১১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৩:২৯ পিএম

প্যাথলজি-মাইক্রোবায়োলজি ভালো হলে রেসিডেন্সিতে চান্স পাওয়া সহজ

প্যাথলজি-মাইক্রোবায়োলজি ভালো হলে রেসিডেন্সিতে চান্স পাওয়া সহজ
পরীক্ষার হলে সময় যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পূর্ব প্রস্তুতি থাকতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় ওয়েমার পেপারে পরীক্ষা দিতে হবে। এভাবে নিজেকে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। ৯০ মিনিটে ১০০টা প্রশ্ন দাগানোর প্রাক্টিস করতে হবে।

গত ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ও অধিভুক্ত ইনস্টিটিউটগুলোর এমডি-এমএস ভর্তি পরীক্ষা। এক হাজার ৪১৪ আসনের বিপরীতে অংশ নেন নয় হাজার ১৭৪ জন।

পরীক্ষায় অর্থোপেডিক সার্জারিতে দ্বিতীয় হয়েছেন রংপুর মেডিকেল কলেজের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. মো. দিদারুল আলম। ভর্তি যুদ্ধে তাঁর প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে আমন্ত্রণ জানানো হয় মেডিভয়েস স্টুডিওতে। সাক্ষাৎকারে উঠে আসে রেসিডেন্সি কোর্সে ভর্তিচ্ছুদের প্রতি নানা পরামর্শসহ বিভিন্ন দিক। পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. মনির উদ্দিন, সহযোগিতায় ছিলেন মো. তাওহিদুল ইসলাম।

রেসিডেন্সিতে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার অনুভূতি

আলহামদুলিল্লাহ। গতকাল (৯ ডিসেম্বর) রেসিডেন্সি ২০২৩ প্রোগ্রামের ফলাফল দিয়েছে। আমি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশনে (নিটোর) অর্থোসার্জারিতে সুযোগ পেয়েছি, এ জন্য আল্লাহর দরবারে অশেষ শুকরিয়া। আনন্দ প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে চান্স পাওয়া আমার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার।

প্রত্যাশিত ফলাফল

আশা ছিলো আমি নিটোরে প্রথম হবো। কারণ বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে পরীক্ষা দিয়ে আশানুরূপ ফলাফল পেয়েছি। আমার প্রত্যাশা ও প্রচেষ্টা ছিল, যাতে আমার বিষয় প্রথম হতে পারি। আলহামদুলিল্লাহ দ্বিতীয় হয়েছি।

কত দিনের প্রস্তুতিতে এ সুযোগ?

প্রায় এক বছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছি। চলতি বছরের জানুয়ারির ১৭ তারিখ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। প্রতি দিন কম হলেও আট ঘণ্টা পড়ার চেষ্টা করেছি। আরেকটা বিষয় হলো, আমি সার্জারি ফ্যাকাল্টিতে পরীক্ষা দিয়েছি। আমার ভাবনা ছিল,পার্ট-১ পরীক্ষা দিব। আর এফসিপিএসে পার্ট-১ এবং রেসিডেন্সির পড়াশোনা প্রায় এক। এ জন্য জুলাই সেশনে পার্ট-১ পরীক্ষা দেই। তারপরে রেসিডেন্সির জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি।

সংক্ষিপ্ত প্রস্তুতি চান্স পাওয়া দুরুহ

পরীক্ষার্থীর আগে থেকে যদি পড়াশোনা না থাকে অর্থাৎ একদম নতুন হলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া কঠিন, এমনকি বিষয়টা কল্পনা করাও কঠিন। তবে কেউ যদি এমবিবিএস শিক্ষা জীবনে খুব ভালো পড়াশোনা করেন এবং টানা দুই-তিন মাস প্রস্তুতি নেন, তাহলে হয়তো সম্ভব। কিন্ত ভালো বিষয়গুলোতে যদি কেউ ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাহলে কম হলেও ছয় থেকে সাত মাসের প্রস্তুতি প্রয়োজন। তা না হলে চান্স পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।

