টেকনোলজিস্টদের নিবন্ধনে মতামত না দিতে বিএমডিসির প্রতি ডেন্টাল সোসাইটির অনুরোধ
মেডিভয়েস রিপোর্ট: লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি হওয়ার আগে ডেন্টাল কাউন্সিল টেকনোলজিস্টদের নিবন্ধনের বিষয়ে মতামত দেওয়া বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি।
সোমবার (৫ ডিসেম্বর) সোসাইটির মহাসচিব ও ঢাকা ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবীর বুলবুল স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ অনুরোধ জানানো হয়।
বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ এর সংশোধন বিষয়ে মতামত প্রসঙ্গে ওই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ এর সংশোধন বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য আপনাকে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। যাহা বাংলাদেশ ডেন্টাল সার্জনদের জাতীয় সংগঠন ‘বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি’ অবহিত হয়েছে। বিশ্বের কোথাও মেডিকেল কাউন্সিল/ডেন্টাল কাউন্সিল টেকনোলজিস্টদের নিবন্ধন প্রদান করে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ সঠিক ও যুগোপযুগী।’
‘মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং-২৮১০/২০১৬ এর রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিলেট ডিভিশনে লিভ টু আপিল করে এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি উক্ত লিভ টু আপিলের পক্ষভুক্ত হয়। আপিলটি লিভ টু আপিল হিসেবে ডিভিশনে গৃহীত হয়। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিলেট ডিভিশনের লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি হওয়র পূর্বে এ বিষয়ে মতামত দেওয়ার সুযোগ নেই’, বলা হয় চিঠিতে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির মহাসচিব ও ঢাকা ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবীর বুলবুল মেডিভয়েসকে বলেন, ‘বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল আইন ২০১০ অনুযায়ী শুধুমাত্র বিডিএস সম্পন্ন করা ডেন্টাল চিকিৎসকরাই দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্যের সেবা দিতে পারবেন। টেকনোলজিস্টরা ল্যাবে কাজ করবে, তাদের রোগী দেখার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের দেশে মেডিকেল ও ডেন্টাল টেকনোলজিস্টরাও বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন নিয়ে চিকিৎসকদের মতো প্রাক্টিস করতে চান। কিন্তু পৃথিবির কোথাও টেকনোলজিস্টদের সরাসরি রোগী দেখার সুযোগ নেই, এটা সম্পূর্ণ অবৈধ।’
আদালতের রায়ের বিষয়ে বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির মহাসচিব বলেন, ‘টেকনোলজিস্টরা দীর্ঘদিন ধরে বিএমডিসির নিবন্ধন পাওয়ার চেষ্টা করছে, এরই পরিপ্রেক্ষিতে তারা আদালতে যায় এবং গোপনে আদালত থেকে তাদের পক্ষে রায় নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে বিএমডিসি এ রায়ের বিপক্ষে লিভ টু আপিল করে, যা আদালতে এখনো চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এ মামলার বিবাদী হিসেবে বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটিও পক্ষভুক্ত হয়েছে। এরপরেও আদালতে লিভ টু আপিল গৃহীত হওয়ার বিষয়টি গোপন রেখে তারা স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে চিঠি পাঠায়, সেখান থেকে বিএমডিসির মতামত জানতে চাওয়া হলে বিএমডিসি আদালতে লিভ টু আপিল গৃহীত হওয়ার বিষয়টি নজরে আনে। ফলে তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়।’
টেকনোলজিস্টদের নিবন্ধন পাওয়ার চেষ্টার অযৌক্তিকতা তুলে ধরে ডা. হুমায়ুন বুলবুল বলেন, ‘বিডিএস ডিগ্রিধারীরা এসএসসি-এইচএসসিতে মেধার স্বাক্ষর রেখে একটি প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৫ বছরের একটা দীর্ঘ কোর্স শেষে চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকে, অপরদিকে টেকনোলজিস্টরা এসএসসি পাস করে ভর্তি হয় এবং তারা যা শিখে সব ল্যাব সংশ্লিষ্ট কাজ, সুতরাং দুইটা তো এক হতে পারে না। এ ছাড়া তাদের কোনো ইন্টার্নশিপ নেই, যেটা বিডিএস ডিগীধারীদের আছে। তাদের মূল কাজই ডেন্টাল সার্জনদের সহযোগিতা করা।’
আদালত রায় দিলে আর কারও মতামতের কোনো সুযোগ নেই এবং সবাইকে আদালতের চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষা করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু টেকনোলজিস্ট পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আশিক মাহমুদ মেডিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা বিএমডিসির নিবন্ধনের জন্য আদালত পর্যন্ত গিয়েছি, আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। পরবর্তীতে বিএমডিসি ও বিডিএস মিলে আদালতে আপিল করে। আমরা এখনো আদালতের রায়ের অপেক্ষায় আছি।’
টেকনোলজিস্টদের বিএমডিসির নিবন্ধন কেন প্রয়োজন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু মেডিকেল আ্যসিসট্যান্ট বা উপসহকারী মেডিকেল অফিসাররাও বিএমডিসির নিবন্ধনপ্রাপ্ত তারাও তো সরাসরি চিকিৎসাসেবার সাথে সংযুক্ত না সেই আলোকে আমাদের এই চাওয়া। ডেন্টাল টেকনোলজিস্টদের যেহেতু সরকারি চাকরি নাই বললেই চলে, প্রাইভেট প্রাক্টিস করেই চলতে হয় সুতরাং তাদের অবাধ কাজের সুবিধার্থেই নিবন্ধনটা প্রয়োজন। বিডিএস চিকিৎসকরা তো সবসময় থাকে না, বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে তো ডেন্টাল টেকনোলজিস্টদের ওপরেই রোগীদের নির্ভর করতে হয়। আর জেলা উপজেলা পর্যায়ে বিডিএস চিকিৎসকের সংখ্যাও অনেক কম। সুতরাং বিএমডিসির নিবন্ধন থাকলে ডেন্টাল টেকনোলজিস্টরা কোনো প্রকার আইনি জটিলতা ছাড়াই চিকিৎসেবা দিতে পারবেন।’