
ডা. শাহজাদা সেলিম
সহযোগী অধ্যাপক,
এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
২৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৪:২৫ পিএম
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের কৌশল ও আধুনিক চিকিৎসা

বাংলাদেশে ১০০ জনের মধ্যে ৬৮ জন রোগীই ভাবেন ডায়াবেটিস নেই। অধিকাংশ রোগী চিকিৎসা করে ডায়াবেটিস নিয়েন্ত্রণে ব্যর্থ। এ জন্য সকলকেই আদর্শ পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করে নিতে হবে। একই সাথে খাদ্যাভ্যাস ও জীবন-যাপনে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ডায়াবেটিসের আধুনিক চিকিৎসা
বর্তমানে ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় আধুনিক ইনসুলিন যুক্ত হয়েছে। মূলত ইনসুলিনের পরিবর্তন হয়েছে দুইভাবে। এক, বিশেষ কিছু লক্ষ্য নিয়ে ইনসুলিনের মলিকুলার পরিবর্তন করা হচ্ছে। আর দ্বিতীয়ত ইনসুলিন যেভাবে দেওয়া হচ্ছে। যেমন- এক সময় প্লাস্টিক গ্লাস সিরিঞ্জ ছিল। তারপর আসছে প্লাস্টিকের খুব চিকন সিরিঞ্জ ও ইনসুলিন পেন। এই পেন ব্যবহারে কোনোভাবেই রোগী ব্যথা পাবে না। এ ছাড়া ইনসুলিন পাম্প ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এর ব্যবহার কম হলেও অন্যান্য দেশে এই পাম্পকে আকর্ষণীয়ভাবে স্বীকৃত দেওয়া হয়েছে। ইনসুলিন পাম্পে ইঞ্জেকশনের ফুটো করার ভয় নেই। এর থেকেও বড় বিষয়- এই পাম্প একই সাথে সারাদিনের খাবার খাওয়ার পরে রক্তে যে গ্লুকোজ বেড়ে যায়, তারও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
কখন ইনসুলিন নিতে হয়?
বিশ্বে ডায়াবেটিসের যতগুলো গাইডলাইন আছে, তাতে সুনির্দিষ্ট সময় বলে দেওয়া আছে। যেমন- ডায়াবেটিসের তিন মাসের গড় এইচবিএওয়ানসি ১০ শতাংশের বেশি হলে নতুন রোগীরও শুরু থেকেই ইনসুলিন নিতে হবে। কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায়, ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। আবার কেউ কেউ মুখে খাবার ওষুধ দিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। তিন মাসের বেশি সময় তিন রকমের ট্যাবলেট খেয়েও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে এবং ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণের মাত্রা (এইচবিএওয়ানসি) যদি সাত দশমিক পাঁচ শতাংশের উপরে থাকে, এমন রোগীর ইনসুলিন ছাড়া চিকিৎসায় সাফল্য আসবে না। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ধরা পড়লে ইনসুলিনই একমাত্র ভরসা। রোগী যত খারাপ থাকবে তত বেশি ইনসুলিনের প্রয়োজন হবে।
ইনসুলিনের সূচনা হলে সারাজীবন নিতে হবে?
