বিএফ.৭: ঝুঁকি না থাকলেও সচেতনতার বিকল্প নেই

মো. তাওহিদুল ইসলাম: বিশ্বজুড়ে নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের উপধরন বিএফ.৭। গত এক মাসে করোনায় ৬০ হাজার মানুষের প্রাণ হারানো চীনেও উপধরনটি শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও শনাক্ত হয়েছে উপধরনটি। বাংলাদেশেও গত ১ জানুয়ারি চীনফেরত একজনের দেহে করোনার এই উপধরন শনাক্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মারাত্মক সংক্রমণশীল এ ভাইরাস অল্প সময়ে অধিক মানুষকে আক্রান্ত করার ক্ষমতা রাখে।
এমন পরিস্থিতিতে দেশের সব করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালগুলোকে চিকিৎসা সেবা দিতে প্রস্তুত রাখার পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এ ছাড়া বিএফ.৭ প্রতিরোধে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর কারিগরি পরামর্শক কমিটির পক্ষ থেকে ৬ পরামর্শ দিয়েছে।
পরামর্শগুলো হলো, কোভিড ১৯ এর বৈশ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে টেকনিক্যাল কমিটি সব সময় পর্যালোচনা করছে এবং তাদের মতামত ও পরামর্শ সরকারের কাছে তুলে ধরছে, ফ্রন্ট লাইনার, ১৮ বছর ও তদুর্ধ্ব কোমরবিড রোগে (একাধিক রোগে আক্রান্ত) আক্রান্ত এবং ৬০ বছর ঊর্ধ্ব সবাইকে দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ/ ৪র্থ ডোজের টিকার চলমান ক্যাম্পেইনের আওয়াত আনার ব্যাপারে সব প্রকার জনসংযোগ, প্রচার প্রচারণা জোরদার করার ব্যবস্থা করতে হবে, ফাইজার তাদের ৯ মাস মেয়াদি ভ্যাক্সিনের মেয়াদ ১২ মাস এবং ১২ মাস ভ্যাক্সিনের মেয়াদ ১৫ মাস বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন দিয়েছে, যা দেশে বিদ্যমান সব নিয়ম মেনে দেওয়া হচ্ছে বলে কমিটি মনে করে, আশঙ্কাজনক ব্যক্তি এবং কোমরবিড রোগে আক্রান্ত সবাইকে কোভিড ১৯ এর সব স্বাস্থ্যবিধি যেমন মাস্ক পরা, হ্যান্ড স্যানিটাইজ করা ইত্যাদি অবশ্যই মেনে চলতে হবে, পোর্ট অব এন্ট্রিগুলোতে বিশেষ করে চীন, জাপান, কোরিয়া, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত যাত্রীদের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ থাকলে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনতে হবে, দেশের সব কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালগুলোকে কোভিডের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে রেডি রাখতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেরে করোনার গত এক সপ্তাহের তথ্যে দেখা যায়, এ সময় একজনের মৃত্যু হয়েছে ও এই সাত দিনে সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয়েছে ২২ জন।
এ ছাড়া গত ৭ জানুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ইতিমধ্যে সব এয়ারপোর্টে বিদেশীদের গমন ও আগমন উপলক্ষে সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশের মানুষের কোনো প্রভাব পড়বে না, কারণ বাংলাদেশের প্রায় ৯৮ ভাগ মানুষই ভ্যাকসিন নিয়েছেন। তবে বিদেশিদের যাতায়াত বিষয়ে সকল বন্দরকে সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া করোনা সংক্রমণ দেশসমূহে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দিয়েছেন মন্ত্রী।
চীনের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ঝুঁকিতে রয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর মেডিভয়েসকে বলেন, ‘চীনে বেড়ে যাওয়ার কারণ ভিন্ন। তারা কেবল আইসোলেটেড থাকার উপায় অবলম্বন করায় পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কিন্তু এদিক থেকে আমরা নিরাপদ। কারণ আমাদের নাগরিকদের অধিকাংশই টিকা নিয়েছেন। ফলে আমরা অনেকটা ঝুঁকিমুক্ত।’
করোনার চিকিৎসায় নিবেদিত হাসপাতালগুলো সাধারণ ওয়ার্ডে রূপান্তর করা হয়েছে। এ অবস্থায় করোনা বেড়ে গেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কৌশল কেমন হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে। পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হলে দ্রুততম সময়ে এগুলো আবার করোনার চিকিৎসার উপযোগী করা হবে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহকারী অধ্যাপক ডা. শারমিন সুলতানা মেডিভয়েসকে বলেন, ‘বিএফ.৭ এর উপসর্গ করোনার উপসর্গের কাছাকাছি। জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি, গলা ব্যথা এগুলোই বিএফ.৭ এর উপসর্গ। করোনার এই উপধরনের ভয়াবহতা এখনও আমরা দেখতি পাচ্ছি না। কারণ দেশে মাত্র একজন শনাক্ত হয়েছে। বিএফ.৭ থেকে সুস্থ হতে ৫-৭ দিন সময় লাগতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘বিএফ.৭ এর ভয়াবহতা বা মৃত্যুর ঝুঁকি কতটুকু তা এখনও বলা যাচ্ছে না। কারণ মাত্র এই উপধরন আমাদের দেশে আসলো। এটা নিয়ে আরও গবেষণা করতে হবে, তারপর বলতে হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে সহকারী অধ্যাপক ডা. শারমিন সুলতানা বলেন, কয়েক দিন হলো করোনার চতুর্থ ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ওইভাবে বলা যাচ্ছে না যে, চতুর্থ ডোজ বিএফ.৭ এর প্রতিরোধ করবে কি না। এটা পর্যবেক্ষণ করে আরো কিছু দিন গেলে বলা যাবে।
এই চিকিৎসক বলেন, বিএফ.৭ প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই। মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে, যতটা সম্ভব সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যার তথ্য উল্লেখ করে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরীন মেডিভয়েসকে বলেন, অনেক দিন ধরেই মৃত্যু ও আক্রান্তের হার কম, অবস্থাটা বেশ স্বস্তির। এ ছাড়া গত এক সপ্তাহে মৃত্যু মাত্র একজন। আক্রান্তও বেশি না। এতে বোঝাই যায়, এখন পর্যন্ত বিএফ.৭ এ তেমন কোনো ঝুঁকি নেই।
তিনি বলেন, বিএফ.৭ যে একজন আক্রান্ত হয়েছিল তিনি সুস্থ হয়ে বাসা ফিরে গেছেন। নতুন করে দেশে আর কেউ শনাক্ত হয়নি। এছাড়া এখন পর্যন্ত দেশে বিএফ.৭ নিয়ে কোনো ঝুঁকি নেই। তবে সকলকে সচেতন থাকতে হবে।
এমইউ
-
১৭ জানুয়ারী, ২০২৩
-
০১ জানুয়ারী, ২০২৩
-
২৭ ডিসেম্বর, ২০২২