
ডা. সাদাব সাউদ সানী
মেডিকেল অফিসার (৩৩তম বিসিএস), ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (২০০৫-০৬)
২৪ জানুয়ারী, ২০২৩ ০৭:০০ পিএম
লুপাস কি, লক্ষণ ও চিকিৎসা

লুপাস এক ধরনের ‘অটোইমিউন রোগ’। যখন ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা স্বাভাবিকভাবে কাজ করে, তখন তারা শরীরের জীবাণু এবং ‘খারাপ’ কোষকে মেরে ফেলতে সক্ষম হয়, যা পরবর্তীতে ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে। যখন একজন ব্যক্তির অটোইমিউন রোগ হয়, শুধুমাত্র খারাপ কোষগুলিকে হত্যা করার পরিবর্তে, ইমিউন সিস্টেম সুস্থ কোষলোকে আক্রমণ করতে শুরু করে। একে ‘অটোইমিউন রেসপন্স’ বলা হয়। লুপাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহের কিছু অংশে এটি ঘটতে পারে। এটিই লক্ষণগুলির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
লক্ষণ
লুপাস আক্রান্ত রোগীদের মৃদু ও মারাত্মক দুই ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
মৃদু লক্ষণ
১. ক্লান্ত বা দুর্বল বোধ হবে।
২. জ্বর ও জ্বরজ্বর ভাব হবে।
৩. নাকে এবং গালে প্রজাপতির আকৃতির ফুসকুড়ি সৃষ্টি হতে পারে।
৪. চুল পড়া, মুখের মধ্যে ঘা হতে পারে।
৫. ঠাণ্ডায় হাত বা পায়ের আঙ্গুল ফ্যাকাশে বা নীল রঙের হয়ে যেতে পারে।
৬. মৃদু জয়েন্টে ও গিরায় ব্যথা হতে পারে।
৭. দেহের ওজন হ্রাস বা বেড়ে যেতে পারে।
মারাত্মক লক্ষণ
১. হাত-পা-পেট বা চোখের চারপাশে ফোলাভাব ও পানি আসা।
২. বাদামি (চা-রঙের) বা ফেনাযুক্ত প্রস্রাব হওয়া।
৩. মাথাব্যথা, খিঁচুনি, অস্বাভাবিক আচরণ ও অজ্ঞান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৪. পায়ে বল বা শক্তি না পাওয়া, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে।
৫. বার বার বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়া বা মৃত বাচ্চা প্রসব, তীব্র গিরা ব্যথা বা ফোলা ভাব ইত্যাদি।
যেহেতু এই রোগটি মস্তিষ্কে আক্রমণ করে তাই এটি মোকাবেলা করা কঠিন।
করণীয়
১. নিয়মিত ফল সবজি ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
২. পরিমিত বিশ্রাম নিতে হবে। তবে খুব বেশি বিশ্রাম করলে পেশি দুর্বল হয়ে যায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
৩. যদি কেউ লুপাস আক্রান্ত হন। তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেতে হবে। তবে কিছু ওষুধ রয়েছে, যেগুলো এই রোগের মাত্রাকে আরও বাড়ায়। সুতরাং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করা করা উচিত নয়।
লুপাসের চিকিৎসা
লুপাসের চিকিৎসায় কিছু ওষুধ রয়েছে, যা লুপাসের লক্ষণগুলোকে সহজ করতে পারে এবং অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে পারে। ওষুধগুলো হচ্ছে:
১. ‘হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন’ বা ‘ক্লোরোকুইন’ নামক ওষুধগুলো যা মূলত ম্যালেরিয়ার চিকিৎসার জন্য তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু লুপাসের ক্ষেত্রেও সাহায্য করতে পারে।
২. স্টেরয়েড এবং সম্পর্কিত ওষুধ, যা আংশিকভাবে ইমিউন সিস্টেমকে ‘বন্ধ’ করে এবং লুপাস দ্বারা সৃষ্ট অনেক সমস্যায় সাহায্য করতে পারে স্টেরয়েড অনেক ভালো করতে পারে, কারণ এগুলো রোগ নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু তারা নিজস্ব সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। যেমন: স্টেরয়েডগুলো ওজন বাড়াতে পারে, হাড়কে দুর্বল করতে পারে বা ডায়াবেটিসকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে অর্থাৎ ডায়াবেটিসও হতে পারে। তাই রিউমাটোলজিস্টের পরামর্শ ব্যতিত স্টেরয়েড খাওয়া যাবে না।
মাথার চুলের যত্নে করণীয়
মাথার চুল গজানো নির্ভর করে মাথার ত্বকের উপর। কারণ মাথার ত্বকের যে অংশে দাগ থাকে, সেই অংশগুলোতে চুল গজানোর সম্ভাবনা কম। তবে সঠিক চিকিত্সা পদ্ধতি চুলকে রক্ষা করতে পারে এবং দাগ ছাড়াই চুলগুলোকে আবার বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
চুল সুস্থ রাখতে প্রতিদিনের রুটিনে কিছু পরিবর্তন অনতে হবে। যেমন:
১. বেবি শ্যাম্পুর মতো মৃদু চুলের পণ্য ব্যবহার করতে পারেন।
২. চুলের ক্ষতি করতে পারে, এমন কালার, হেয়ার ড্রাইয়ার বা রাসায়নিক চিকিত্সা ব্যবহার করা এড়িয়ে চলতে হবে।
৩. বিনুনি এবং অন্যান্য চুলের স্টাইল যেন খুব বেশি আঁটসাঁট না হয়, সেদিকে নিশ্চিত থাকতে হবে।
লুপাস আক্রান্তে ওষুধ খাওয়ার কারণ
লুপাস আক্রান্ত হওয়ার পর ভালো হলেও ওষুধ খেতে হবে। এক্ষেত্রে কিছু ওষুধ রয়েছে। যেমন: রিকোনিল, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি আপনার পুনরায় লুপাসকে মাথাচাড়া দিতে বাধা দেয়। তাই রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ভবিষ্যতে এটি যেন মাথাচাড়া না দেয়, সেজন্য নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে।
গর্ভধারণের পূর্বে করণীয়
লুপাস আক্রান্তদের গর্ভাবস্থায় সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। তবে তারা সুস্থ সন্তান ধারণ করতে পারে। সন্তান ধারণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলে, সেক্ষেত্রে কমানোর উপায়ও রয়েছে। এজন্য অন্তত ৬ মাস লুপাসের লক্ষণ না দেখা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
লুপাসের প্রভাব
অনেকের সারাজীবন লুপাস থাকবে। এটি কখনো গুরুতর হতে পারে, আবার হালকা হতেও পারে। তবে এই রোগটির চিকিৎসা সম্পর্কে বাত বিশেষজ্ঞ বা রিউমাটোলজিস্টরা অনেক অভিজ্ঞ।
এআইডি