এইচবিএওয়ানসি ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশের নিচে রাখতে পারলে ভালো। কিন্তু সাত শতাংশের নিচে রাখতেই হবে। ইনসুলিনে লক্ষ্যে পৌঁছানোর পর সামান্য পরিমাণ ইনসুলিন লাগলে আশা করা যায়, এই রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আর যেসব রোগী অনেক দিন ধরে ট্যাবলেট খেয়েও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন এবং পরে ইনসুলিন নেওয়া শুরু করেছেন, তাদের ইনসুলিন বন্ধ করার সুযোগ নেই। কিন্তু কোনো রোগীর আজ সাড়ে ১০ শতাংশ এইচবিএওয়ানসি এবং আজই ইনসুলিন নিলেন, এমন রোগীর ক্ষেত্রে কিছু দিন পর ইনসুলিন নেওয়া বন্ধ করে দেওয়ার সুযোগ আছে। আর ইনসুলিন দিয়ে যদি চিকিৎসা করতেই হয়, তখন এর বিকল্প নেই।
ডায়াবেটিসের সর্বশেষ চিকিৎসা
দেহে ইনসুলিন কম উৎপন্ন হয় বলেই মূলত মানুষের ডায়াবেটিস হয়। তাই ইনসুলিনই এই রোগ থেকে বাঁচার সহজ উপায়। এটাকে খারাপভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। ইনসুলিনে ঘাটতি থাকলে ইনসুলিন নিতে হবে। কোনো মানুষের ডায়াবেটিস হলে ইনসুলিনই হলো সর্বোত্তম চিকিৎসা।
ইনসুলিন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা
ইনসুলিন নিয়ে মানুষের আলোচনা-সমালোচনার অন্যতম কারণ ইঞ্জেকশন। বাংলাদেশের যত রোগী ইনসুলিন নেন, তাদের ১০ শতাংশেরও কম মানুষ ইনসুলিন দিয়ে ব্যথা পান। তবে এই ব্যথা পান ভুল কৌশলে প্রয়োগের জন্য। অনেকেই ভাবেন, ইনসুলিন সব সময় ফ্রিজে রাখতে হবে, কিন্তু না। কখনই ফ্রিজে রাখার দরকার নেই। বর্তমানে বাজারে যেসব ইনসুলিন পাওয়া যায়, তা কলমের মতো। তাই কলম তো ফ্রিজে রাখার জিনিস না। আর কেউ যদি ইনসুলিন ফ্রিজে রেখে দিতে চান, তাহলে ইনসুলিন ফ্রিজ থেকে বের করে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আসার পরে দিতে হবে। কিন্তু শীতের সময় স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আসতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগবে। গরমে হয়ত ৩০ মিনিট বা এক ঘণ্টা সময় লাগে। যেহেতু ফ্রিজ থেকে বের করে ইনসুলিন দিতে সময় লাগে, তাই ফ্রিজে রাখার প্রয়োজন নেই। আর ঠাণ্ডা ইনসুলিন দিলেই ব্যথা লাগে। ইনসুলিন দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি সুক্ষ্ম সুই সর্বোচ্চ তিনবার ব্যবহার করা যাবে। তবে একবার ব্যবহার করাই সব চেয়ে ভালো। তিনবারের বেশি ব্যবহার করলেই ব্যথা লাগবে। কারণ তিন/চারবার ইনসুলিন নেওয়ার পর ধার থাকে না। বর্তমানে সুইটা এতো ছোট যে চামড়া ধরে ইঞ্জেকশন দেওয়ার দরকার হয় না, সরাসরি দিতে হয়। কেউ চামড়া শক্ত করে ধরে ইনসুলিনের সুই দিতে গেলেই ব্যথা হবে।
অন্যদিকে ট্যাবেলেটের চেয়ে ইনসুলিনের দাম বেশি, আর ইনসুলিনের ডোজ সামঞ্জস্য করতে হবে। এ ছাড়া রোগীরা ডায়াবেটিসের শুরুতে ইনসুলিন নিতে চান না, একবারে শেষ পর্যায় এসে বাধ্য হয়ে নেন। এতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। তখন মানুষ ইনসুলিন নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা করেন।
ডায়াবেটিসের অর্ধেকই রোগীর কিডনিই আক্রান্ত
