১৩ জানুয়ারী, ২০২৩ ১১:৪০ এএম

আসছে নতুন আইন, ভেজাল ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ হবে কী?

আসছে নতুন আইন, ভেজাল ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ হবে কী?
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী মেডিভয়েসকে বলেন, আইনটি কতটুকু কার্যকর হবে, তা নির্ভর করে যারা বাস্তবায়ন করবেন, তাদের উপর। মনে রাখতে হবে জেল আর জরিমানা দিয়ে ফয়সালা হয় না। প্রয়োজন সচেতনতা।

সাখাওয়াত হোসাইন: ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধ ও অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে ওষুধ আইন-২০২২ প্রণয়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আইনটি এবারের সংসদীয় অধিদবেশনে পাস হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনটি পাস হলে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার কমার পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির ক্ষেত্রে ফার্মেসিগুলোর জন্য একটি বাধ্যবাধকতা তৈরি হবে। সেইসঙ্গে নকল ওষুধ তৈরি করা প্রতিষ্ঠানকে সহজেই আইনের আওতায় আনা যাবে।

নতুন আইন নিয়ে জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ডা. মোহাম্মদ ইউসুফ মেডিভয়েসকে বলেন, ‘এই আইনের মধ্যে ভেজাল ওষুধ বিক্রি বন্ধে কঠোর নির্দেশনা থাকবে। অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রিতে বিধিবদ্ধ নিয়ম থাকবে। নতুন আইনে ওষুধ বিক্রিতে কোনো প্রভাব পড়বে না। আমাদের সক্ষমতা বাড়বে, ফলে ভেজাল ওষুধ বন্ধে শক্ত নিয়ন্ত্রণ কায়েম হবে। প্রতিরোধ করা যাবে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার।

তিনি বলেন, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করলে জরিমানার বিধান রয়েছে আইনের খসড়ায়। প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।

প্রয়োজন সচেতনতা

এই আইনের সার্বিক দিক নিয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ মেডিভয়েসকে বলেন, শুধু আইন দিয়ে সব কিছু করা যায় না। দেশে অনেক আইন রয়েছে, আবার আইনের ব্যত্যয়ও হচ্ছে। মানুষের মধ্যে সবচেয়ে জরুরি হলো সচেতনতা। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার সম্বন্ধে ওষুধ দোকানদার ও জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। আমাদের সক্ষমতাও বৃদ্ধি করতে হবে। লোকজনকে সংক্রমণে তো ধরলে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। এ ছাড়া যথার্থ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে ইউরিন কালচারও (ডোজের পূর্ণ প্রয়োগ) দরকার। সেই সক্ষমতা আমাদের খুব বেশি নেই, গুটিকয়েক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে। জেলা সদর হাসপাতালগুলো তেমন নেই, উপজেলায় একেবারেই নেই।

তিনি আরও বলেন, জেলা পর্যায়ে সার্জন থেকে শুরু করে নানা ধরনের বিশেষজ্ঞ পাওয়া যায়। তাদেরকে প্রতিদিন প্রায় সব রোগীর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক লিখতে হয়। উপজেলায়ও ঠিক তাই। সংক্রমণ হলে অ্যান্টিবায়োটিক থাকেই। সরকারি চিকিৎসকরা যখন সুযোগ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক লিখছেন, তাহলে কীভাবে আশা করা যায়, সাধারণ মানুষ প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাবে না। এখানে আমাদের বড় একটা গ্যাপ রয়ে গেছে, এটা পূরণ করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী মেডিভয়েসকে বলেন, আইনটি কতটুকু কার্যকর হবে, তা নির্ভর করে যারা বাস্তবায়ন করবেন, তাদের উপর। মনে রাখতে হবে জেল আর জরিমানা দিয়ে ফয়সালা হয় না। প্রয়োজন সচেতনতা। কোনটা ঠিক আর কোন বেঠিক এসব বিষয় নিয়ে মানুষের মাঝে ব্যাপক সচেতনতা দরকার। 

যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন

ডা. বেনজীর বলেন, অবাধে ভেজাল ওষুধ তৈরি ও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বন্ধে আইন সহায়ক হবে, তবে যথেষ্ট নয়। যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। বাংলাদেশে ভেজাল ওষুধ যে কত শতাংশ আমরা তাও জানি না। আমরা শুনেছি, একটি কোম্পানি তিন বছর যাবৎ ময়দা ইত্যাদি দিয়ে ওষুধ তৈরি করে যাচ্ছে। ভেজাল ওষুধ তৈরি করা মারাত্মক অপরাধ। যেখানে ওষুধ দীর্ঘদিন যাবৎ ভেজাল ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে, শুধু আইন দিয়ে এগুলো বন্ধ করা যাবে না। পাশাপাশি যথাযথ প্রয়োগও লাগবে। এজন্য যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ ও সক্ষমতা তৈরি করে দিতে হবে। সেই সঙ্গে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিএমএ মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে অনেক কিছুরই আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ কতটুকু হবে এটাই দেখার বিষয়। ভেজাল ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক বন্ধে কোনো আইন ছিল না, নতুন আইন হচ্ছে। এটাকে আমরা স্বাগত জানাই। আইন পাস হওয়ার সাথে সাথে আইনের বাস্তবায়ন হলে ভালো হবে। আমরা এখনও ওষুধ আইন দেখিনি, দেখার পর বলা যাবে কেমন হবে?

আইনে রোগীদের স্বার্থও রাখতে হবে

বিএমএ মহাসচিব বলেন, ওষুধ কোম্পানির ওষুধের বিষয়ে অনেক দিকনির্দেশনা দেওয়া আছে। সবগুলো ভালো। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যেসব ওষুধ বিতরণ করা হয়। সেখানেও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দরকার। যেমন ধরেন- একজন রোগীকে চিকিৎসক সাত বা দশ দিনের অ্যান্টিবায়োটিক লিখে দিলেন। আর কোনো সরকারি হাসপাতালে সাত বা দশ দিনের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় না, দেওয়া হয় তিন দিনের। বলা হয় তিন পর এসে চার দিনের নিবেন। ৯০ শতাংশ রোগী পরে চার দিনের ওষুধ নিতে আসে না। দুটি কারণে আসেন না। এক. তিন দিন অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পর রোগীর বেশির ভাগ সমস্যা সমাধান হয়ে যায়; তখন তিনি ভাবেন, আমার রোগ সেরে গেছে। দুই. গ্রামের সাধারণ মানুষ আবার গাড়ি ভাড়া দিয়ে হাসপাতালে এসে চার দিনের ওষুধ নিয়ে যাবেন, এতে তার পোষায় না। ভাবেন, একবার আমি কোনো রকমে পয়সা জোগাড় করে হাসপাতালে গেছি, আবার যাবো? বিতরণে এসব সমস্যার কারণে অনেক অ্যান্টিবায়োটিক রেজিট্যান্স হচ্ছে। সেই সাথে রোগীরা যথাযথ সেবাও পাচ্ছে না। সুতরাং ওষুধ আইনে এসব বিষয়গুলো রাখতে হবে।

পেশাজীবী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার দাবি

তিনি আরও বলেন, কোন কোন পদ্ধতিতে গ্রাম এবং শহরের ফার্মেসির ওষুধ দেওয়া হবে, আইনে তা ঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোন কোন ওষুধ দেওয়া যাবে না, বিস্তারিত উল্লেখ থাকতে হবে। খণ্ডিতভাবে নির্দেশনা থাকলে বেশি লাভ হবে না, তবে তা মন্দের ভালো। একটা আইন থাকা খুবই দরকার। ভুলত্রুটি থাকলে পরে সংশোধন করা যাবে। আইনটি করার আগে চিকিৎসক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করলে ভালো হতো।

এমইউ

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
করোনা ও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা

এক দিনে চিরবিদায় পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক