্গানের অভাবে হাজার হাজার মানুষ মারা যায়। সারার মতো এরকম মহৎ কাজে সবাই এগিয়ে আসলে, অনেকে ফিরে পাবেন নতুন জীবন।
মেডিভয়েস: অঙ্গ গ্রহণকারী রোগীরা এখন কেমন আছেন?
অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান: কিডনি প্রতিস্থাপন করা দুইজন রোগীই ভালো আছেন। সাধারণত, কিডনি প্রতিস্থাপনের পর প্রস্রাব তৈরি হতে অনেক সময় লাগে। এখন তারা অল্প অল্প প্রস্রাব করছেন, অবস্থা উন্নতির দিকে।
মেডিভয়েস: নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো, এর ফলে কিডনি রোগীরা কতটুকু উপকৃত হবেন?
অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান: ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট হওয়ায় রোগীরা ভীষণভাবে উপকৃত হবেন। প্রতি বছর আমাদের ৩০-৪০ হাজার রোগীর কিডনি স্থায়ীভাবে বিকল হয়ে যায়, অর্থাৎ ট্রান্সপ্লান্ট করার মতো রোগী প্রতিবছর ৩০-৪০ হাজার হয়। এর মধ্যে আমরা মাত্র দুই শতাংশের ট্রান্সপ্লান্ট করতে পারি। বিভিন্ন কারণে বাকিদের পারি না। কারও সামর্থ্যের অভাবে। কখনো ডোনারের অভাবে। লিভিং ডোনার সীমিত। অনেক দেশে ক্যাডাভেরিক ডোনার দিয়ে কিডনির চিকিৎসা চলে, তাদের লিভিং ডোনার লাগে না। সুতরাং বিশাল একটা দ্বার উন্মোচন হলো। আমরা যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে কিডনি যারা কিডনি রোগে মারা যাচ্ছেন বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান, তারা উপকৃত হবেন।
মেডিভয়েস: বাংলাদেশে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্টের সম্ভাবনা ও এর প্রতিবন্ধকতাগুলো কী কী?
অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান: দেশে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্টের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। সারা ইসলাম আমাদের গেট ওপেন করে দিয়েছে। একটা ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট করার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়ে গেলে হবে না, এখন আমাদেরকে কর্মযজ্ঞ আরও বেশি দেখাতে হবে। এটা একটা সামাজিক আন্দোলন, এই আন্দোলনে সব পর্যায়ের মানুষকে শামিল করতে হবে। আমরা আশা করি, এটাকে সফল করতে পারবো।
এ কাজে প্রতিবন্ধকতাও আছে অনেক। আমাদের দেশে ধর্মীয় ও সামাজিক দিক থেকে অনেক ট্যাবু আছে। ধর্মীয়ভাবে অনেকে এটাকে ভুল ব্যাখ্যা করেন। আমাদের যেহেতু ইসলাম প্রধান দেশ, অনেকের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি আছে। সৌদি আরব, ইরানসহ অন্যান্য দেশে সফলভাবে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট করে। ওইসব দেশে ধর্মীয়ভাবে একটা ডিবেট হয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসছে যে, অঙ্গদান করা যাবে।
মেডিভয়েস: অনেক কিডনি রোগীর অভিযোগ, মানুষ দেশে ভালো চিকিৎসা না পেয়ে বিদেশ যাচ্ছেন, এ বক্তব্য কতটা সত্য?
অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান: এই অভিযোগ শুধু কিডনি রোগীদের জন্য নয়, সব রোগের জন্যই আছে। কারণও আছে। আমাদের এখানে সামর্থ আছে সপ্তাহে একটা করি। নতুন সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে সপ্তাহে দুই থেকে চারটা করতে পারবো। স্বাভাবিক আমাদের এই ওয়েটিং লিস্টটা বেশি হয়ে যায়, আর আমাদের এখানে খরচ অনেক কম। মাত্র এক লক্ষ ৭০ হাজার টাকা দুই সপ্তাহের প্যাকেজ। এখানে প্রচুর চাপ। এটা সরকারি হাসপাতাল, অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। মানুষ তুলনা করে ভারত বা প্রাইভেট বেসরকারি সাথে। তখন চাওয়া-পাওয়ার একটা গড়মিল হয়ে যায়। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার সফলতা বিশ্বের সঙ্গে তালমিলানো। অন্যান্য দেশের সফলতার রেট আর আমাদের দেশের সফলতার রেট প্রায় এক। হ্যাঁ, এখানে অব্যবস্থাপনা নেই, তা বলবো না।
মেডিভয়েস: আগামী দিনে যারা কিডনি বিশেষজ্ঞ হতে চান, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ জানতে চাই?
অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান: ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগের দুই দিক আছে। আসতেও কাটে, যাইতেও কাটে। অর্থাৎ এখানে পুরস্কার যেমন আছে, তেমনি সফল না হলে তিরস্কার আছে। অর্থাৎ সফল না হলে একটা খারাপ লাগার ব্যবস্থাও আছে। এখানে আসতে হলে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। টাকা-পয়সার চিন্তার করলে এখানে আসা যাবে না। কারণ, এখানে অনেক কষ্ট আছে। ধৈর্য নিয়ে কাজ করতে হয়, অনেক দক্ষতা লাগে। এটা মাথায় নিয়ে এখানে আসতে হবে।
এটা হলো নতুন একটা দিগন্ত। এখানে কাজ করতে হলে অনেক পরিশ্রম করতে হয় এবং মন থেকে আসতে হবে। এখানে আমি ভালো করতে চাই এই নিয়তে আসা উচিত।
ডা. হাবিবুর রহমানের বর্ণাঢ্য জীবন
চাঁদপুর জেলায় জন্ম নেওয়া এ চিকিৎসক ছাত্রজীবনে ছিলেন অদম্য মেধার অধিকারী। এসএসসি দিয়েছেন নিজ জেলা থেকে আর এইচএসসি দিয়েছেন রাজধানীর স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নটরডেম কলেজ থেকে। মানুষের চিকিৎসাসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করার মহান আকাঙ্খা নিয়ে ১৯৮১ সালে ভর্তি হন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। এরপর ১৯৮৭ সালে এমবিবিএস পাস করে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। পর্যায়ক্রমে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে সার্জারিতে এফসিপিএস করেন তিনি। নিজেকে আরও অনন্যা পর্যায়ে নিয়ে যেতে ইউরোলজিতে এমএস করেন মানবিক এই চিকিৎসক।
সরকারি চাকরি জীবনে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন নামী-দামি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান। এরপর ২০০৭ সালের দিকে নিগৃহীত হয়ে দুঃখ-কষ্ট নিয়ে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যান তিনি। তারপর কিছুকাল রাজধানীর ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অধ্যাপনা করেন। ২০০৯ সালে দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকে নিজেকে দক্ষতাকে কাজে লাগানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। পর্যায়ক্রমে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি বিএসএমএমইউর প্রক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন।
ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্টের প্রথম অঙ্গদাতা সারা ইসলাম ও এ অস্ত্রোপচারের নেতৃত্বদানকারী অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলালের নাম বাংলাদেশের চিকিৎসাক্ষেত্রে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
এএইচ/এমইউ
-
১৯ জানুয়ারী, ২০২৩
-
১৯ জানুয়ারী, ২০২৩
-
১৩ জুন, ২০২২