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১০০ জন ডায়াবেটিস রোগীর ৬২ জন মনে করে তারা রোগীই না। তাহলে চিকিৎসা হবে কীভাবে? আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও যারা নিজেদের রোগী মনে করেন না, তাদের আগে চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। আমার নিজের গবেষণায় দেখা গেছে, ৮০ দশমিক আট শতাংশ রোগীই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। আরও এক গবেষণায় দেখা গেছে, এ ব্যর্থতার হার ৮৫ শতাংশ। যারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে বা ডায়াবেটিস থাকা সত্তেও চিকিৎসা নেয়নি তাদের জটিলতা থেকে রক্ষা করার কোনো উপায় নেই। রোগীদের শুরু থেকেই সচেতন হতে হবে। ডায়াবেটিস হলে বছরে একবার ঝুঁকিপূর্ণ অঙ্গগুলো (কিডনি, চোখ, কান, নাক, হৃদপিণ্ড, লিভার) পরীক্ষা করতে হবে। এসব অঙ্গ আক্রান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা দিলে পরীক্ষা করে চিকিৎসা নিতে হবে। এরপর ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। ডায়াবেটিসের যেকোনো জটিলতা শুরু হওয়া মানেই স্বাস্থ্য অবনতির দিকে যাওয়া। সুতরাং জটিলতা শুরু হওয়ার আগে বন্ধ করতে পারাই ভালো। আর জটিলতা শুরু হলে চিকিৎসা পদ্ধতি হলো খারাপ অবস্থা ঠেকানোর চেষ্ট করা, তবে কখনোই পারা যায় না, শুধু অবনতির দিকে ধাবিত হওয়ার সময়টাকে বাড়ানো যায়।
এক গবেষণায় দেখা দেছে, প্রায় ৮০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগী হৃদরোগ অথবা স্ট্রোকে মারা যাচ্ছে। বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৫০ শতাংশের অধিক মানুষ হার্ট অ্যাটাকের মারা যায়। এসব দিক বিচেনায় এটা সহজেই অনুমেয় যে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে কিডনি, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের রোগী কমে যাবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কোনো কিছুই নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।
পরিবারে ইতিহাস থাকলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে সন্তান
বাবার ডায়াবেটিস থাকলে ৩২-৩৩ শতাংশ ছেলে-মেয়ের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। শুধু মায়ের থাকলে ছেলে-মেয়ের আক্রান্ত আশঙ্কা ৩৭ শতাংশ। আর বাবা-মা উভয়ের ডায়াবেটিস থাকলে ছেলে-মেয়ের ৭৫-৮০ শতাংশ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক শ্রমবিহীন জীবন-যাপনেও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে।
প্যাঙ্কেটিকস ট্রান্সপ্লান্টের আপডেট
ইনসুলিন প্যানক্রিয়াস বিটা সেল থেকে তৈরি হয়। টাইপ-১ ডায়াবেটিসে দ্রুত ইনসুলিন শূন্য হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে প্যানক্রিয়াস দিয়ে উপকার হয়। এটা কিছু কিছু দেশে করাও হচ্ছে। কিন্তু বেশি ব্যবহৃত হয় না। কারণ অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে টাইপ-১ ডায়াবেটিসের রোগী কম। কিন্তু এটা খুবই ব্যয়বহুল। টাইপ-২ ডায়াবেটিসে প্যানক্রিয়াস দরকার হয় না। টাইপ-২তে কিছু ইনসুলিন তৈরি হয়। কিন্তু টাইপ-২ এর রোগীদের এক পর্যায়ে ইনসুলিন শূন্য হয়ে যায়। আরও কিছু থেরাপি আছে। এখানে চাইলে স্টেম সেল থেরাপিও দেওয়া যায়। এটি এখনও সর্বজন স্বীকৃত নয়, সে জন্য আমরা পিছিয়ে আছি। কিন্তু অনেক দেশে এটি হচ্ছে।
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষতস্থান শুকাতে সময় লাগে