প্রস্তুতিতে যেসব বিষয়ে গুরুত্বারোপ

সর্বপ্রথম লক্ষ্য স্থির করতে হবে যে, পরীক্ষায় কোন কোন বিষয়ে নম্বর তুলতে হবে। এ জন্য আমি প্রথমেই বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করেছি। এক্ষেত্রে দেখেছি, মাইক্রোবায়োলজি ও প্যাথলজির প্রশ্ন বেশি পুনরাবৃত্তি হয় এবং একই বিষয় থেকে আসে। তাই আমি মাইক্রোবায়োলজি, প্যাথলজি ভালোভাবে আয়ত্ত করেছি। তাছাড়া ফিজিওলজি, এনাটমি আগে থেকেই বুঝতাম, তাই অতটা সমস্যা হয়নি আমার। অনেকেরই এনাটমি খারাপ হয়। কারণ এনাটমি ও ফিজিওলজিতে মুখস্থের কিছুই নেই, এটা বুঝার বিষয়। এ জন্য আগে থেকে ফিজিওলজিতে ভালো হলে, পরীক্ষায়ও ভালো করতে পারবে। রেসিডেন্সিতে নম্বর তোলার বিষয় হচ্ছে প্যাথলজি ও মাইক্রোবায়োলজি। এসব বিষয়ে ভালো নম্বর পেলে আশা করা যায়, প্রথম চান্সেই তিনি উত্তীর্ণ হবেন।

পরীক্ষার কেন্দ্রে প্রশ্ন নিয়ে সময় ক্ষেপণ করা যাবে না

পরীক্ষার হলের সময় যথাযথ ব্যবহারে কয়েকজন বড় ভাই ও শিক্ষকের কাছ থেকে কৌশল আয়ত্ত করার চেষ্ট করেছি। আগে তিন ঘণ্টায় ২০০ নম্বরের পরীক্ষা ছিল। কিন্তু তিন টার্ম ধরে দেড় ঘণ্টায় ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। এ জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম কৌশল হলো, দুই অনুপাত তিন অথবা তিন অনুপাত দুই। অর্থাৎ কোনো প্রশ্নে যদি তিনটা সঠিক পেয়ে যাই, তাহলে বাকি দুইটা অজানা থাকলে ফলস দাগিয়েছি। আবার কোনো একটা টপিকে তিনটা ফলস পেয়ে গেলে, তিনটি ফলস দাগিয়ে ফেলি, তার দুইটা ট্রু। এখানে আমি কোনো গবেষণা করতে যাইনি। আরেকটি বিষয় হলো, প্রতি বছরই নতুন নতুন কিছু প্রশ্ন আসবে, এটাই স্বাভাবিক। এগুলো হয়তো কেউই পড়েনি। এটা নিঃসন্দেহে সবার জন্যই কঠিন হবে। এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে হবে। যেমন- প্রশ্নটা পড়ার পরে দেখেছি পারবো না তখন আমি পাঁচটা পয়েন্টই সঠিক দাগিয়ে ফেলেছি। ফলে আমার অনেক সময় বেঁচে গেছে। অন্য প্রশ্নের উত্তরে সময়টা কাজে লাগিয়েছি। এ জন্য দেড় ঘণ্টার পরীক্ষা পাঁচ থেকে ১০ মিনিট আগে শেষ করতে পেরেছি। কোচিংয়েও আমার আমার এমন হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, পরীক্ষার হলে প্রশ্ন নিয়ে গবেষণা করা যাবে না, একটা প্রশ্ন নিয়ে সময় নষ্ট করা যাবে না। আর প্রতিটা প্রশ্ন প্রথম থেকেই শুরু করা। অনেকেই প্রশ্নপত্রের ১০ নম্বর দিয়ে শুরু করে কিংবা প্যাথলজি ভালো পারলে এই বিষয় দিয়ে করে, এভাবে কেউ অ্যানাটমি দিয়ে শুরু করে। এটা একটু কঠিন হয়ে যায়। কারণ প্রায়ই দেখেছি পরীক্ষার হলে একটা প্রশ্ন যদি এড়িয়ে যায়, তাহলে পর পর কয়েকটা প্রশ্ন নম্বর পরিবর্তন হয়ে যায়। তিন নম্বরের প্রশ্ন চার নম্বরে চলে যায়, এতে পরবর্তীতে খারাপ প্রভাব পড়ে। যার ফলে ফলাফল অনেক খারাপ হতে পারে।

কেন্দ্রে সময় ব্যবস্থাপনা যেভাবে

পরীক্ষার হলে সময় যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পূর্ব প্রস্তুতি থাকতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় ওএমআর পেপারে পরীক্ষা দিতে হবে। এভাবে নিজেকে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। ৯০ মিনিটে ১০০টা প্রশ্ন দাগানোর প্রাক্টিস করতে হবে। দ্বিতীয়ত সময়ের সঙ্গে প্রশ্নগুলোকে ভাগ করে নিতে হবে। যেমন- প্রথম ৪০টা প্রশ্ন ৩০ মিনিটে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আর বাকি ৩০টা প্রশ্ন পরবর্তী ৩০ মিনিটে আর বাকি ৩০টা প্রশ্ন পরবর্তী ৩০ মিনিটে দিতে হবে। এ ছাড়া পরীক্ষার হলে কোনো প্রশ্ন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা যাবে না। এসব করতে গেলেই সময় নষ্ট হবে। রেসিডেন্সি পরীক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সময়। অধিকাংশই এই সময় বণ্টন নিয়ে সমস্যায় পড়েন। সময়কে শুরু থেকেই ভাগ করে নিতে হবে।

পছন্দের বিষয় ঠিক করবেন যেভাবে

পরীক্ষার্থীকে প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কোন বিষয়ে তার আগ্রহ বেশি। পরিবার বা অন্য কারো কথায় পরীক্ষার বিষয় ঠিক করা উচিত হবে না। সম্পূর্ণ নিজ থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কোন বিষয় আগ্রহ আছে এবং সে বিষয় পরীক্ষা দিতে হবে। অনেক বড় ভাইকে দেখেছি, তারা একটা বিষয়ের উপর এক বছর ট্রেনিং করার পরে ছেড়ে দিয়ে আবার তার পছন্দের বিষয়ে চলে আসছে।

রেসিডেন্সিতে ভর্তিচ্ছুদের প্রতি পরামর্শ

অবশ্যই পরিশ্রম করতে হবে এবং একই সঙ্গে আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে। পরিশ্রম ও আল্লাহর উপর ভরসা করলে নিশ্চিত চান্স হবে, ইনশাল্লাহ। আর কেউ যদি আমার বিষয় (অর্থোসার্জারি) নিতে চান, তাহলে অনেক নম্বর তুলতে হবে। বর্তমানে খুব সুন্দর একটা নিয়ম চালু হয়েছে। আগে তিনটা চয়েস দেওয়া যেতো আর এখন সাতটা চয়েস দেওয়া যায়। অর্থোসার্জারিতে মোট পাঁচটা আছে, পাঁচটাই চয়েস দিতে পারবো। অর্থোসার্জারিতে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে কম হলেও ছয় মাস একটানা পড়াশোনা করতে হবে।

ফল প্রকাশে অপেক্ষমাণ তালিকা বিষয়ে মত

আমি মনে করি ওয়েটিং লিস্ট গুরুত্বপূর্ণ। দেখা যায়, অনেক ভাই অথবা বোন চান্স পেয়েছেন এবং কোনো কারণে চান্স পাওয়ার পরে মনে হচ্ছে এটা তার ভালো লাগেনি, তখন তাকে আবার পরীক্ষা দিবে হবে। এ জন্য ওই সিটটা খালি হবে এবং ওয়েটিং লিস্টের সিস্টেম থাকলে এখানে একজন সুযোগ পাবেন। ওয়েটিং লিস্ট রাখা হলে খুব উপকার হবে। আমার দৃষ্টিতে এর নেতিবাচক তেমন কিছু নেই।

