কে হচ্ছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক
আলোচিত তিনজনের কেউ, নাকি নতুন মুখ

মেডিভয়েস রিপোর্ট: স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলমের মেয়াদকাল শেষ হচ্ছে আগামীকাল শনিবার (৩১ ডিসেম্বর)। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় বৃহস্পতিবার ছিল তাঁর শেষ কর্ম দিবস। নতুন মহাপরিচালক নিয়ে স্বাস্থ্য খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে পূর্ব থেকে বিভিন্ন গুঞ্জন থাকলেও গতকাল থেকে এ আলোচনা নানা ডালপালা মেলেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা মেডিভয়েসকে জানান, সরকারের মেয়াদের শেষ বছর হওয়ায় কাজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলমের মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে। এ নিয়ে অধিদপ্তরে রয়েছে জোরালো গুঞ্জন।
তিনি আরও বলেন, ‘দুই এডিজি অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর ও অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরাসহ আরও অনেকের নাম আলোচনায় থাকলেও পরবর্তী মহাপরিচালক কে হবেন—এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা কঠিন। কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজে নিয়োগ দিবেন। স্বাস্থ্য যেহেতু একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, সেহেতু তিনি কাকে যোগ্য বিবেচনা করেন, তা অনুমান করা দুরুহ। সময়টা সরকারের মেয়াদের শেষ বছর হওয়ায় কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষার একটি ব্যাপার থাকে। আছে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের বিষয়ও। ফলে এই মুহূর্তে অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলমকে সরিয়ে নতুন কাউকে আনা হবে কিনা, তা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় হয়ে যেতে পারে।’
এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দুর্নীতি একটি পুরনো ব্যাধি মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখানে দুর্নীতির বিষয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয় কে কতটুকু সামাল দিতে পারবেন, সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয়েই কাউকে এ পদে বসতে হবে। এমন প্রশ্নে অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম বড় যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন।
তিনি করোনার সংকটময় মুহূর্ত দৃঢ়তার সঙ্গে পার করেছেন। অনেক ঝড় সামাল দিয়েছেন। এসব বিবেচনায় তাঁর মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে।
তবে এতে অপেক্ষমাণ অনুজ ত্যাগী কর্মকর্তারা বঞ্চিত ও নিরুৎসাহিত হবেন। পদায়িত হওয়ার মতো অনেক যোগ্য কর্মকর্তা রয়েছেন, যাদের লক্ষ্য এই মর্যাদাপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা, স্বাস্থ্যে অবদান রাখা।
এ কারণে অনেকে মেয়াদ বাড়ানোর বিরোধিতা করছেন। নতুন নেতৃত্ব তুলে আনার প্রশ্নে এই আপত্তি ফেলে দেওয়ার মতো না।
অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলমের শেষ কর্ম দিবসে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা দেশে ফিরেছেন। ফলে নতুন মহাপরিচালক হওয়ার জোর আলোচনায় আছেন তিনিও।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক এই পরিচালক দক্ষতার সঙ্গেই অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে কাজ করে গেছেন। এ ছাড়া অসুস্থতা তাকে সাময়িকভাবে দমিয়ে দিলেও মহামারীর সময় সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিদিন তথ্য উপস্থাপনে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তিনি।
সুস্থ হয়ে ফিরলে অন্যতম দাবিদার হয়ে উঠবেন দুই অতিরিক্ত মহাপরিচালকের মধ্যে জ্যেষ্ঠ এ কর্মকর্তা। তবে সরকারি নিয়মের ১৮ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতাসহ আরও কিছু অভিজ্ঞতা না থাকায় অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হওয়ার সময় স্বাস্থ্য বিভাগে ব্যাপক সমালোচনা হয়। ২০২০ সালের ২০ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব গ্রহণের সময় তাই স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এ ছাড়াও তিনি নন-ক্যাডার কর্মকর্তা হয়ে এ দায়িত্ব পাওয়াতে সংক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা। এ নিয়ে তখন জাতীয় গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।
এ সমস্যাটি তাঁর মহাপরিচালক হওয়ার পথে বাধা হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন কেউ কেউ।
সূত্রে জানা গেছে, এ ছাড়া অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর গতিশীল নেতৃত্বের অধিকারী। সততার প্রশ্নেও উত্তীর্ণ তিনি। নিবন্ধনহীন বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধে তাঁর তৎপরতা অভাবনীয় সাফল্যই পেয়েছে। করোনার সময় চিকিৎসা প্রদানে তিনি অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন এবং করোনার পরবর্তী সময়ে সংস্কার কাজে তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা কুড়িয়েছে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রশংসা। এসব বিবেচনায় তিনিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচাল হওয়ার অন্যতম দাবিদার।
তবে এ পথে তাঁর বয়স বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে অভিমত সূত্রটির। কারণ অধিদপ্তরে তাঁর চেয়ে জ্যেষ্ঠ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা দায়িত্বরত আছেন।
স্বাস্থ্য সেবার মহাপরিচালক হওয়ার আলোচনায় ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ ডা. মো. টিটো মিঞা। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) তিনি স্বাস্থ্য শিক্ষার মহাপরিচালক নিয়োগ পাওয়ায় এর সমাপ্তি ঘটেছে।
বর্তমান মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম দায়িত্ব পাওয়ার প্রাক্কালে নানা আন্দাজ-অনুমান করা হচ্ছিল। তবে সবার ধারণার বাইরে দায়িত্ব পান তিনি। সুতরাং সবাইকে অবাক করে এবারও নতুন নাম চলে আসলে অস্বাভাবিক কিছু হবে না।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে ৩৫৩টি অধিদপ্তর আছে। তবে কোনো অধিদপ্তরই এতটা আলোচিত হয়নি, যতটা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। করোনা মহামারীর পর থেকে এর পরিধি আরও বেড়েছে। ফলে স্বাস্থ্যের মহাপরিচালকের পদও রয়েছে সরকারের গুরুত্বের কেন্দ্রে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক কিছু বিবেচনায় নিয়েই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন বলে মনে করেন তারা।