এ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীর পা বিশাল ঝুঁকিপূর্ণ। এতে রোগীর একটি পা কেটে ফেললে অন্য পা পাঁচ বছরের মধ্যে ১০০ ভাগ কেটে ফেলতে হবে। আর দুইটা পা কেটে ফেললে বেঁচে থাকার সম্ভবনা মাত্র চার বছর। সুতরাং পা কেটে ফেলা মানে আয়ু কেটে ফেলা। কিন্ত আমরা এটাকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছি না। তাই বছরে প্রতি রোগীকে পরীক্ষা করে দেখতে হবে, ঝুকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করতে হবে। এর একটা লম্বা শিট আছে। যার ঝুঁকি সবচেয়ে কম তাকে বছরে একবার পরীক্ষা করে দেখতে হবে। ঝুঁকি মাঝামাঝি পর্যায়ে হলে তিন থেকে ছয় মাসে একবার পরীক্ষা করতে হবে। ঝুঁকি বেশি হলে এক থেকে তিন মাসে রোগীকে পরীক্ষা করতে হবে। একই সাথে ডায়াবেটিসের সকল রোগের চিকিৎসা প্রধান কাজ জীবন-যাবনে উন্নতি করা ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা। তবে ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশ হলে সবচেয়ে ভালো। মনে রাখতে হবে, সাত শতাংশের উপরে যেন কোনোভাবেই না যায়। বাংলাদেশে বাড়তি কিছু ঝুঁকি আছে। এখনও দেশে অনেক মানুষ খালি পায়ে হাঁটে। এতে পায়ের অনুভূতি কমে যায়। ছোট খাটো আঘাত লাগলে নজরে আসে না। যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই, তাদের পায়ে এই ছোট আঘাতের ক্ষতস্থান শুকাতে সময় নিবে এবং এর মধ্যে জীবানু আক্রমণ করবে। এই ছোট আঘাত এক সময় পা কেটে ফেলার কারণ হতে পারে। আর কেউ কেউ এমন জুতা পরেন, তাতে জুতার কোথাও না কোথাও পায়ে চাপ লাগে। একবার জুতা পরে টানা ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা থাকে, হাঁটাহাঁটি করে এবং ওই সামান্য চাপে পায়ে একটা জায়গা তৈরি হয়ে আস্তে আস্তে শক্ত হয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং এর নিচে জীবানু জমতে থাকে। এটিও পা কেটে ফেলার কারণ হয়। এ ছাড়া নক একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। নক নেইলকাটার দিয়ে কাটতে হবে, ব্লেড দিয়ে কাটা যাবে না এবং গোল হতে পারবে না, সমান হতে হবে। ব্লেড দিয়ে নক কাটতে গিয়ে কেটে গেলে ক্ষতস্থান শুকাবে না। এই সামান্য সমস্যা থেকে বড় সমস্যা হয়ে যেতে পারে। যারা নামাজ পড়েন, তাদের বিশেষ করে ডান পায়ে কালো দাগ হয়। কালো হওয়া মানে ওই স্থানটা মরে গেছে। মরে যাওয়া এবং সুস্থ জায়গার মাঝখানে জীবানু বসবাসের স্থান তৈরি হয়। এসব স্থান পরিচর্যা করতে হবে। আর যাদের পায়ে জন্মগতভাবে বা জন্মের পরে আঘাত পেয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছিল, তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। পায়ের আরও বেশি পরিচর্যা করতে হবে। বাংলাদেশের ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ের চিকিৎসা হচ্ছে। যদিও তা পরিপূর্ণভাবে না। কিন্তু পায়ের সমস্যা একেবারে বেশি খারাপ হলে এবং চিকিৎসায় দেরি হলে পা কেটে ফেলার ঝুঁকি তৈরি হবে।
কখন হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়, লক্ষণ কি কি
ডায়াবেটিস রোগীদের শুরু থেকেই এটা বোঝানোর চেষ্টা করেন চিকিৎসকরা। আর লক্ষণগুলো হলো, গ্লুকোজের যত কমতে থাকবে ক্ষুধা তত বাড়তে থাকবে, ক্ষুধা লাগা অবস্থায় সময় যত বাড়বে খারাপ লাগাও তত বাড়বে। এরপর খাদ্য গ্রহণ না করলে একটু একটু ঘাম হবে এবং চোখে ঝাপসা দেখতে থাকবে, তারপরেও খাবার না খেলে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন এবং দ্রুত চিকিৎসায় ব্যর্থ হলে রোগী মারা যেতে পারেন। হঠাৎ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের তীব্র ক্ষুধা লাগছে এবং গ্লুকোজ মাপতে পারছেন না, এ সময় কিছু মিষ্টি জাতীয় খাবার খেয়ে নিতে হবে। কোনোভাবেই ঝুঁকি নেওয়া যাবে না।
হাইপারগ্লাইসিমিয়া-হাইপোগ্লাইসিমিয়ার মধ্যে পার্থক্য
হাইপারগ্লাইসিমিয়া হয়ে তাৎক্ষণিক মৃত্যুর কোনো আশঙ্কা নেই। আর হাইপোগ্লাইসিমিয়া হয়ে যখন-তখন মৃত্যুর ঝুঁকি আছে। এ হিসেবে হাইপোগ্লাইসিমিয়া বেশি মারাত্মক।
ডায়াবেটিস কি নিরাময়যোগ্য?