মার্কসহ ফল প্রকাশে মতামত

যারা পাস করে তাদের জন্য মার্কশিট প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স এন্ড সার্জন্সে (বিসিপিএস) যারা পাস করেন, তাদের মার্কশিট দেয় না। ফেল বা অকৃতকার্য হলে তাদেরকে মার্কশিট দেওয়া হয়। অকৃতকার্যদের মার্কশিট দেওয়া হলে তারা পরবর্তী পরীক্ষায় ভালো করে প্রস্তুতি নিতে পারবেন।

১০০ প্রশ্নের জন্য ১০০ মিনিট হলে ভালো

সময় বাড়ানোর দাবি যৌক্তিক। কারণ ৯০ মিনিটের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করা কষ্টকর হয়ে যায়। এ ছাড়া পরীক্ষার হলে খাতায় স্বাক্ষর করে শিক্ষকরা, আবার ছাত্রদেরও স্বাক্ষর করতে হয়, এতে সময় নষ্ট হয়। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের কাছে আমার অনুরোধ, ওয়েমার দেওয়ার পরপরই যাতে ফ্যাকাল্টিদের স্বাক্ষর নিশ্চিত করা যায়, তাহলে আমাদের সময় বেঁচে যাবে। আর এটা সম্ভব না হলে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট সময় বাড়ালে ভালো হয়। ১০০ প্রশ্নের জন্য ১০০ মিনিট দিলে অনেক ভালো হবে।

এমবিবিএসে অধ্যয়নরতদের প্রতি পরামর্শ

অনেকে এমবিবিএসে অধ্যয়নরত অবস্থায় পোস্টগ্রাজুয়েশনের জন্য প্রস্তুতির কথা বলেন। এ বিষয়টার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটো দিকই আছে। রেসিডেন্সি পরীক্ষায় সব চেয়ে বেশি নম্বর হচ্ছে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের এনাটমি, ফিজিওলজি, বায়োক্যামিস্ট্রি, প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি ও ফার্মাকোলজিতে। এখন প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে ভালো করে ধারণা থাকলে পরবর্তীতে সহায়ক হবে। এ জন্য প্রথম থেকেই পড়াশোনার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে। আর পঞ্চম বর্ষে ফ্যাকাল্টি বিষয়গুলো পড়াশোনা করে যেমন- মেডিসিন, সার্জারি ও গাইনি ইত্যাদি। এগুলোর ক্ষেত্রে বিশেষ করে অনেকেরই পঞ্চম বর্ষে এসে চিন্তা আসে যে আমি আবার শুরু করি, পোস্টগ্রাজুয়েশন করতে হবে। এই চিন্তাটা আসলে পাস করার পর আসবে। কিন্তু তখন এটা করলে এমবিবিএস ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তখন হয়তো ভালোভাবে ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষায় শেষ করা যাবে না। সুতরাং এটার উপকারও আছে, আবার ক্ষতিকর দিকও আছে। এ জন্য সময়ের কাজ সময়ে করাই আমার কাছে অধিকতর যুক্তিযুক্ত মনে হয়।

ডা. দিদারের পড়াশোনা

কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার চিতড্ডার মুকুন্দপুরের সন্তান ডা. মো. দিদারুল আলম। মুকুন্দপুর সরকারিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি কিন্ডার গার্ডেন থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর মুকুন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। রাজধানীর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, তেজগাঁও থেকে ২০১৪ সালে এইচএসসি শেষ করেন।

মেডিভয়েসের জনপ্রিয় ভিডিও কন্টেন্টগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করুন MedivoiceBD ইউটিউব চ্যানেল। আপনার মতামত/লেখা পাঠান [email protected] এ।
  এই বিভাগের সর্বাধিক পঠিত