গবেষণা বলছে, ডায়াবেটিস নিরাময় করা সম্ভব। তবে বাংলাদেশে সম্ভব কি না জানি না। কারণ দেশের মানুষ অনেক শর্করা খায়। খাদ্যাভ্যাস আমূল পরিবর্তন করতে হবে।
ডায়াবেটিস নিয়েন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য দায়ী খাদ্যাভ্যাস বা জীবন-যাপনে অসতর্কতা। এ রোগে শিশু-কিশোররা চরম ঝুঁকিতে আছে। তাদের দৈহিক স্থুলতা কমাতে হবে। শিশু-কিশোরদের দুরন্ত জীবন-যাপনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এতে ১০-২০ বছর পরে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা কমে আসবে বলে জানান বিশেজ্ঞরা।
এন্ডোক্রাইন সোসাইটির পদক্ষেপ
বাংলাদেশে কম পক্ষে ডায়াবেটিসের দুই কোটি রোগী আছে। দেশে মাত্র ৩০০ জন এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট তাদের সেবা দিচ্ছেন। ডায়াবেটিস এক-দুইদিন অথবা এক মাসের সমস্যা না। এটা প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহ বা সারা বছরের সমস্যা। এ সমস্যা প্রতিটি পরিবারের, রাষ্ট্রের সব অঙ্গের। এখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশাল কর্মকাণ্ড প্রয়োজন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে ডায়াবেটিস নিয়ে, কাজের পরিধি সম্পর্কে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে আমাদের সোসাইটি। কিছু কিছু কাজ শুরুও হয়েছে। যেমন, বাংলাদেশ সরকার প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনসিডি কর্নার করেছে, তার একটি অংশ হবে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা। গত ৫ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে 'গ্লোবাল অ্যাম্বাসেডর ফর ডায়াবেটিস' ঘোষণা করেছে। এর কারণ দেশে যত টাইপ-১ ডায়াবেটিস রোগী আছে, তাদেরকে সরকার বিনামূল্যে ইনসুলিন দিচ্ছে। পৃথিবীর অন্য কোথাও এটা দিচ্ছে না। টাইপ-১ ডায়াবেটিসের আক্রান্ত রোগীরা যে যার স্থানে বসেই এই ইনসুলিন পেয়ে যাবেন। এদের হাসপাতালে এসে নিতে হবে না। এসব রোগী তালিকাভুক্ত থাকবে এবং নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ইনসুলিন সংগ্রহ করবেন। চিকিৎসকরা ইনসুলিনের ডোজ লিখে দিবেন, আর সে অনুযায়ী রোগীরা পাবেনন। ডায়াবেটিসের সাথে যুদ্ধ করে কেউ পারবে না। এটি নিয়ন্ত্রণের উপায় হলো প্রতিরোধ।
এন্ডোক্রাইন সোসাইটির ডায়াবেটিসের গাইড লাইন আছে। এখানে চিকিৎসা পদ্ধতি, প্রতিরোধ পদ্ধতি ঠিক করে দিয়েছি। ডায়াবেটিস নিয়ে রোজা রাখলে তার জন্য আলাদা গাইড লাইন আছে। এখন সোসাইটি ডায়াবেটিস প্রতিরোধের গাইড লাইন করছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থায় ডায়াবেটিস সম্পর্কে অন্তর্ভুক্ত করা। কারণ বাংলাদেশে টাইপ-২ ডায়াবেটিস খুব অল্প বয়সে হচ্ছে। এরা স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আমরা বারবার বলে আসছি, একবার ডায়াবেটিস হলে জটিলতাও হবে। এই রোগ ঠেকানো যাবে না, কিন্তু জটিলতাকে মোকাবেলা করা যাবে অর্থাৎ জটিলতা এখন দেখা না দিয়ে ২০ বছর পরে দেখা দিবে। সচেতনতায় এমন পরিস্থিতি তৈরি করা যাবে।
-
০৫ এপ্রিল, ২০২৩
-
০২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
-
২৫ ডিসেম্বর, ২০২২
-
২০ নভেম্বর, ২০২২
-
১৪ নভেম্বর, ২০২২
-
১৩ নভেম্বর, ২০২২
-
১৩ নভেম্বর, ২০২২
-
৩১ অক্টোবর, ২০২২
-
১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২